চট্টগ্রামে শীতের শুরুতে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের হার
পৌঁছতে পারে বিপজ্জনক পর্যায়ে * পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম ব্যুরো
২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে বাড়ছে কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) শনাক্তের হার।
শীতে করোনাভাইরাসের আরেক দফা সংক্রমণ হতে পারে-স্বাস্থ্য বিভাগের এমন পূর্বাভাস ছিল আগেই। সেই শঙ্কা শীতের শুরুতেই যেন সত্য হতে চলেছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের বেশি চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ এবং সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দুটোই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেকেই নিজে আক্রান্ত হয়ে অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। শীত মৌসুমে করোনা পরিস্থিতি আবারও বিপজ্জনক হতে পারে-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না বলে পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে মানুষকে নয়, করোনাকে লকডাউন করতে হবে-এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। শনিবার নগরীর কর্নেলহাটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নাগরিক সচেতনতামূলক অভিযানে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় লকডাউন করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে গৃহবন্দি রাখতে চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার এই ইচ্ছে ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে চসিক প্রশাসক হিসেবে মাঠে নেমেছি। তাই মানুষকে নয়, করোনাকে লকডাউন করতে চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১টি নির্দেশনা বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায়, নিজের শরীর, বাড়িঘরসহ নিত্য ব্যবহারযোগ্য সবকিছু জীবাণুমুক্ত করা, বাইরে চলাফেরায় মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। এভাবে করোনাকে লকডাউন করে সবার মুক্তি ও বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এই ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবাদাতা ও গ্রহীতাকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কেউ রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রাম মাস্কবিহীন লোকজনকে জেল-জরিমানা করেছেন। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে চট্টগ্রামে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৯ জন। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর একদিনেই শনাক্ত হয়েছে ১৯৭ জন। এই সংখ্যাটি ৯৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চারজন। আশঙ্কার দিক হল ১ হাজার ৪৪৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৪২ জনই নগরীর বাসিন্দা। বাকি ৩০৭ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, ‘শনিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ এবং সাধারণ বেডে কভিড রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৮ জন। এক সপ্তাহ আগেও এখানে রোগী ভর্তি ছিলেন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নমুনা সংগ্রহ এবং শনাক্ত দুটোই বেড়েছে। এ থেকে আমরা ধরে নিচ্ছি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ে এখন মানুষের মাঝে ভয় কেটে গেছে। সবাই বিয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।’
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের ৭১ শতাংশ নগরীর, বাকি ২৯ শতাংশ ১৫ উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২২ হাজার ৭২৬ জন করোনায় আক্রান্তের মধ্যে ০-১০ বছরের ৪৯৮ জন, ১১-২০ বছরের ১ হাজার ৪৪৪ জন, ২১-৩০ বছরের ৪ হাজার ৮২৮ জন, ৩১-৪০ বছরের ৫ হাজার ৫৬৯৪ জন, ৪১-৫০ বছরের ৪ হাজার ২৯৫ জন, ৫১-৬০ বছরের ৩ হাজার ৪১১ জন এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ২ হাজার ৫৫৬ জন রয়েছেন। শতাংশ হিসাবে ২১-৫০ বছরের এমন রোগী রয়েছে ৬৭ শতাংশ, যার অধিকাংশই তরুণ ও যুবক বয়সী।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে কভিড রোগীর শনাক্তের হার বেড়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। কভিড রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য ৬৫০ বেড প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১১৭ জন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugan[email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চট্টগ্রামে শীতের শুরুতে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের হার
পৌঁছতে পারে বিপজ্জনক পর্যায়ে * পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
চট্টগ্রামে বাড়ছে কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) শনাক্তের হার।
শীতে করোনাভাইরাসের আরেক দফা সংক্রমণ হতে পারে-স্বাস্থ্য বিভাগের এমন পূর্বাভাস ছিল আগেই। সেই শঙ্কা শীতের শুরুতেই যেন সত্য হতে চলেছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের বেশি চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ এবং সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দুটোই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেকেই নিজে আক্রান্ত হয়ে অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। শীত মৌসুমে করোনা পরিস্থিতি আবারও বিপজ্জনক হতে পারে-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না বলে পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে মানুষকে নয়, করোনাকে লকডাউন করতে হবে-এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। শনিবার নগরীর কর্নেলহাটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নাগরিক সচেতনতামূলক অভিযানে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় লকডাউন করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে গৃহবন্দি রাখতে চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার এই ইচ্ছে ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে চসিক প্রশাসক হিসেবে মাঠে নেমেছি। তাই মানুষকে নয়, করোনাকে লকডাউন করতে চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১টি নির্দেশনা বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায়, নিজের শরীর, বাড়িঘরসহ নিত্য ব্যবহারযোগ্য সবকিছু জীবাণুমুক্ত করা, বাইরে চলাফেরায় মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। এভাবে করোনাকে লকডাউন করে সবার মুক্তি ও বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এই ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবাদাতা ও গ্রহীতাকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কেউ রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রাম মাস্কবিহীন লোকজনকে জেল-জরিমানা করেছেন। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে চট্টগ্রামে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৯ জন। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর একদিনেই শনাক্ত হয়েছে ১৯৭ জন। এই সংখ্যাটি ৯৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চারজন। আশঙ্কার দিক হল ১ হাজার ৪৪৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৪২ জনই নগরীর বাসিন্দা। বাকি ৩০৭ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, ‘শনিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ এবং সাধারণ বেডে কভিড রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৮ জন। এক সপ্তাহ আগেও এখানে রোগী ভর্তি ছিলেন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নমুনা সংগ্রহ এবং শনাক্ত দুটোই বেড়েছে। এ থেকে আমরা ধরে নিচ্ছি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ে এখন মানুষের মাঝে ভয় কেটে গেছে। সবাই বিয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।’
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের ৭১ শতাংশ নগরীর, বাকি ২৯ শতাংশ ১৫ উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২২ হাজার ৭২৬ জন করোনায় আক্রান্তের মধ্যে ০-১০ বছরের ৪৯৮ জন, ১১-২০ বছরের ১ হাজার ৪৪৪ জন, ২১-৩০ বছরের ৪ হাজার ৮২৮ জন, ৩১-৪০ বছরের ৫ হাজার ৫৬৯৪ জন, ৪১-৫০ বছরের ৪ হাজার ২৯৫ জন, ৫১-৬০ বছরের ৩ হাজার ৪১১ জন এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ২ হাজার ৫৫৬ জন রয়েছেন। শতাংশ হিসাবে ২১-৫০ বছরের এমন রোগী রয়েছে ৬৭ শতাংশ, যার অধিকাংশই তরুণ ও যুবক বয়সী।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে কভিড রোগীর শনাক্তের হার বেড়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। কভিড রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য ৬৫০ বেড প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১১৭ জন।