অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে র‌্যাবের ‘নবজাগরণ’

কক্সবাজারে পাইলট প্রকল্প শুরু এ মাসেই * আগের কর্মসূচিতে স্বাভাবিক জীবনে এসেছে ৪২১ অপরাধী
 সিরাজুল ইসলাম 
১৯ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অপরাধ করার ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে নবজাগরণ কর্মসূচির আওতায় সুন্দর জীবন গঠনের পথে নিয়ে যাওয়া হবে। অপরাধ প্রতিরোধবিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার স্লোগান হলো-‘অপরাধকে না বলুন’।

চলতি মাসের শেষদিকে কক্সবাজারে ‘নবজাগরণ’-এর পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। প্রথম কর্মসূচি শেষ হবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো-অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে অপরাধে জড়াতে নিরুৎসাহিত করা। আর এটা করতে পারলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক অন্তরায় সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোকে প্রধান্য দেওয়া হবে নবজাগরণের মাধ্যমে। যাতে সমাজের আবালবৃদ্ধবনিতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অপরাধ না করার ব্যাপারে সচেতন থাকে। র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, অপরাধ পর্যালোচনা ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে সংস্থাটি নানা সময়ে নানা কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। এরই অংশ হিসাবে চালু হচ্ছে ‘নবজাগরণ’। এটি হলো র‌্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন। এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ র‌্যাব যেসব কাজ করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। যাদের পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়, তারা আগে থেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে, কিছুটা ক্ষমা করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল ধারায় আনা হয়। এবার আর্লি ইন্টারভেনশনে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়ায়নি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।

সূত্র আরও জানায়, পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে ‘নবদিগন্তের পথে’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪০৫ জন জলদস্যুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নবজাগরণের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস হাতে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে। তালিকাভুক্তদের স্বাবলম্বী করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটননির্ভর পেশা হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, ট্যুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিংকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নবজাগরণের ব্যাপ্তি পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক, কমিউনিটি বেজড নানা কর্মসূচি, সভা-সেমিনার এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। র‌্যাবের নতুন এই কার্যক্রমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাইলট প্রকল্পে আমরা ২০-২৫ জনকে নির্বাচিত করেছি। প্রশিক্ষণের জন্য ৪-৫ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যাদের নির্বাচিত করেছি, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকগুলো বৈধ পেশায় যুক্ত হতে উৎসাহ পাবে।’

র‌্যাব পরিচালক আরও বলেন, ‘যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে জড়িত না। কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে, কেউ বেকার। কেউ অল্প শিক্ষিত। আবার কেউ ভবঘুরে টাইপের। কেউ ফটোগ্রাফার হিসাবে কাজ করলেও মানসম্মতভাবে ছবি তুলতে পারে না।’ উপার্জন বহুমুখী করতেই পরিবারের সদস্যদের নবজাগরণের আওতায় আনা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মেজর রইসুল আজকম মনি বলেন, ‘নবজাগরণের মাধ্যমে যাদের সমাজের মূল ধারায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ র‌্যাবের কর্মকর্তারা সরাসরি দেবেন। এক্ষেত্রে র‌্যাবের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হবে। অবশিষ্ট প্রশিক্ষণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের কর্মপন্থায় যুক্ত হওয়া ‘নবজাগরণ’ সমাজের অপরাধপ্রবণতা হ্রাসে অনুষঙ্গ হিসাবে কাজ করবে।’

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন