জটিলতায় নতুন প্রাথমিক স্কুলের লাখ শিক্ষক
পাবেন না জ্যেষ্ঠতা, অর্ধেককে ফেরত দিতে হবে টাইম স্কেল * প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি ১৯ ফেব্রুয়ারি
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এক দশকেও জটিলতা থেকে মুক্তি পাননি জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বরং এক জটিলতা দূর হলে আটকে পড়েন আরেকটিতে। আইন ও বিধির অপব্যাখ্যা দিয়ে ইতোমধ্যে এসব শিক্ষককে বঞ্চিত করা হয়েছে জ্যেষ্ঠতা থেকে। এর ধারাবাহিকতায় তাদের দেওয়া হয়নি প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব। সর্বশেষ হাত দেওয়া হয়েছে এসব শিক্ষকের আর্থিক সুবিধায়। প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষককে গৃহীত টাইম স্কেল ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব শিক্ষকের পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার পথও খুলে দেওয়া হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন। সারা দেশে ৬৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও সমস্যার সমাধান না হলে ১৯ মার্চ তারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহাসমাবেশ করবেন। সেখান থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির মহাসচিব রাধা রাণী ভৌমিক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন খোন্দকার, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, মো. মোশাররফ হোসেন, আজমল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
শিক্ষকদের তিন দাবি হচ্ছে-অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্র বাতিল করতে হবে। গেজেট অনুসারে কার্যকর চাকরিকাল (৫০%) গণনা করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে। বেসরকারি আমলে স্কুল পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের নামের গেজেট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অধিগ্রহণ করা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ বিধি (৯) উপবিধি (১)-এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেমন-অধিগ্রহণ করা শিক্ষকের উল্লিখিত বিধি অনুযায়ী কার্যকর (৫০%) চাকরিকালের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ, পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড এবং প্রযোজ্য টাইমস্কেল প্রাপ্য হয়ে আসছেন। কিন্তু ২০২০ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে শিক্ষকদের গৃহীত টাইম স্কুল বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। ফলে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষক এখন বিপাকে পড়েছেন। উত্তোলিত টাইম স্কেল সমস্যা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্রটি বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রচলিত বিধিবিধান দ্বারা ২০১৩ সালের বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। উক্ত বিধিবিধানের আলোকে জাতীয়করণকৃত ৪৮,৭২০ জন শিক্ষক তাদের টাইম স্কেল উত্তোলন করেছেন এবং ফেরত প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকগণ বেসরকারি চাকরির ৫০% চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল পাবে না এমন কোনো পরিপত্র বা গেজেট কেউ দেখাতে পারবে না। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত ১,০৪,৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে এসব শিক্ষক সব আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করে আসছেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জটিলতায় নতুন প্রাথমিক স্কুলের লাখ শিক্ষক
পাবেন না জ্যেষ্ঠতা, অর্ধেককে ফেরত দিতে হবে টাইম স্কেল * প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি ১৯ ফেব্রুয়ারি
এক দশকেও জটিলতা থেকে মুক্তি পাননি জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বরং এক জটিলতা দূর হলে আটকে পড়েন আরেকটিতে। আইন ও বিধির অপব্যাখ্যা দিয়ে ইতোমধ্যে এসব শিক্ষককে বঞ্চিত করা হয়েছে জ্যেষ্ঠতা থেকে। এর ধারাবাহিকতায় তাদের দেওয়া হয়নি প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব। সর্বশেষ হাত দেওয়া হয়েছে এসব শিক্ষকের আর্থিক সুবিধায়। প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষককে গৃহীত টাইম স্কেল ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব শিক্ষকের পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার পথও খুলে দেওয়া হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন। সারা দেশে ৬৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও সমস্যার সমাধান না হলে ১৯ মার্চ তারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহাসমাবেশ করবেন। সেখান থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির মহাসচিব রাধা রাণী ভৌমিক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন খোন্দকার, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, মো. মোশাররফ হোসেন, আজমল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
শিক্ষকদের তিন দাবি হচ্ছে-অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্র বাতিল করতে হবে। গেজেট অনুসারে কার্যকর চাকরিকাল (৫০%) গণনা করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে। বেসরকারি আমলে স্কুল পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের নামের গেজেট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অধিগ্রহণ করা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ বিধি (৯) উপবিধি (১)-এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেমন-অধিগ্রহণ করা শিক্ষকের উল্লিখিত বিধি অনুযায়ী কার্যকর (৫০%) চাকরিকালের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ, পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড এবং প্রযোজ্য টাইমস্কেল প্রাপ্য হয়ে আসছেন। কিন্তু ২০২০ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে শিক্ষকদের গৃহীত টাইম স্কুল বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। ফলে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষক এখন বিপাকে পড়েছেন। উত্তোলিত টাইম স্কেল সমস্যা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্রটি বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রচলিত বিধিবিধান দ্বারা ২০১৩ সালের বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। উক্ত বিধিবিধানের আলোকে জাতীয়করণকৃত ৪৮,৭২০ জন শিক্ষক তাদের টাইম স্কেল উত্তোলন করেছেন এবং ফেরত প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকগণ বেসরকারি চাকরির ৫০% চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল পাবে না এমন কোনো পরিপত্র বা গেজেট কেউ দেখাতে পারবে না। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত ১,০৪,৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে এসব শিক্ষক সব আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করে আসছেন।