চট্টগ্রামে মিলারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমনের ভরা মৌসুমে চট্টগ্রামে বেড়েছে চালের দাম। গত পনেরো দিনে দুই দফায় বেড়েছে চিকন চালের দাম। প্রতিবছর আমনের মৌসুমে চালের দাম কমলেও এ বছর মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে। আমন ধান তোলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দুই ধরনের লোক ধান কিনে গুদামে মজুদ করছে। মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ধান কিনে মজুদ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মিল মালিকদের সরকারি লাইসেন্স থাকলেও মৌসুমি মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো লাইসেন্স নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তদারকিও করা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে চালের দাম। এদিকে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ আমন সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ২ হাজার ৬৩৮ টন। এর মধ্যে জেলার আনোয়ারা উপজেলা থেকে ২৬৪ টন, বাঁশখালীতে ১৮৩ টন, বোয়ালখালীতে ২৬ টন, চন্দনাইশে ৩৮ টন, ফটিকছড়িতে ৩৭৫ টন, হাটহাজারীতে ৫০ টন, লোহাগাড়ায় ৩৭ টন, মীরসরাইয়ে ১৭ টন, পটিয়ায় ২৫১ টন, রাঙ্গুনিয়ায় ৭৫১ টন, রাউজানে ১১০ টন, সাতকানিয়ায় ৫৩ টন, পাঁচলাইশে ১২ টন, চান্দগাঁওয়ে ৩৮৯ টন, পাহাড়তলী থেকে ৯৪ টন ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে ২৯ টন আতপ চাল।
চালের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী থেকে মহানগরের পাশাপাশি ১৪টি উপজেলায় চাল সরবরাহ করা হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামেও এখান থেকে চাল সরবরাহ করা হয়। চাক্তাই চালপট্টিতে মোটা সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) প্রায় ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। একইভাবে প্রতি বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। দিনাজপুরি পাইজাম ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকার কাছাকাছি। কাটারি চাল বিক্রি ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা প্রতি বস্তা।
স্বর্ণা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। চিনিগুড়া চাল ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
পাহাড়তলীর বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরবঙ্গের মিলাররা চাল নিয়ে কারসাজি করছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে। এখন আমনের ভরা মৌসুম হলেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মিল মালিকরা অর্ডার নিয়ে চাহিদা অনুপাতে চাল সরবরাহ দিচ্ছেন না। এতে বাজারে চিকন চালের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পাইকারিতে দাম বাড়ছে। চট্টগ্রামে চালের বাজার উত্তরাঞ্চলের চালের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বৃহত্তম চট্টগ্রামে দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, নওগাঁ থেকে চাল আনা হয়। প্রতিদিন অন্তত ২০০ গাড়ি চাল আসে বৃহত্তম চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোয়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, চাক্তাই, কাজীরহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় চালের প্রধান পাইকারি বাজার। এসব বাজার থেকে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাল নিয়ে থাকেন। গত ১৫ দিনের মধ্যে দুই দফায় চিকন চালের দাম বেড়েছে। এখন মূল্যবৃদ্ধির পর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এ কারণে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আমদানিকারকদের গুদামে কোনো চাল নেই। বর্তমানে চাল মজুদ আছে উত্তরাঞ্চলের মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের কাছে। এখন তারাই চালের বাজার জিম্মি করে রেখেছেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
পাহাড়তলী শাহ আমানত রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। তারা আমাদের কাছ থেকে চাল সরবরাহের কার্যাদেশ নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছে না। ফলে বাজারে চালের সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে চালের দাম। মিলারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চালের দাম কমে আসবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চট্টগ্রামে মিলারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম
আমনের ভরা মৌসুমে চট্টগ্রামে বেড়েছে চালের দাম। গত পনেরো দিনে দুই দফায় বেড়েছে চিকন চালের দাম। প্রতিবছর আমনের মৌসুমে চালের দাম কমলেও এ বছর মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে। আমন ধান তোলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দুই ধরনের লোক ধান কিনে গুদামে মজুদ করছে। মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ধান কিনে মজুদ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মিল মালিকদের সরকারি লাইসেন্স থাকলেও মৌসুমি মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো লাইসেন্স নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তদারকিও করা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে চালের দাম। এদিকে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ আমন সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ২ হাজার ৬৩৮ টন। এর মধ্যে জেলার আনোয়ারা উপজেলা থেকে ২৬৪ টন, বাঁশখালীতে ১৮৩ টন, বোয়ালখালীতে ২৬ টন, চন্দনাইশে ৩৮ টন, ফটিকছড়িতে ৩৭৫ টন, হাটহাজারীতে ৫০ টন, লোহাগাড়ায় ৩৭ টন, মীরসরাইয়ে ১৭ টন, পটিয়ায় ২৫১ টন, রাঙ্গুনিয়ায় ৭৫১ টন, রাউজানে ১১০ টন, সাতকানিয়ায় ৫৩ টন, পাঁচলাইশে ১২ টন, চান্দগাঁওয়ে ৩৮৯ টন, পাহাড়তলী থেকে ৯৪ টন ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে ২৯ টন আতপ চাল।
চালের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী থেকে মহানগরের পাশাপাশি ১৪টি উপজেলায় চাল সরবরাহ করা হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামেও এখান থেকে চাল সরবরাহ করা হয়। চাক্তাই চালপট্টিতে মোটা সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) প্রায় ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। একইভাবে প্রতি বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। দিনাজপুরি পাইজাম ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকার কাছাকাছি। কাটারি চাল বিক্রি ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকা প্রতি বস্তা।
স্বর্ণা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা। যা আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। চিনিগুড়া চাল ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
পাহাড়তলীর বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরবঙ্গের মিলাররা চাল নিয়ে কারসাজি করছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে। এখন আমনের ভরা মৌসুম হলেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মিল মালিকরা অর্ডার নিয়ে চাহিদা অনুপাতে চাল সরবরাহ দিচ্ছেন না। এতে বাজারে চিকন চালের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পাইকারিতে দাম বাড়ছে। চট্টগ্রামে চালের বাজার উত্তরাঞ্চলের চালের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বৃহত্তম চট্টগ্রামে দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, নওগাঁ থেকে চাল আনা হয়। প্রতিদিন অন্তত ২০০ গাড়ি চাল আসে বৃহত্তম চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোয়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, চাক্তাই, কাজীরহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় চালের প্রধান পাইকারি বাজার। এসব বাজার থেকে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাল নিয়ে থাকেন। গত ১৫ দিনের মধ্যে দুই দফায় চিকন চালের দাম বেড়েছে। এখন মূল্যবৃদ্ধির পর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এ কারণে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আমদানিকারকদের গুদামে কোনো চাল নেই। বর্তমানে চাল মজুদ আছে উত্তরাঞ্চলের মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের কাছে। এখন তারাই চালের বাজার জিম্মি করে রেখেছেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
পাহাড়তলী শাহ আমানত রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। তারা আমাদের কাছ থেকে চাল সরবরাহের কার্যাদেশ নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছে না। ফলে বাজারে চালের সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে চালের দাম। মিলারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চালের দাম কমে আসবে।