আলমডাঙ্গায় আফু দম্পতির দিন কাটে অনাহারে
ত্রিশ বিঘা জমি লিখে নেয় ছেলেরা
আহাদ আলী মোল্লা, চুয়াডাঙ্গা
০১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আফু মোল্লার ৯ সন্তান থাকলেও এখন খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া স্বামী-স্ত্রীর দুবেলা দুমুঠো খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৩০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন তিনি। কিন্তু তিন ছেলে কৌশলে সব জমি লিখে নিয়েছেন। ফলে অন্য সন্তানরা এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই তারা বাবা-মার খোঁজখবর রাখেন না। আর যারা জমিজমা সব নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন সেই ছেলেরা এখন লাপাত্তা। এ কারণে বৃদ্ধ আফু মোল্লা আর তার স্ত্রীর এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। পাড়াপ্রতিবেশীদের দয়া নিয়ে তারা কোনোমতে বেঁচে আছেন। আফাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে আফু মোল্লা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গ্রামবাসী জানান, কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হুজুর আলী মোল্লার ছেলে আফাজ উদ্দিন ওরফে আফু মোল্লার বয়স একশ বছরের ওপরে। তার প্রথম স্ত্রী দুই পুত্র সন্তান রেখে মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রেশপতি বেগমের গর্ভে আসে পর পর সাত সন্তান। এর মধ্যে চার মেয়ে আর তিন ছেলে। বছরতিনেক আগে রেশপতি বেগম প্যারালাইজড হয়ে যান। আর আফু মোল্লাও বয়সের ভারে তেমন চলাচল করতে পারেন না। তাদের তিন পুত্রসন্তান শহিদ মোল্লা, হাবিবুল মোল্লা ও মেহেদুল মোল্লা বেশ সম্পদশালী। তারা কয়েক বছর আগে বাবা-মার কাছ থেকে প্রায় ৩০ বিঘা জমি তাদের স্ত্রী ও নিজের নামে লিখে নেন। এরপর তাদের একরকম নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেই থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী গ্রামের রাস্তার ধারের একটি টিনশেডে বসবাস করছেন। যেখানে তাদের সন্তান বা নাতিপুতি কেউই থাকেন না।
জমি লিখে নেওয়ার পর সন্তানের মধ্যে শহীদ মোল্লা বছরদুয়েক আগে মারা গেছেন। অন্য দুই সন্তান প্রবাসী। তাদের স্ত্রী বা তারা এখন আর খোঁজখবর রাখেন না বৃদ্ধ বাবা-মার। বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বৃদ্ধা রেশপতি বেগম বিছানায় পড়ে আছেন। তার বাম দিকটা অচল। ঘরের এ মাথা ও মাথা গড়িয়ে গড়িয়ে চলেন। বৃদ্ধ আফু মোল্লা নিজের মতো কোনোরকম চলাচল করতে পারেন। তিনিই এখন স্ত্রীর হিল্লা। আফু মোল্লা কেঁদে কেঁদে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার তিন ছেলে বড় লোক। তারা বড় বড় বাড়ির মালিক। তারা আমার কাছ থেকে জমিজমা সব লিখে নিয়েছে। এখন আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না। অন্য ছেলেমেয়েও আমাদের দেখে না। কী যে যন্ত্রণায় আছি তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আগে কোনো কোনো বিটার বউ (পুত্রবধূ) এক আধটু খেতে দিত, এখন তাও দেয় না। আমাদের দুর্দশা দেখে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়’ গ্রামের স্কুল শিক্ষক আনছার আলী জানান, আফু মোল্লার যে ছেলেরা জমিজমা ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে তারা দেশের বাইরে থাকে। তাদের স্ত্রীরাও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কোনো খোঁজখবর রাখে না। ফলে তারা এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন। এলাকার ইউপি সদস্য মো. ওজিদ আলী জানান, ‘আফু মোল্লা ও তার স্ত্রী রেশপতি বেগমের খুব ভোগান্তি যাচ্ছে। তাদের দেখাশোনা তো দূরের কথা দুবেলা দুমুঠো খাবার দেওয়ার মতোও কেউ নেই।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ত্রিশ বিঘা জমি লিখে নেয় ছেলেরা
আলমডাঙ্গায় আফু দম্পতির দিন কাটে অনাহারে
আফু মোল্লার ৯ সন্তান থাকলেও এখন খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া স্বামী-স্ত্রীর দুবেলা দুমুঠো খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৩০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন তিনি। কিন্তু তিন ছেলে কৌশলে সব জমি লিখে নিয়েছেন। ফলে অন্য সন্তানরা এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই তারা বাবা-মার খোঁজখবর রাখেন না। আর যারা জমিজমা সব নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন সেই ছেলেরা এখন লাপাত্তা। এ কারণে বৃদ্ধ আফু মোল্লা আর তার স্ত্রীর এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। পাড়াপ্রতিবেশীদের দয়া নিয়ে তারা কোনোমতে বেঁচে আছেন। আফাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে আফু মোল্লা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গ্রামবাসী জানান, কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হুজুর আলী মোল্লার ছেলে আফাজ উদ্দিন ওরফে আফু মোল্লার বয়স একশ বছরের ওপরে। তার প্রথম স্ত্রী দুই পুত্র সন্তান রেখে মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রেশপতি বেগমের গর্ভে আসে পর পর সাত সন্তান। এর মধ্যে চার মেয়ে আর তিন ছেলে। বছরতিনেক আগে রেশপতি বেগম প্যারালাইজড হয়ে যান। আর আফু মোল্লাও বয়সের ভারে তেমন চলাচল করতে পারেন না। তাদের তিন পুত্রসন্তান শহিদ মোল্লা, হাবিবুল মোল্লা ও মেহেদুল মোল্লা বেশ সম্পদশালী। তারা কয়েক বছর আগে বাবা-মার কাছ থেকে প্রায় ৩০ বিঘা জমি তাদের স্ত্রী ও নিজের নামে লিখে নেন। এরপর তাদের একরকম নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেই থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী গ্রামের রাস্তার ধারের একটি টিনশেডে বসবাস করছেন। যেখানে তাদের সন্তান বা নাতিপুতি কেউই থাকেন না।
জমি লিখে নেওয়ার পর সন্তানের মধ্যে শহীদ মোল্লা বছরদুয়েক আগে মারা গেছেন। অন্য দুই সন্তান প্রবাসী। তাদের স্ত্রী বা তারা এখন আর খোঁজখবর রাখেন না বৃদ্ধ বাবা-মার। বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বৃদ্ধা রেশপতি বেগম বিছানায় পড়ে আছেন। তার বাম দিকটা অচল। ঘরের এ মাথা ও মাথা গড়িয়ে গড়িয়ে চলেন। বৃদ্ধ আফু মোল্লা নিজের মতো কোনোরকম চলাচল করতে পারেন। তিনিই এখন স্ত্রীর হিল্লা। আফু মোল্লা কেঁদে কেঁদে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার তিন ছেলে বড় লোক। তারা বড় বড় বাড়ির মালিক। তারা আমার কাছ থেকে জমিজমা সব লিখে নিয়েছে। এখন আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না। অন্য ছেলেমেয়েও আমাদের দেখে না। কী যে যন্ত্রণায় আছি তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আগে কোনো কোনো বিটার বউ (পুত্রবধূ) এক আধটু খেতে দিত, এখন তাও দেয় না। আমাদের দুর্দশা দেখে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়’ গ্রামের স্কুল শিক্ষক আনছার আলী জানান, আফু মোল্লার যে ছেলেরা জমিজমা ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে তারা দেশের বাইরে থাকে। তাদের স্ত্রীরাও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কোনো খোঁজখবর রাখে না। ফলে তারা এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন। এলাকার ইউপি সদস্য মো. ওজিদ আলী জানান, ‘আফু মোল্লা ও তার স্ত্রী রেশপতি বেগমের খুব ভোগান্তি যাচ্ছে। তাদের দেখাশোনা তো দূরের কথা দুবেলা দুমুঠো খাবার দেওয়ার মতোও কেউ নেই।’