একাধিক সাজানো মামলায় আ’লীগ কর্মীকে ঘায়েল
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী অমিত শিকদার ওরফে বিষুকে চার বছরে চারটি মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে মাদকের একটি মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছিল পুলিশ। আদালত অভিযুক্ত সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন। সেটির আপিল শুনানি চলমান আছে। আরও দুটি মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে যশোরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। আরেকটি ডিজিটাল নিরাপত্তা-আইসিটি আইনে অমিত শিকদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার দাবি, চারটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রকাশ্য ও নেপথ্যে রয়েছে দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত দলীয় প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার তিনি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি গ্রুপ রয়েছে। অমিত শিকদার বিষু সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক প্রয়াত নন্দ কুমার শিকদারের ছেলে। এক প্রত্যয়নপত্রে আবদুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, অমিত শিকদার আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। তার পরিবার আওয়ামী লীগ পরিবার। সৎ, পরিশ্রমী ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপে জড়িত নয়।
বিষুর মা ইতি শিকদার বলেন, ২০১৮ সালের ৬ জুন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই আমিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ আমাদের বাড়িতে যায়। এ সময় ছেলের খোঁজ করে। তখন বিষু ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাকে ডেকে দিই। লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় বিষুকে টেনেহেঁচড়ে ধরে নিয়ে গাড়িতে তোলে। আমি বাধা দিই, জানতে চাই, ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। তখন তারা জানায় যশোর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে কালীগঞ্জ থানার ওসিকে জানাই। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে জানিয়ে দিই ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর। কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখি ছেলেকে ইয়াবা উদ্ধার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ দুটি মিথ্যা মাদক মামলায় বিষুকে ফাঁসিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতির প্রতিহিংসায় পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে সীমাহীন হয়রানি করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত এসআই তারেক মোহাম্মদ নাহিয়ান বলেন, ফাঁসানোর অভিযোগ সঠিক নয়। ওইদিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। অন্য একটি পার্টি তাকে (অমিত শিকদার) ধরেছিল। জিডিতে (সাধারণ ডায়েরি) টাইম এলোমেলো হয়েছে। এজন্য বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমানে শৈলকূপা থানায় কর্মরত এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, বাড়ি থেকে তুলে আনার অভিযোগ সঠিক নয়। কোতোয়ালি থানা এলাকায় থেকেই তাকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। বিষু মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এজাহারে অসঙ্গতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসি সাহেব কীভাবে মামলা নিয়েছেন জানি না।
যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, এসআই নাহিয়ান ও আমিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি আর নির্দোষ হলে মওকুফ হবে। অমিত শিকদার ও তার মা ইতি শিকদার বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন পুলিশকে ব্যবহার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। হত্যার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা এ দেশে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
একাধিক সাজানো মামলায় আ’লীগ কর্মীকে ঘায়েল
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী অমিত শিকদার ওরফে বিষুকে চার বছরে চারটি মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে মাদকের একটি মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছিল পুলিশ। আদালত অভিযুক্ত সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন। সেটির আপিল শুনানি চলমান আছে। আরও দুটি মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে যশোরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। আরেকটি ডিজিটাল নিরাপত্তা-আইসিটি আইনে অমিত শিকদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার দাবি, চারটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রকাশ্য ও নেপথ্যে রয়েছে দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত দলীয় প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার তিনি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি গ্রুপ রয়েছে। অমিত শিকদার বিষু সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক প্রয়াত নন্দ কুমার শিকদারের ছেলে। এক প্রত্যয়নপত্রে আবদুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, অমিত শিকদার আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। তার পরিবার আওয়ামী লীগ পরিবার। সৎ, পরিশ্রমী ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপে জড়িত নয়।
বিষুর মা ইতি শিকদার বলেন, ২০১৮ সালের ৬ জুন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই আমিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ আমাদের বাড়িতে যায়। এ সময় ছেলের খোঁজ করে। তখন বিষু ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাকে ডেকে দিই। লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় বিষুকে টেনেহেঁচড়ে ধরে নিয়ে গাড়িতে তোলে। আমি বাধা দিই, জানতে চাই, ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। তখন তারা জানায় যশোর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে কালীগঞ্জ থানার ওসিকে জানাই। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে জানিয়ে দিই ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর। কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখি ছেলেকে ইয়াবা উদ্ধার মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ দুটি মিথ্যা মাদক মামলায় বিষুকে ফাঁসিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতির প্রতিহিংসায় পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে সীমাহীন হয়রানি করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত এসআই তারেক মোহাম্মদ নাহিয়ান বলেন, ফাঁসানোর অভিযোগ সঠিক নয়। ওইদিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। অন্য একটি পার্টি তাকে (অমিত শিকদার) ধরেছিল। জিডিতে (সাধারণ ডায়েরি) টাইম এলোমেলো হয়েছে। এজন্য বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমানে শৈলকূপা থানায় কর্মরত এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, বাড়ি থেকে তুলে আনার অভিযোগ সঠিক নয়। কোতোয়ালি থানা এলাকায় থেকেই তাকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। বিষু মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এজাহারে অসঙ্গতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসি সাহেব কীভাবে মামলা নিয়েছেন জানি না।
যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, এসআই নাহিয়ান ও আমিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি আর নির্দোষ হলে মওকুফ হবে। অমিত শিকদার ও তার মা ইতি শিকদার বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন পুলিশকে ব্যবহার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। হত্যার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা এ দেশে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।