সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরসহ তিনজন কারাগারে
jugantor
লাখাইয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ
সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরসহ তিনজন কারাগারে

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি  

৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের চার লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আটক হয়েছেন লাখাই উপজেলার সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজন। অপর দুজন হলেন সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান ও অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া। রোববার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আহসানুল ইসলামের আদালতে তারা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আইনজীবী হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, রোববার তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চেয়েছিলেন। বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন জানান, এ মামলায় সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানকে আগেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার আরও তিনজন আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। অপরজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন পলাতক।

অভিযোগে জানা যায়, লাখাই উপজেলার বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কাচা আবুর বাড়ি থেকে বামৈ পূর্বগ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত এক লাখ ৮৫ হাজার টাকার প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে মহিলা ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরীকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। একই ইউনিয়নের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ভাদিকারা হাড়িবাড়ি পশ্চিমের কালভার্ট থেকে হাজী আব্দুল বাছির মিয়ার বাড়ি হয়ে ভাদিকারা উত্তর শুয়া মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ভাদিকারা জুম্মাহাটি থেকে আবুল কালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৮ হাজার ৭০০ টাকা প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে মহিলা সদস্য মোছা. বিউটি আক্তারকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। এ তিনটি প্রকল্পের কোনো রেকর্ডপত্রে ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরী ও বিউটি আক্তার স্বাক্ষর করেননি এবং কোনো বিল নেননি মর্মে দেখা যায়। প্রকল্পগুলোর মাটির কাজসহ উন্নয়নমূলক কাজও করা হয়নি। অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া, সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানের নির্দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল নিজেরা পূরণ করে প্রকল্প কমিটির স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে সহায়তা করেন। বামৈ ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের ভুয়া স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা পিআইও অফিসে দাখিল করেন মর্মেও দেখা যায়। মূলত ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন এবং সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান, তার অফিসের কর্মচারী মো. গোলাম কিবরিয়া এবং হাবিবুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল পূরণ করে নিজেদের মনোনীত প্রকল্প কমিটির নাম নিজেরা লিখে স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেন। রাস্তা বা অন্যান্য প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ না করে বর্ণিত প্রকল্পসমূহের সর্বমোট চার লাখ ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

এসব অভিযোগে বামৈ ইউপির সাবেক সদস্য ইকবাল মিয়া দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শোয়ায়েব হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা একই কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক মো. এরশাদ মিয়া তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। উক্ত মামলায় পিআইও মোহাম্মদ জাহান আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

লাখাইয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরসহ তিনজন কারাগারে

 হবিগঞ্জ প্রতিনিধি 
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের চার লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আটক হয়েছেন লাখাই উপজেলার সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজন। অপর দুজন হলেন সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান ও অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া। রোববার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আহসানুল ইসলামের আদালতে তারা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আইনজীবী হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, রোববার তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চেয়েছিলেন। বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন জানান, এ মামলায় সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানকে আগেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার আরও তিনজন আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। অপরজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন পলাতক।

অভিযোগে জানা যায়, লাখাই উপজেলার বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কাচা আবুর বাড়ি থেকে বামৈ পূর্বগ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত এক লাখ ৮৫ হাজার টাকার প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে মহিলা ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরীকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। একই ইউনিয়নের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ভাদিকারা হাড়িবাড়ি পশ্চিমের কালভার্ট থেকে হাজী আব্দুল বাছির মিয়ার বাড়ি হয়ে ভাদিকারা উত্তর শুয়া মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ভাদিকারা জুম্মাহাটি থেকে আবুল কালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৮ হাজার ৭০০ টাকা প্রকল্পের সভাপতি হিসাবে মহিলা সদস্য মোছা. বিউটি আক্তারকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। এ তিনটি প্রকল্পের কোনো রেকর্ডপত্রে ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরী ও বিউটি আক্তার স্বাক্ষর করেননি এবং কোনো বিল নেননি মর্মে দেখা যায়। প্রকল্পগুলোর মাটির কাজসহ উন্নয়নমূলক কাজও করা হয়নি। অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া, সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানের নির্দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল নিজেরা পূরণ করে প্রকল্প কমিটির স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে সহায়তা করেন। বামৈ ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের ভুয়া স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা পিআইও অফিসে দাখিল করেন মর্মেও দেখা যায়। মূলত ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন এবং সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান, তার অফিসের কর্মচারী মো. গোলাম কিবরিয়া এবং হাবিবুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল পূরণ করে নিজেদের মনোনীত প্রকল্প কমিটির নাম নিজেরা লিখে স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেন। রাস্তা বা অন্যান্য প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ না করে বর্ণিত প্রকল্পসমূহের সর্বমোট চার লাখ ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

এসব অভিযোগে বামৈ ইউপির সাবেক সদস্য ইকবাল মিয়া দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শোয়ায়েব হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা একই কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক মো. এরশাদ মিয়া তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। উক্ত মামলায় পিআইও মোহাম্মদ জাহান আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন