নাব্যতায় গতি ফিরেছে নওয়াপাড়া বন্দরে
অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা
২৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরে এক সময় নাব্যতা সংকটে বড় নৌযান আসা বন্ধ হয়ে গেলেও ড্রেজিংয়ের পর সে সমস্যা কেটেছে। ফলে বেড়েছে জাহাজ ভেড়ার পরিমাণ। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারা বন্দরে পণ্য উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরও সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে কতিপয় ব্যবসায়ী নিজেরাই নদী দখল করে স্টেশন তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা ও নোয়াপাড়া বন্দর সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর আগেও ১ হাজার থেকে ১২শ’ টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজগুলো নওয়াপাড়া বন্দরে ভিড়তে পারত না। পণ্যবাহী ছোট ছোট নৌযান ৭শ’ থেকে ৮শ’ টন মাল নিয়ে বন্দরে আসত। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যেত। তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ভৈরব নদীটি খনন শুরু করে। ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে ব্যয় ধরা হয় ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ নদী থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি এ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, ড্রেজিংয়ের ফলে এ বন্দরের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ১৪ ফুট গভীর করে ড্রেজিং করা হয়েছে। এতে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারছে।
তবে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে আগের চেয়ে বড় জাহাজ ভিড়লেও পণ্য উঠানো-নামানোর কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না তারা। নওয়াপাড়ার চেঙ্গুটিয়া থেকে রাজঘাট পর্যন্ত ৯টি জেটি থাকলেও অধিকাংশই বিকল। কি-ওয়াল, পণ্য উঠানো-নামানোর জন্য প্রয়োজনীয় সিঁড়ি, সড়ক ও মালবাহী ট্রাকের জন্য পার্কিং ইয়ার্ডের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সুবিধা নেই এখানে। তারা জানান, প্রতি বছর এ বন্দর থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকার রাজস্ব আসে। তারপরও এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে এখানে নদীবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে শুরু হয় এর কার্যক্রম। ভৈরব নদের চেঙ্গুটিয়া থেকে ভাটপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা নির্ধারণ করা হয় নদীবন্দরটির। স্থাপন করা হয় ছয়টি পন্টুন।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে নওয়াপাড়া নৌবন্দরে ১ হাজার ৪৫০টি জাহাজে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৫৮টি জাহাজে ৭ লাখ ২৯ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৬৪টি জাহাজে ৭ লাখ ৩২ হাজার টন, ২০১৬-১৭-তে ১ হাজার ৪৭০টি জাহাজে ৭ লাখ ৩৫ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৬৮টি জাহাজে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন ও সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেড় হাজার জাহাজে পণ্য এসেছে ৮ লাখ টন। এ বন্দর দিয়ে মূলত সার, সিমেন্ট, কয়লা ও গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ট্রাফিক সুপার কাজী সোহান জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সরকারকে দেয়া হয়েছে।
নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই নদী দখল করে স্টেশন তৈরি করছে। এতে একদিকে নদী খনন হচ্ছে, অন্যদিকে দখলও হয়ে যাচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এ নদী আবারও ভরাট হয়ে যাবে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়ামুল হক রিকো বলেন, শ্রমিকদের পণ্য উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে জটিলতা কমেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দিচ্ছে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
নাব্যতায় গতি ফিরেছে নওয়াপাড়া বন্দরে
অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরে এক সময় নাব্যতা সংকটে বড় নৌযান আসা বন্ধ হয়ে গেলেও ড্রেজিংয়ের পর সে সমস্যা কেটেছে। ফলে বেড়েছে জাহাজ ভেড়ার পরিমাণ। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারা বন্দরে পণ্য উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরও সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে কতিপয় ব্যবসায়ী নিজেরাই নদী দখল করে স্টেশন তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা ও নোয়াপাড়া বন্দর সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর আগেও ১ হাজার থেকে ১২শ’ টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজগুলো নওয়াপাড়া বন্দরে ভিড়তে পারত না। পণ্যবাহী ছোট ছোট নৌযান ৭শ’ থেকে ৮শ’ টন মাল নিয়ে বন্দরে আসত। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যেত। তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ভৈরব নদীটি খনন শুরু করে। ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে ব্যয় ধরা হয় ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ নদী থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি এ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, ড্রেজিংয়ের ফলে এ বন্দরের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ১৪ ফুট গভীর করে ড্রেজিং করা হয়েছে। এতে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারছে।
তবে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে আগের চেয়ে বড় জাহাজ ভিড়লেও পণ্য উঠানো-নামানোর কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না তারা। নওয়াপাড়ার চেঙ্গুটিয়া থেকে রাজঘাট পর্যন্ত ৯টি জেটি থাকলেও অধিকাংশই বিকল। কি-ওয়াল, পণ্য উঠানো-নামানোর জন্য প্রয়োজনীয় সিঁড়ি, সড়ক ও মালবাহী ট্রাকের জন্য পার্কিং ইয়ার্ডের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সুবিধা নেই এখানে। তারা জানান, প্রতি বছর এ বন্দর থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকার রাজস্ব আসে। তারপরও এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে এখানে নদীবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে শুরু হয় এর কার্যক্রম। ভৈরব নদের চেঙ্গুটিয়া থেকে ভাটপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা নির্ধারণ করা হয় নদীবন্দরটির। স্থাপন করা হয় ছয়টি পন্টুন।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে নওয়াপাড়া নৌবন্দরে ১ হাজার ৪৫০টি জাহাজে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৫৮টি জাহাজে ৭ লাখ ২৯ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৬৪টি জাহাজে ৭ লাখ ৩২ হাজার টন, ২০১৬-১৭-তে ১ হাজার ৪৭০টি জাহাজে ৭ লাখ ৩৫ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৬৮টি জাহাজে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন ও সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেড় হাজার জাহাজে পণ্য এসেছে ৮ লাখ টন। এ বন্দর দিয়ে মূলত সার, সিমেন্ট, কয়লা ও গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ট্রাফিক সুপার কাজী সোহান জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সরকারকে দেয়া হয়েছে।
নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই নদী দখল করে স্টেশন তৈরি করছে। এতে একদিকে নদী খনন হচ্ছে, অন্যদিকে দখলও হয়ে যাচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এ নদী আবারও ভরাট হয়ে যাবে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়ামুল হক রিকো বলেন, শ্রমিকদের পণ্য উঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে জটিলতা কমেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দিচ্ছে না।