উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের আগস্টে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন মংডু নুরুল্লাহ পাড়ার কামাল শাহ (৩৯)। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পরদিন স্ত্রী-পুত্রসহ গাড়িযোগে চলে যান ভারত সীমান্তে।
সেখান থেকে দালালের হাত ধরে ভারতের জম্মু কাশ্মির রোহিঙ্গা পল্লীতে আশ্রয় নেন। সম্প্রতি ভারত সরকার দুই দফায় ১২ রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আতঙ্কে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তিনি। স্ত্রী রাশেদা বেগম ও ১০ বছরের মেয়ে রাজিয়া কলিমাসহ ৩ সদস্য রয়েছে তার। বুধবার উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে ভারত থেকে পালিয়ে আসা কামাল শাহ এমন তথ্য জানিয়েছেন এই প্রতিবেদককে।
কামাল জানান, তার সঙ্গে ভারত থেকে ১২ সদস্যের আরও ৩টি পরিবার ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে। তাদের একজন মোহাম্মদ ইউনূছ। তিনি ফকিরা বাজার এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে। ইউনুস জানান, ২০১২ সালে মিয়ানমারের সহিংস ঘটনায় স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। পরবর্তীতে দালালদের মাধ্যমে ভারতের জম্মু কাশ্মির চলে যান। সেখানে ৩ ছেলে- মেয়ের জন্ম হয়। এখন সবাই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর তারা দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকেন। জনপ্রতি ১৫ হাজার রুপি দিতে হয়েছে দালালদের। কথা হয় ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া আরেক রোহিঙ্গা জমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ফকিরাবাজার এলাকার আছত আলীর ছেলে। ২০১৭ সালের আগস্টে উখিয়ার আমতলী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ভারতের জম্মু কাশ্মির চলে যান। সেখানেও অবস্থা বেগতিক দেখে আতঙ্কে গত সপ্তাহে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে খাল পার হয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। স্ত্রী ও ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্পে আছেন। জানান, তাদের সঙ্গে ভারতের জম্মু কাশ্মির রোহিঙ্গা পল্লীতে প্রায় ১৭শ’ পরিবারের ৬ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু ছিল।
এ ঘটনার জের ধরে ৪ শতাধিক পরিবার বাংলাদেশে চলে এসেছে। তার মধ্যে ২ শতাধিক পরিবার বর্তমানে এই ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত থেকে পালিয়ে আসা রাশেদা বেগম নামের এক মহিলা জানান, তার পরিবারের ৩ সদস্যকে ভারতে ইউএনএইচসিআর ফুড কার্ড দিয়েছিল। কিন্তু এখানে আসার পর সেই কার্ড নিয়ে গেছে।এদিকে জানা গেছে, ৪৯ দিনে ভারত থেকে পালিয়ে ৩শ’ রোহিঙ্গা পরিবারের ১ হাজার ৩শ’ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত থেকে স্বদেশে (মিয়ানমার) ফেরত পাঠানোর ভয়েই মূলত ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে এসব রোহিঙ্গা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, ভারত থেকে চলে আসা রোহিঙ্গাদের উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয় শিবিরে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে তাদের রাখা হয়েছে। তারা চিঠি দিয়ে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের আশ্রয় শিবিরে আসা রোহিঙ্গাদের সবার কাছে ইউএনএইচসিআর ভারত শাখার কার্ড আছে। কার্ডে তাদের শরণার্থী নম্বরও রয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে দুই দফায় স্বদেশে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। আগে পালিয়ে আসাসহ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি।ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০০০-২০১৯