রাজধানীতে জাল স্ট্যাম্প বাণিজ্য রমরমা
মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৪
যুগান্তর প্রতিবেদন
২২ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে বিক্রি হতো জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্প। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতচক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার ও কোর্ট ফি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকার (৬০), তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও রাসেল (৪০)। শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। কাওরান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাব জানায়, বৈধ ও অবৈধ স্ট্যাম্পের পার্থক্য করা খুবই কঠিন। অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রির কারণে একদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সেবাগ্রহীতারা পড়ছেন বিপদে। সম্প্রতি র্যাব-৩ ও এনএসআই-এর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ফুটপাতে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার র্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ আভিযানিক দল মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।
অভিযানে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মধ্যে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩ হাজার, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪ হাজার, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২ হাজার ৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০ এবং ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১ হাজার ৫০০টি জব্দ করা হয়। এছাড়া ৫০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২০০টি, ১০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৬৪০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪ হাজার ২০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৬০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৭২০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১১ হাজার ২৮০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৪ হাজার ২৮০টি, ৪ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২৪০টি এবং ২ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪৮০টি জব্দ হয়। উদ্ধারকৃত সব স্ট্যাম্পের মোট মূল্য ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছিল। উদ্ধার করা স্ট্যাম্পগুলোর বিষয়ে কোনো ধরনের কাগজপত্র ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তারা। কোনো ট্রেজারি চালানও উপস্থাপন করতে পারেননি। র্যাব জানায়, জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকার কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশের পর ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন। জাল স্ট্যাম্প বিক্রির অপরাধে ২০১৭ সালে পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। ওই মামলায় কারাভোগ করেন তিনি। জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়ান। তুহিন খান শনিরআখড়ার একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন। তিন-চার বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসাবে কাজ করেন তিনি। আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। তিনি আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। আর রাসেল নেত্রকোনার কোনাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, সরকারিভাবে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুর থেকে সব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু চক্রটি অবৈধভাবে সব ধরনের জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প তৈরি, মজুত ও বিক্রি করে আসছিল।
তিনি বলেন, জব্দ করা স্ট্যাম্পগুলোর কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এগুলো ছিদ্রবিহীন এবং পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্ট্যাম্পের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার অদূরে ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানের নাম আমরা জেনেছি, যেখানে জালিয়াতি চক্রের একটি গ্রুপ জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে। অভিযান ও গ্রেফতারের স্বার্থে আমরা তা প্রকাশ করছি না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাজধানীতে জাল স্ট্যাম্প বাণিজ্য রমরমা
মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৪
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে বিক্রি হতো জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্প। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতচক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার ও কোর্ট ফি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকার (৬০), তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও রাসেল (৪০)। শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। কাওরান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
র্যাব জানায়, বৈধ ও অবৈধ স্ট্যাম্পের পার্থক্য করা খুবই কঠিন। অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রির কারণে একদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সেবাগ্রহীতারা পড়ছেন বিপদে। সম্প্রতি র্যাব-৩ ও এনএসআই-এর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ফুটপাতে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার র্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ আভিযানিক দল মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।
অভিযানে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মধ্যে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩ হাজার, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪ হাজার, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২ হাজার ৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০ এবং ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১ হাজার ৫০০টি জব্দ করা হয়। এছাড়া ৫০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২০০টি, ১০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৬৪০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪ হাজার ২০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৬০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৭২০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১১ হাজার ২৮০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৪ হাজার ২৮০টি, ৪ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২৪০টি এবং ২ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪৮০টি জব্দ হয়। উদ্ধারকৃত সব স্ট্যাম্পের মোট মূল্য ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছিল। উদ্ধার করা স্ট্যাম্পগুলোর বিষয়ে কোনো ধরনের কাগজপত্র ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তারা। কোনো ট্রেজারি চালানও উপস্থাপন করতে পারেননি। র্যাব জানায়, জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকার কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশের পর ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন। জাল স্ট্যাম্প বিক্রির অপরাধে ২০১৭ সালে পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। ওই মামলায় কারাভোগ করেন তিনি। জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়ান। তুহিন খান শনিরআখড়ার একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন। তিন-চার বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসাবে কাজ করেন তিনি। আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। তিনি আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। আর রাসেল নেত্রকোনার কোনাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, সরকারিভাবে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুর থেকে সব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু চক্রটি অবৈধভাবে সব ধরনের জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প তৈরি, মজুত ও বিক্রি করে আসছিল।
তিনি বলেন, জব্দ করা স্ট্যাম্পগুলোর কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এগুলো ছিদ্রবিহীন এবং পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্ট্যাম্পের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার অদূরে ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানের নাম আমরা জেনেছি, যেখানে জালিয়াতি চক্রের একটি গ্রুপ জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে। অভিযান ও গ্রেফতারের স্বার্থে আমরা তা প্রকাশ করছি না।