‘সবাই ছবি তুলছে, কেউ সাহায্য করতে আসছে না’
সিলেট সড়কে নিহত ৮ জনের দাফন
সিলেট ব্যুরো
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেটের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আটজনকে শুক্রবার বাদ আসর নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়। এর মধ্যে সিলেটের ডা. ইমরান খান রুমেলকে নগরীর মানিক পীর (রহ.) কবরস্থানে ও এনা পরিবহনের চালক মঞ্জুর আলী ও হেলপার জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওসমানীনগরের সাদিপুর ধরখা পঞ্চায়েতি গোরস্তানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় নিহত দুই বাসচালককে আসামি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ডা. রুমেলের স্ত্রী ডা. শারমিন আক্তার অন্তরার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তাকে এখনো নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি জানান, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ডা. অন্তরাকে আইসিইউতে রাখা হলেও তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে না। শুক্রবার বিকেলে শরীরে অস্ত্রোপচারের পর রাতে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রাখা হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত এনা পরিবহনের সুপারভাইজার সালমান খানকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামে, লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক রুহুল আমিনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দিতে, কলেজছাত্র নাদিম আহমদ সাগরকে ঢাকার ওয়ারীতে, শাহ কামালকে সিলেট নগরীর আখালিয়া নায়াবাজারে ও রহিমা খাতুনকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাউয়ালী গ্রামে দাফন করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন সায়মন। দুর্ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন তিনি। সায়মন বলেন, আমরা রাত ১১টায় সিলেটের উদ্দেশে নটর ডেমের সামনে থেকে লন্ডন এক্সপ্রেসে উঠি। আমার সিট নাম্বার ই-১। সব ঠিকঠাক চলছিল। ভোর ৫টায় আমি জেগে যাই এবং বাস তখন রানিংয়েই ছিল। কুয়াশা ঢাকা পথে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলছিল। সেটা দেখার জন্য আমি সরাসরি সামনেই তাকিয়েছিলাম। সাড়ে ৫টা কি ৬টার দিকে গাড়ি ওভারটেক করছিল এবং ওভারটেক করার সময় সামনে থাকা এনা পরিবহনকে দূর থেকে বেশ কয়েকবার ডিপার সিগন্যাল দিয়েছিল। এতে এনা পরিবহনও তার গতি কমিয়েছিল। সেটা দেখেই আমাদের ড্রাইভার সাহস পেয়ে গাড়ি ওভারটেক করে।
সায়মন তার এক বন্ধুকে জানান, হঠাৎ করে এনা পরিবহন ঢুকে যায় এবং আমাদের ড্রাইভার তারপরও গাড়ি ব্রেক করতে সক্ষম হয়েছিল। গাড়ি ৮০+ থেকে ব্রেক করে ১০-২০ এ নিয়ে চলে এসেছিল। কিন্তু এনার চালক গাড়িটি ব্রেক করেননি, দ্রুতগতিতে এসে সামনাসামনি আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। সায়মন বলেন, আমার মাথা সামনের সিটে বাড়ি খাওয়ার পর কি হলো বুঝিনি। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে চিৎকার শুরু হলো। আমি সিটেই ছিলাম, কিন্তু ওঠার শক্তি নেই। বুঝলাম যে ডান পা হয়তো ভেঙে গেছে, না হয় কেটে আলাদা হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে পকেট থেকে ফোন বের করলাম। কল লগে শেষ কলটা আমার বন্ধু উৎসের ছিল। ওকে কল দিয়ে শুধু বললাম যে, গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে সিলেট হাইওয়েতে। আমি বাঁচব না মনে হয়। তারপর আমি শুধু তাকিয়ে আছি কিন্তু কথা বলার শক্তি নেই। আমার বন্ধু সিলেটের এসপিকে ফোন দিয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠায়।
সবচেয়ে আশ্চর্য, দুর্ঘটনা হয়ে গেছে ৫-৭ মিনিট কিন্তু বাইরের একটা মানুষও বাসের ভেতরে আসেনি সাহায্য করার জন্য। পেছনে দুজন ছেলে সুস্থ ছিল। ওরাই গাড়ির কাচ ভাঙার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কাচ অনেক শক্ত। আমাকে একজন টেনে তুললেন। আমি দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু কাচ ভাঙার শক্তি নেই। ওরাই ভাঙল কাচ। অবাক হলাম, বাইরে অনেক মানুষ, সবাই ফোনে ছবি তুলছে কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসছে না। তখন দুজন ভেতরে ঢুকে সবাইকে বের করার চেষ্টা করছে। তার পরই ফায়ার সার্ভিসের লোক চলে আসে। তারাই সবাইকে বের করেন। চোখের সামনে পায়ের নিচে তাজা রক্ত। কী ভয়ানক অবস্থা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সিলেট সড়কে নিহত ৮ জনের দাফন
‘সবাই ছবি তুলছে, কেউ সাহায্য করতে আসছে না’
সিলেটের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আটজনকে শুক্রবার বাদ আসর নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়। এর মধ্যে সিলেটের ডা. ইমরান খান রুমেলকে নগরীর মানিক পীর (রহ.) কবরস্থানে ও এনা পরিবহনের চালক মঞ্জুর আলী ও হেলপার জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওসমানীনগরের সাদিপুর ধরখা পঞ্চায়েতি গোরস্তানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় নিহত দুই বাসচালককে আসামি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ডা. রুমেলের স্ত্রী ডা. শারমিন আক্তার অন্তরার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তাকে এখনো নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি জানান, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ডা. অন্তরাকে আইসিইউতে রাখা হলেও তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে না। শুক্রবার বিকেলে শরীরে অস্ত্রোপচারের পর রাতে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রাখা হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত এনা পরিবহনের সুপারভাইজার সালমান খানকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামে, লন্ডন এক্সপ্রেসের চালক রুহুল আমিনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দিতে, কলেজছাত্র নাদিম আহমদ সাগরকে ঢাকার ওয়ারীতে, শাহ কামালকে সিলেট নগরীর আখালিয়া নায়াবাজারে ও রহিমা খাতুনকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাউয়ালী গ্রামে দাফন করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন সায়মন। দুর্ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন তিনি। সায়মন বলেন, আমরা রাত ১১টায় সিলেটের উদ্দেশে নটর ডেমের সামনে থেকে লন্ডন এক্সপ্রেসে উঠি। আমার সিট নাম্বার ই-১। সব ঠিকঠাক চলছিল। ভোর ৫টায় আমি জেগে যাই এবং বাস তখন রানিংয়েই ছিল। কুয়াশা ঢাকা পথে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলছিল। সেটা দেখার জন্য আমি সরাসরি সামনেই তাকিয়েছিলাম। সাড়ে ৫টা কি ৬টার দিকে গাড়ি ওভারটেক করছিল এবং ওভারটেক করার সময় সামনে থাকা এনা পরিবহনকে দূর থেকে বেশ কয়েকবার ডিপার সিগন্যাল দিয়েছিল। এতে এনা পরিবহনও তার গতি কমিয়েছিল। সেটা দেখেই আমাদের ড্রাইভার সাহস পেয়ে গাড়ি ওভারটেক করে।
সায়মন তার এক বন্ধুকে জানান, হঠাৎ করে এনা পরিবহন ঢুকে যায় এবং আমাদের ড্রাইভার তারপরও গাড়ি ব্রেক করতে সক্ষম হয়েছিল। গাড়ি ৮০+ থেকে ব্রেক করে ১০-২০ এ নিয়ে চলে এসেছিল। কিন্তু এনার চালক গাড়িটি ব্রেক করেননি, দ্রুতগতিতে এসে সামনাসামনি আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। সায়মন বলেন, আমার মাথা সামনের সিটে বাড়ি খাওয়ার পর কি হলো বুঝিনি। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে চিৎকার শুরু হলো। আমি সিটেই ছিলাম, কিন্তু ওঠার শক্তি নেই। বুঝলাম যে ডান পা হয়তো ভেঙে গেছে, না হয় কেটে আলাদা হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে পকেট থেকে ফোন বের করলাম। কল লগে শেষ কলটা আমার বন্ধু উৎসের ছিল। ওকে কল দিয়ে শুধু বললাম যে, গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে সিলেট হাইওয়েতে। আমি বাঁচব না মনে হয়। তারপর আমি শুধু তাকিয়ে আছি কিন্তু কথা বলার শক্তি নেই। আমার বন্ধু সিলেটের এসপিকে ফোন দিয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠায়।
সবচেয়ে আশ্চর্য, দুর্ঘটনা হয়ে গেছে ৫-৭ মিনিট কিন্তু বাইরের একটা মানুষও বাসের ভেতরে আসেনি সাহায্য করার জন্য। পেছনে দুজন ছেলে সুস্থ ছিল। ওরাই গাড়ির কাচ ভাঙার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কাচ অনেক শক্ত। আমাকে একজন টেনে তুললেন। আমি দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু কাচ ভাঙার শক্তি নেই। ওরাই ভাঙল কাচ। অবাক হলাম, বাইরে অনেক মানুষ, সবাই ফোনে ছবি তুলছে কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসছে না। তখন দুজন ভেতরে ঢুকে সবাইকে বের করার চেষ্টা করছে। তার পরই ফায়ার সার্ভিসের লোক চলে আসে। তারাই সবাইকে বের করেন। চোখের সামনে পায়ের নিচে তাজা রক্ত। কী ভয়ানক অবস্থা।