অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত
jugantor
তালতলী বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়
অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

  যুগান্তর প্রতিবেদন আমতলী (বরগুনা)  

৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বরগুনার তালতলী উপজেলার বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘুস গ্রহণের ফোনালাপ ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিনিধি মো. আবুল কালাম রোববার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। এ নিয়োগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদারের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুস গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

গত বছর ৮ আগস্ট বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিছন্নতা কর্মী, নৈশপ্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক তিনটি পদে ২৪ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কক্ষে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই নিয়োগ পরীক্ষায় নৈশপ্রহরী পদে টাকা লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। ফোনালাপে পুরুষ কণ্ঠে এক ব্যক্তি বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি টাকা দাও। অনেক প্রার্থী রয়েছে। আঙ্কেল সম্মোধন করে নারী কণ্ঠে একজন বলেন, চাকরি হবে তো। প্রতিউত্তরে তিনি (পুরুষ) বলেন, এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমার ওপর বিশ্বাস রাখ। কেউ নিয়োগ ঠেকাতে পারবে না। নারী বলেন, আঙ্কেল আমি তো নগদ টাকা দিতে পারব না, চেক দিতে হবে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, আমি চেক নিতে পারব না। আমি ব্যস্ত আছি, ওই চেক নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার সময় নেই। আরেক ফোনালাপে চুক্তি অনুসারে টাকা দিতে চাপ দিচ্ছেন। টাকা না দিলে কী হয় বলা যাবে না? প্রধান শিক্ষকেরও টাকার প্রয়োজন আছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। এভাবে চারটি অভিওতে ওই বিদ্যালয় সভাপতির কথোপকথন শোনা গেছে। এ নিয়োগ পরীক্ষায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩টি পদের বিপরীতে ৭-৮ জনের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে অফিস সহায়ক পদে ইনামুল হক, নিরাপত্তাকর্মী পদে বিদ্যালয় অফিস সহকারী মো. বশির ফকিরের ভাইয়ের ছেলে আতিকুর রহমান এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে অনিমা রানীকে নিয়োগ দিতে কমিটি ম্যানেজ করে নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

নৈশপ্রহরী পদে আবেদনকারী রিপন দাসের বোন দুলি রানী বলেন, আমার বাবা ওই বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করতেন। ২০১০ সালে বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। বাবার পরিবর্তে আমার ভাইকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ওই নিয়োগ বাবদ সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার আমার কাছ থেকে গত বছর জানুয়ারি মাসে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন বলছেন নিয়োগ নিতে হলে আরও চার লাখ টাকা লাগবে।

পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে অঞ্জু নামে এক আবেদনকারী বলেন, সভাপতি দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান চাকরি দেবে বলে আমার কাছে আট লাখ টাকা দাবি করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কার্ড ইস্যু নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। তাই ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। সভাপতির ফোনালাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি সভাপতি ফোনে কার কাছে টাকা চেয়েছেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও কাছে টাকা চাইনি ও নেইনি। ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা। তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর কবির বলেন, কী কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে তা আমার জানা নেই? মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ কার্ড ইস্যু করা হয়নি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাদিক তানভীর বলেন, বিষয়টি জেনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালতলী বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়

অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

 যুগান্তর প্রতিবেদন আমতলী (বরগুনা) 
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বরগুনার তালতলী উপজেলার বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘুস গ্রহণের ফোনালাপ ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিনিধি মো. আবুল কালাম রোববার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। এ নিয়োগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদারের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুস গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

গত বছর ৮ আগস্ট বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিছন্নতা কর্মী, নৈশপ্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক তিনটি পদে ২৪ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কক্ষে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই নিয়োগ পরীক্ষায় নৈশপ্রহরী পদে টাকা লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। ফোনালাপে পুরুষ কণ্ঠে এক ব্যক্তি বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি টাকা দাও। অনেক প্রার্থী রয়েছে। আঙ্কেল সম্মোধন করে নারী কণ্ঠে একজন বলেন, চাকরি হবে তো। প্রতিউত্তরে তিনি (পুরুষ) বলেন, এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমার ওপর বিশ্বাস রাখ। কেউ নিয়োগ ঠেকাতে পারবে না। নারী বলেন, আঙ্কেল আমি তো নগদ টাকা দিতে পারব না, চেক দিতে হবে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, আমি চেক নিতে পারব না। আমি ব্যস্ত আছি, ওই চেক নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার সময় নেই। আরেক ফোনালাপে চুক্তি অনুসারে টাকা দিতে চাপ দিচ্ছেন। টাকা না দিলে কী হয় বলা যাবে না? প্রধান শিক্ষকেরও টাকার প্রয়োজন আছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। এভাবে চারটি অভিওতে ওই বিদ্যালয় সভাপতির কথোপকথন শোনা গেছে। এ নিয়োগ পরীক্ষায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩টি পদের বিপরীতে ৭-৮ জনের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে অফিস সহায়ক পদে ইনামুল হক, নিরাপত্তাকর্মী পদে বিদ্যালয় অফিস সহকারী মো. বশির ফকিরের ভাইয়ের ছেলে আতিকুর রহমান এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে অনিমা রানীকে নিয়োগ দিতে কমিটি ম্যানেজ করে নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

নৈশপ্রহরী পদে আবেদনকারী রিপন দাসের বোন দুলি রানী বলেন, আমার বাবা ওই বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করতেন। ২০১০ সালে বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। বাবার পরিবর্তে আমার ভাইকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ওই নিয়োগ বাবদ সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার আমার কাছ থেকে গত বছর জানুয়ারি মাসে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন বলছেন নিয়োগ নিতে হলে আরও চার লাখ টাকা লাগবে।

পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে অঞ্জু নামে এক আবেদনকারী বলেন, সভাপতি দেলোয়ার সিকদার ও প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান চাকরি দেবে বলে আমার কাছে আট লাখ টাকা দাবি করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কার্ড ইস্যু নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। তাই ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। সভাপতির ফোনালাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি সভাপতি ফোনে কার কাছে টাকা চেয়েছেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার সিকদার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও কাছে টাকা চাইনি ও নেইনি। ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা। তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর কবির বলেন, কী কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে তা আমার জানা নেই? মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বরগুনা জেলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ কার্ড ইস্যু করা হয়নি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাদিক তানভীর বলেন, বিষয়টি জেনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন