স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিলছে না সেবা
jugantor
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিলছে না সেবা
কলমাকান্দায় জনবল ও চিকিৎসক সংকট

  প্রান্ত সাহা বিভাস, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)  

১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কলমাকান্দায় কর্মস্থল ফাঁকি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল ও চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদাররাই রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে কলমাকান্দা সদর, নাজিরপুর, খারনৈ, রংছাতি ও পোগলা এ পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং লেংগুরা ও কৈলাটী এ দুটি ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। আর বড়খাপন ইউনিয়নে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা। আর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ, একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা।

কিন্তু কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে কোনো জনবল নেই। তবে এ কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা একজন ভিজিটর অনিতা রানী পণ্ডিত সপ্তাহে একদিন স্বাস্থ্যসেবা দেন। বাকি ছয় দিন তালাবদ্ধ থাকে। পোগলাতে একজন ভিজিটর ও একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী রয়েছে। এর মধ্যে ভিজিটর মেহেরুননেছা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন। বর্তমানে পিয়নই ভরসা। তিনিও আবার মাসের পর মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। নাজিরপুর ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর ও একজন আয়া ছাড়া আর কেউ নেই। এর মধ্যে ভিজিটর সুরাইয়া আফসানা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা মাতৃসদনে ডেপুটেশনে আছেন। খারনৈ ইউনিয়নে একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। রংছাতি ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন আয়া, একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। এর মধ্যে পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী তোফায়েল আহম্মেদ কলমাকান্দা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন।

এ কেন্দ্রগুলোর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। আর লেংগুরা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ছাড়া আর কেউ নেই। কৈলাটী ইউনিয়নের সিধলীতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও একজন পিয়ন কাম-নৈশ্যপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। এ দুই কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে রংছাতি ও নাজিরপুর ছাড়া সবকটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রামের লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সপ্তাহে এক-দুদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লোকজন অন্য তিনটি কেন্দ্রে নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে লেংগুরা ও সিধলী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও সেখানে কোনো মেডিকেল অফিসার না থাকায় জটিল রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। তবে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসাররা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, পোগলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরে এ বিষয়ে কথা হলে মনকান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ও পলাশহাটি গ্রামের রুকুজ্জামান বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলা হয় না। এখানে নাকি ডাক্তার নেই। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। এতে করে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডা. বিজয় প্রকাশ বিশ্বাস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল কম থাকার বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিলছে না সেবা

কলমাকান্দায় জনবল ও চিকিৎসক সংকট
 প্রান্ত সাহা বিভাস, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) 
১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কলমাকান্দায় কর্মস্থল ফাঁকি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল ও চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদাররাই রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে কলমাকান্দা সদর, নাজিরপুর, খারনৈ, রংছাতি ও পোগলা এ পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং লেংগুরা ও কৈলাটী এ দুটি ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। আর বড়খাপন ইউনিয়নে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা। আর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ, একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা।

কিন্তু কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে কোনো জনবল নেই। তবে এ কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা একজন ভিজিটর অনিতা রানী পণ্ডিত সপ্তাহে একদিন স্বাস্থ্যসেবা দেন। বাকি ছয় দিন তালাবদ্ধ থাকে। পোগলাতে একজন ভিজিটর ও একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী রয়েছে। এর মধ্যে ভিজিটর মেহেরুননেছা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন। বর্তমানে পিয়নই ভরসা। তিনিও আবার মাসের পর মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। নাজিরপুর ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর ও একজন আয়া ছাড়া আর কেউ নেই। এর মধ্যে ভিজিটর সুরাইয়া আফসানা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা মাতৃসদনে ডেপুটেশনে আছেন। খারনৈ ইউনিয়নে একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। রংছাতি ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন আয়া, একজন পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। এর মধ্যে পিয়ন-কাম-নৈশপ্রহরী তোফায়েল আহম্মেদ কলমাকান্দা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন।

এ কেন্দ্রগুলোর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। আর লেংগুরা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ছাড়া আর কেউ নেই। কৈলাটী ইউনিয়নের সিধলীতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও একজন পিয়ন কাম-নৈশ্যপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। এ দুই কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে রংছাতি ও নাজিরপুর ছাড়া সবকটি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রামের লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সপ্তাহে এক-দুদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লোকজন অন্য তিনটি কেন্দ্রে নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে লেংগুরা ও সিধলী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও সেখানে কোনো মেডিকেল অফিসার না থাকায় জটিল রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। তবে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসাররা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, পোগলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরে এ বিষয়ে কথা হলে মনকান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ও পলাশহাটি গ্রামের রুকুজ্জামান বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলা হয় না। এখানে নাকি ডাক্তার নেই। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। এতে করে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডা. বিজয় প্রকাশ বিশ্বাস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল কম থাকার বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন