বিক্রি হয়ে গেছে বেশিরভাগ গরু-ছাগল
কেরানীগঞ্জের খামার
আবু জাফর, কেরানীগঞ্জ
৩০ জুন ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদুল আজহার এখনো বাকি ১১-১২ দিন। এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জের খামারে পালিত বেশিরভাগ গরু-ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রি হওয়া এসব গরু-ছাগল খামারেই রাখা হয়েছে। ঈদের দু-এক দিন আগে এসব পশু খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত খামারে লালন-পালনের খরচ বহন করবেন ক্রেতারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। উপজেলায় ছোট-বড় খামার রয়েছে ৫৬২টি। এসব খামারে ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার পশু। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত এসব পশুর বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। রুহিতপুর এলাকার ফিট অ্যান্ড ফ্রেশ খামারের মালিক আকবর আলম উপল বলেন, এবারের কুরবানিতে বিক্রির জন্য ২০০ গরু প্রস্তুত করেছিলাম। ইতোমধ্যে ১১৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তবে এসব গরু খামারেই রাখা আছে। ঈদের দু-এক দিন আগে ক্রেতারা তাদের গরু নিয়ে যাবেন। গদারবাগ এলাকার এপেল অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী আরিফ হোসেন রবিন জানান, তাদের খামারে বিক্রির জন্য ১০০টি গরু রেডি করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
কাঁচা ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতায় বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতিতে পশুপালনে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খামারিরা। অন্যদিকে দানাদার গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই খামারে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় পশু মোটা তাজাকরণে ক্ষতিকর হরমোনের প্রয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও খামারিরা। রুহিতপুর ইউনিয়নের খামারি শহিদুল ইসলাম রাজু বলেন, এ বছর আমার খামারে ৪টি মহিষ ও ৭০টি ষাড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। দানাদার খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা বেশি পশু লালন-পালন করতে পারিনি। গবাদি পশুর খাদ্যের জোগান দিতে না পেরে অনেক খামারিই বছরের মাঝামাঝি সময়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গত বছর লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি করেছি। তবে এ বছর খরচ বেড়ে যাওয়ায় সে সুযোগ থাকছে না। এ বছর ভালো দাম না পেলে লোকসানে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর এলাকার বাসিন্দা সমীর পাল বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে গরু-বাছুর লালন-পালন করি। গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। কুরবানির সময় বিক্রির জন্য বাড়িতেই ষাঁড় গরু পালন করি। আগে লাভও হতো বেশ। এখন আর আগের মতো লাভ নেই। আগে মাঠে গরু চরাতে নিয়ে গেলে কাঁচা ঘাস খেয়েই গরুর পেট ভরে যেত। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে কৃষি জমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করায় গরুর কাঁচা ঘাসের ঘাটতি পড়েছে। এখন আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে গরু-বাছুর পালন করা সম্ভব নয়।
গত বছরের তুলনায় এবার ভালো মূল্য পাবেন বলে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জের খামারিরা। গো-খাদ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় বাজার বেশ চড়া হবে। খামারিরা বলছেন, ৬ মাস আগে গো-খাদ্যের যে দাম ছিল, তা এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক দিনে গো-খাদ্যের দাম মনপ্রতি ২শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর অন্যতম খাবার গমের ভূষি। কয়েক দিনের ব্যবধানে ভূষির ৩৭ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে ৪শ টাকা। আগে এক বস্তা ভূষির দাম ছিল ১৮শ টাকা। ধানের কুড়া, গমের ছাল, সরিষার খৈল, ছোলার ভূষি, খেসারি, মাসকালাইয়ের ভূষির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। খামারি আকবর আলম উপল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হবে। ৮ মন মাংসের গরু এবার গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেশি পড়বে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনছুর আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জের কোনো খামারেই গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার নেই। গত কয়েক বছরে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতার ফলে খামারিরা গরু মোটা তাজাকরণে এসব ওষুধের প্রয়োগ পুরোপুরি বাদ দিয়েছেন। এ বছর কেরানীগঞ্জের ছোট-বড় ৫৬২টি খামারে প্রায় ৭ হাজার গরু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষিজমি কমে যাওয়ায় গরুর কাঁচা ঘাসের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা অল্প জায়গায় যাতে বেশি পরিমাণ ঘাস পাওয়া যায় এজন্য উন্নতমানের ঘাসের বীজ সরবরাহ করছি এবং সেগুলো লাগানোর জন্য খামারিদের উৎসাহিত করে থাকি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কেরানীগঞ্জের খামার
বিক্রি হয়ে গেছে বেশিরভাগ গরু-ছাগল
ঈদুল আজহার এখনো বাকি ১১-১২ দিন। এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জের খামারে পালিত বেশিরভাগ গরু-ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রি হওয়া এসব গরু-ছাগল খামারেই রাখা হয়েছে। ঈদের দু-এক দিন আগে এসব পশু খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত খামারে লালন-পালনের খরচ বহন করবেন ক্রেতারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। উপজেলায় ছোট-বড় খামার রয়েছে ৫৬২টি। এসব খামারে ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার পশু। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত এসব পশুর বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। রুহিতপুর এলাকার ফিট অ্যান্ড ফ্রেশ খামারের মালিক আকবর আলম উপল বলেন, এবারের কুরবানিতে বিক্রির জন্য ২০০ গরু প্রস্তুত করেছিলাম। ইতোমধ্যে ১১৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তবে এসব গরু খামারেই রাখা আছে। ঈদের দু-এক দিন আগে ক্রেতারা তাদের গরু নিয়ে যাবেন। গদারবাগ এলাকার এপেল অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী আরিফ হোসেন রবিন জানান, তাদের খামারে বিক্রির জন্য ১০০টি গরু রেডি করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
কাঁচা ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতায় বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতিতে পশুপালনে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খামারিরা। অন্যদিকে দানাদার গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই খামারে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় পশু মোটা তাজাকরণে ক্ষতিকর হরমোনের প্রয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও খামারিরা। রুহিতপুর ইউনিয়নের খামারি শহিদুল ইসলাম রাজু বলেন, এ বছর আমার খামারে ৪টি মহিষ ও ৭০টি ষাড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। দানাদার খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা বেশি পশু লালন-পালন করতে পারিনি। গবাদি পশুর খাদ্যের জোগান দিতে না পেরে অনেক খামারিই বছরের মাঝামাঝি সময়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গত বছর লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি করেছি। তবে এ বছর খরচ বেড়ে যাওয়ায় সে সুযোগ থাকছে না। এ বছর ভালো দাম না পেলে লোকসানে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর এলাকার বাসিন্দা সমীর পাল বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে গরু-বাছুর লালন-পালন করি। গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। কুরবানির সময় বিক্রির জন্য বাড়িতেই ষাঁড় গরু পালন করি। আগে লাভও হতো বেশ। এখন আর আগের মতো লাভ নেই। আগে মাঠে গরু চরাতে নিয়ে গেলে কাঁচা ঘাস খেয়েই গরুর পেট ভরে যেত। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে কৃষি জমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করায় গরুর কাঁচা ঘাসের ঘাটতি পড়েছে। এখন আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে গরু-বাছুর পালন করা সম্ভব নয়।
গত বছরের তুলনায় এবার ভালো মূল্য পাবেন বলে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জের খামারিরা। গো-খাদ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় বাজার বেশ চড়া হবে। খামারিরা বলছেন, ৬ মাস আগে গো-খাদ্যের যে দাম ছিল, তা এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক দিনে গো-খাদ্যের দাম মনপ্রতি ২শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর অন্যতম খাবার গমের ভূষি। কয়েক দিনের ব্যবধানে ভূষির ৩৭ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে ৪শ টাকা। আগে এক বস্তা ভূষির দাম ছিল ১৮শ টাকা। ধানের কুড়া, গমের ছাল, সরিষার খৈল, ছোলার ভূষি, খেসারি, মাসকালাইয়ের ভূষির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। খামারি আকবর আলম উপল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হবে। ৮ মন মাংসের গরু এবার গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেশি পড়বে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনছুর আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জের কোনো খামারেই গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার নেই। গত কয়েক বছরে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতার ফলে খামারিরা গরু মোটা তাজাকরণে এসব ওষুধের প্রয়োগ পুরোপুরি বাদ দিয়েছেন। এ বছর কেরানীগঞ্জের ছোট-বড় ৫৬২টি খামারে প্রায় ৭ হাজার গরু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষিজমি কমে যাওয়ায় গরুর কাঁচা ঘাসের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা অল্প জায়গায় যাতে বেশি পরিমাণ ঘাস পাওয়া যায় এজন্য উন্নতমানের ঘাসের বীজ সরবরাহ করছি এবং সেগুলো লাগানোর জন্য খামারিদের উৎসাহিত করে থাকি।