দখলমুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ৫২ একর ভূমি
লালদিয়ার চর
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পুনর্বাসনের দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মধ্যেই লালদিয়ার চরের ৫২ একর ভূমি দখলমুক্ত করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কথা থাকলেও চরের বাসিন্দাদের অনুরোধে তা কয়েকদিন পেছানো হয়েছে। আগামী ১ মার্চ শুরু হবে বন্দরের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ কার্যক্রম। এরইমধ্যে এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উচ্ছেদ আতঙ্কে অনেকেই নিজ উদ্যোগে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, তাদের এই জমিতে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। বাস করছে সহস্রাধিক মানুষ। তবে স্থানীয়দের দাবি, লালদিয়ার চরে ১০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করছে।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা জানান, এ এলাকায় তারা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বসবাস করে আসছেন। বিমানঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয়দের তুলে দেওয়া হলে তারা ১৯৭২ সালে লালদিয়ার চরে এসে বসতি গাড়েন। যাদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। উচ্ছেদ করা হলে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না। তাই পুনর্বাসনের পর উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার সকালেও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের মূল্যবান এ জমিতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়েও তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কোনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান থেকে পিছু হটবে না। জমিটি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রকল্পের আওতাধীন। এখানে পিসিটির কনটেইনার ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, লালদিয়ার চর এলাকায় বন্দরের ৫২ একর ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে আমাদের কাছে আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছেন। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ১ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারি, মাইকিংসহ আইনি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই উচ্ছেদে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে এখানকার ৭২ একর ভূমির মধ্যে প্রায় ২০ একর অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছিল। এখন বাকি ৫২ একরও দখলমুক্ত করা হবে।
বন্দরের এ কর্মকর্তা বলেন, উচ্ছেদের ব্যাপারে বন্দর কর্র্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠনের রিটের বিপরীতে উচ্চ আদালত অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের ওই নির্দেশে উচ্ছেদের বিষয়ে ৯ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আলমগীর হাসান যুগান্তরকে বলেন, সরকারি কাজে জমি প্রয়োজন হলে তা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে এখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করতে হবে। লালদিয়ার চরে দুই হাজার ৩০০ পরিবার বাস করছে। এখানে ৩টি বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও ১টি মাদ্রাসা রয়েছে বলে জানান আলমগীর। তবে বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান জানান, এলাকাটিতে এক হাজার ৪০০ জন বাস করছেন। স্থাপনা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। বেশিরভাগ স্থাপনাই কাঁচা ও অস্থায়ী।
এদিকে পুনর্বাসনের দাবিতে আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা মানববন্ধন করবেন বলে জানিয়েছেন পুনর্বাসন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
লালদিয়ার চর
দখলমুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ৫২ একর ভূমি
পুনর্বাসনের দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মধ্যেই লালদিয়ার চরের ৫২ একর ভূমি দখলমুক্ত করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কথা থাকলেও চরের বাসিন্দাদের অনুরোধে তা কয়েকদিন পেছানো হয়েছে। আগামী ১ মার্চ শুরু হবে বন্দরের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ কার্যক্রম। এরইমধ্যে এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উচ্ছেদ আতঙ্কে অনেকেই নিজ উদ্যোগে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, তাদের এই জমিতে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। বাস করছে সহস্রাধিক মানুষ। তবে স্থানীয়দের দাবি, লালদিয়ার চরে ১০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করছে।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা জানান, এ এলাকায় তারা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বসবাস করে আসছেন। বিমানঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয়দের তুলে দেওয়া হলে তারা ১৯৭২ সালে লালদিয়ার চরে এসে বসতি গাড়েন। যাদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। উচ্ছেদ করা হলে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না। তাই পুনর্বাসনের পর উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার সকালেও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের মূল্যবান এ জমিতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়েও তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কোনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান থেকে পিছু হটবে না। জমিটি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রকল্পের আওতাধীন। এখানে পিসিটির কনটেইনার ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, লালদিয়ার চর এলাকায় বন্দরের ৫২ একর ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে আমাদের কাছে আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছেন। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ১ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারি, মাইকিংসহ আইনি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই উচ্ছেদে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে এখানকার ৭২ একর ভূমির মধ্যে প্রায় ২০ একর অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছিল। এখন বাকি ৫২ একরও দখলমুক্ত করা হবে।
বন্দরের এ কর্মকর্তা বলেন, উচ্ছেদের ব্যাপারে বন্দর কর্র্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠনের রিটের বিপরীতে উচ্চ আদালত অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের ওই নির্দেশে উচ্ছেদের বিষয়ে ৯ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আলমগীর হাসান যুগান্তরকে বলেন, সরকারি কাজে জমি প্রয়োজন হলে তা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে এখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করতে হবে। লালদিয়ার চরে দুই হাজার ৩০০ পরিবার বাস করছে। এখানে ৩টি বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও ১টি মাদ্রাসা রয়েছে বলে জানান আলমগীর। তবে বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান জানান, এলাকাটিতে এক হাজার ৪০০ জন বাস করছেন। স্থাপনা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। বেশিরভাগ স্থাপনাই কাঁচা ও অস্থায়ী।
এদিকে পুনর্বাসনের দাবিতে আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা মানববন্ধন করবেন বলে জানিয়েছেন পুনর্বাসন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি।