কারবারিরা তৎপর, ঘুমিয়ে পুলিশ
কুমিল্লায় বেপরোয়া মাদক ব্যবসা
শীর্ষ ৫০ মাদক ব্যবসায়ীর প্রতিজনের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে * দেশে বসে ব্যবহার বিদেশি মোবাইল সিম, নিয়ন্ত্রণ করছে অপরাধজগৎ
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা সদর দক্ষিণ। একসময় এর বিভিন্ন স্থানে রাতে মাদকের হাট বসত। এখন বসছে দিনেই। গত দুই বছর মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শিথিল থাকায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ মাদক কারবারিরাও ফিরে এসেছে। যথারীতি তারাও ব্যস্ত মাদকের কারবারে। এ সময়ে এ উপজেলায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ৫০ শীর্ষ কারবারি। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা-মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এসব মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের নাকের ডগায় বসেই মাদকের ব্যবসা করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাদকের স্পটগুলোয় নিয়মিত পুলিশ টহলও দিচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কাউকে গ্রেফতারও করছে না। এর মধ্যেই শীর্ষ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী দেশে বসে বিদেশি রোমিং করা মোবাইল সিম ব্যবহার করে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে।
সূত্রমতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা মাদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে এ উপজেলার অবস্থান। ভারত থেকে আসা বিভিন্ন প্রকার মাদক এ উপজেলার ছোট-বড় সড়কগুলো ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। সদর দক্ষিণ থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত দুই হাজারেরও বেশি ছোট-বড় মাদক ও চোরাকারবারি রয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ কারবারির তালিকায় রয়েছে মথুরাপুর গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে কসাই মোস্তফার নাম। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মাদক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মামলায় সাজা হলেও প্রকাশ্যেই সে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। উলুচর গ্রামের ১৮ মামলার আসামি রুহুল আমীনের সদর দক্ষিণ থানায় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ আছে। অন্য শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে-২২ মামলার আসামি মুরাপাড়া গ্রামের পিচ্চি হান্নান, ১৭ মামলার আসামি মুরাদকালিকাপুর গ্রামের মোতাহার, জয়নগর গ্রামের অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি জয়নাল, একই গ্রামের হত্যাসহ ৮ মামলার আসামি জালাল, গিলাতলা গ্রামের ৮ মামলার আসামি মীর হোসেন, সোনাইছড়ি-সাহাপুর গ্রামের ২০ মামলার আসামি মাজহারুল ইসলাম সবুজ, উলুচর গ্রামের ১৮ মামলার আসামি ইকবাল হোসেন, একই গ্রামের ১০ মামলার আসামি বাবুল মিয়া, ১৮ মামলার আসামি মাহবুল হক, হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি আওলাদ, কমলপুর-কানুয়ামুখ নো ম্যান্সল্যান্ড এলাকার ৯ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম, মথুরাপুর গ্রামের ১৫ মামলার আসামি মিজান, রাজেশপুর গ্রামের ১৭ মামলার আসামি রিপন, শ্রীবল্লভপুর গ্রামের ২৩ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর, উত্তর রামপুর গ্রামের ২৪ মামলার আসামি মিলন, কুন্দারঘোড়া গ্রামের ১৩ মামলার আসামি মাসুম, মুড়াপাড়া গ্রামের ৮ মামলার আসামি আবুল মিয়া, সোয়াগাজী এলাকার ৬ মামলার আসামি হিরন, সুবর্ণপুর এলাকার ৪ মামলার আসামি রহমান ওরফে রবন, ফিরিঙ্গির হাট গ্রামের ১৩ মামলার আসামি জাকির হোসেন, দড়িবটগ্রাম এলাকার ১০ মামলার আসামি আবুল বাশার, একই গ্রামের ৯ মামলার আসামি রাজ্জাক মেম্বারের ছেলে রুবেল, ভাগলপুর গ্রামের ১২ মামলার আসামি আলেয়া বেগম, লালনগর গ্রামের ১২ মামলার আসামি কারুজ্জামান লিটন, পশ্চিম বটগ্রাম এলাকার ৯ মামলার আসামি হাজী শাহজালাল। স্থানীয়রা জানান, শীর্ষ এসব মাদক কারবারি পুলিশের তৎপরতা দেখলে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। দুই বছর ধরে মাদকবিরোধী অভিযান শিথিল থাকায় তারা এখন দেশে বসে কারবার চালাচ্ছে।
ওসি দেবাশিষ চৌধুরী এ থানায় যোগদানের পর শীর্ষ মাদক কারবারিরা এলাকায় ফিরে এসেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, এটা সীমান্ত এলাকা, ইচ্ছা থাকলেও পুরোপুরি মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি, মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতারে সিনিয়র অফিসারদের তাগিদ রয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, সদর দক্ষিণ থানাটি মাদকপ্রবণ এলাকা, ওই এলাকায় আগে ডিবি পুলিশের তৎপরতায় মাদক অনেকটাই শিথিল ছিল, সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা অনেক বেপরোয়া হয়েছে বলে অনেক তথ্য আসছে। আমরা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা পেলে শিগগিরই অভিযান শুরু করব।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কুমিল্লায় বেপরোয়া মাদক ব্যবসা
কারবারিরা তৎপর, ঘুমিয়ে পুলিশ
শীর্ষ ৫০ মাদক ব্যবসায়ীর প্রতিজনের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে * দেশে বসে ব্যবহার বিদেশি মোবাইল সিম, নিয়ন্ত্রণ করছে অপরাধজগৎ
কুমিল্লার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা সদর দক্ষিণ। একসময় এর বিভিন্ন স্থানে রাতে মাদকের হাট বসত। এখন বসছে দিনেই। গত দুই বছর মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শিথিল থাকায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ মাদক কারবারিরাও ফিরে এসেছে। যথারীতি তারাও ব্যস্ত মাদকের কারবারে। এ সময়ে এ উপজেলায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ৫০ শীর্ষ কারবারি। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা-মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এসব মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের নাকের ডগায় বসেই মাদকের ব্যবসা করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাদকের স্পটগুলোয় নিয়মিত পুলিশ টহলও দিচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কাউকে গ্রেফতারও করছে না। এর মধ্যেই শীর্ষ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী দেশে বসে বিদেশি রোমিং করা মোবাইল সিম ব্যবহার করে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে।
সূত্রমতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা মাদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে এ উপজেলার অবস্থান। ভারত থেকে আসা বিভিন্ন প্রকার মাদক এ উপজেলার ছোট-বড় সড়কগুলো ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। সদর দক্ষিণ থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত দুই হাজারেরও বেশি ছোট-বড় মাদক ও চোরাকারবারি রয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ কারবারির তালিকায় রয়েছে মথুরাপুর গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে কসাই মোস্তফার নাম। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মাদক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মামলায় সাজা হলেও প্রকাশ্যেই সে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। উলুচর গ্রামের ১৮ মামলার আসামি রুহুল আমীনের সদর দক্ষিণ থানায় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ আছে। অন্য শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে-২২ মামলার আসামি মুরাপাড়া গ্রামের পিচ্চি হান্নান, ১৭ মামলার আসামি মুরাদকালিকাপুর গ্রামের মোতাহার, জয়নগর গ্রামের অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি জয়নাল, একই গ্রামের হত্যাসহ ৮ মামলার আসামি জালাল, গিলাতলা গ্রামের ৮ মামলার আসামি মীর হোসেন, সোনাইছড়ি-সাহাপুর গ্রামের ২০ মামলার আসামি মাজহারুল ইসলাম সবুজ, উলুচর গ্রামের ১৮ মামলার আসামি ইকবাল হোসেন, একই গ্রামের ১০ মামলার আসামি বাবুল মিয়া, ১৮ মামলার আসামি মাহবুল হক, হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি আওলাদ, কমলপুর-কানুয়ামুখ নো ম্যান্সল্যান্ড এলাকার ৯ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম, মথুরাপুর গ্রামের ১৫ মামলার আসামি মিজান, রাজেশপুর গ্রামের ১৭ মামলার আসামি রিপন, শ্রীবল্লভপুর গ্রামের ২৩ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর, উত্তর রামপুর গ্রামের ২৪ মামলার আসামি মিলন, কুন্দারঘোড়া গ্রামের ১৩ মামলার আসামি মাসুম, মুড়াপাড়া গ্রামের ৮ মামলার আসামি আবুল মিয়া, সোয়াগাজী এলাকার ৬ মামলার আসামি হিরন, সুবর্ণপুর এলাকার ৪ মামলার আসামি রহমান ওরফে রবন, ফিরিঙ্গির হাট গ্রামের ১৩ মামলার আসামি জাকির হোসেন, দড়িবটগ্রাম এলাকার ১০ মামলার আসামি আবুল বাশার, একই গ্রামের ৯ মামলার আসামি রাজ্জাক মেম্বারের ছেলে রুবেল, ভাগলপুর গ্রামের ১২ মামলার আসামি আলেয়া বেগম, লালনগর গ্রামের ১২ মামলার আসামি কারুজ্জামান লিটন, পশ্চিম বটগ্রাম এলাকার ৯ মামলার আসামি হাজী শাহজালাল। স্থানীয়রা জানান, শীর্ষ এসব মাদক কারবারি পুলিশের তৎপরতা দেখলে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। দুই বছর ধরে মাদকবিরোধী অভিযান শিথিল থাকায় তারা এখন দেশে বসে কারবার চালাচ্ছে।
ওসি দেবাশিষ চৌধুরী এ থানায় যোগদানের পর শীর্ষ মাদক কারবারিরা এলাকায় ফিরে এসেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, এটা সীমান্ত এলাকা, ইচ্ছা থাকলেও পুরোপুরি মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি, মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতারে সিনিয়র অফিসারদের তাগিদ রয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, সদর দক্ষিণ থানাটি মাদকপ্রবণ এলাকা, ওই এলাকায় আগে ডিবি পুলিশের তৎপরতায় মাদক অনেকটাই শিথিল ছিল, সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা অনেক বেপরোয়া হয়েছে বলে অনেক তথ্য আসছে। আমরা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা পেলে শিগগিরই অভিযান শুরু করব।