আ.লীগের ওপর ভরসা করাটাই ছিল ভুল
jugantor
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হার নিয়ে জোটের প্রার্থী
আ.লীগের ওপর ভরসা করাটাই ছিল ভুল

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি  

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ দলের পরাজিত প্রার্থী ইয়াসিন আলী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করাটাই ভুল ছিল। আমি যেভাবে আশা করেছিলাম, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেভাবে মাঠে নামেননি। বরং তাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঠেকিয়ে রাখেন। উপনির্বাচনে পরাজয় সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করলে তিনি রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালেও নির্বাচনের শরিক দলের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছিলাম। এবার তারা অসহযোগিতার পাশাপাশি ষড়যন্ত্র করেছেন। এ নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতির চাওয়া-পাওয়ার একটা বিষয়ও ছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা হয়তো ভেবেছিলেন, আমি জয়ী হলে ভবিষ্যতে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে ভেতরে ভেতরে আমাকে হারানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। নির্বাচনে সেই সম্প্রদায়ের একজন প্রার্থী ছিলেন। এ ভোটাররা এক হয়ে একতারা প্রতীকে ভোট দেন। আর মুসলিম ভোটারের একটা অংশ চলে যায় লাঙলের দিকে। আমার যে পরাজয় হলো, এটা শুধু আমারই নয়, জোটের পরাজয়। আওয়ামী লীগেরও পরাজয়।

এ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দীন আহমেদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়। এখানে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলীর শোচনীয় পরাজয় হয়। এ পরাজয়ের ফলে উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, জোটের প্রার্থীকে জেতাতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ কিংবা সক্রিয় তৎপরতা ছিল না। পদত্যাগকারী বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য জাহিদুর রহমান ১৪ দলের প্রার্থীর পরাজয় সম্পর্কে বলেন, উপনির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে পথে হাঁটা উচিত ছিল, সেই পথে তারা হাঁটেনি। একতারা প্রতীকের প্রার্থীকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকতাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। তারা চলে যায় লাঙলের দিকে। ভোটকেন্দ্রে তাদের তৎপরতা দেখে মনে হয়েছে, তারাই যেন হাফিজ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায় দাবি করেন, ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়ে যেতেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট নিয়ে গেছেন লাঙলের দিকে। এ কারণে তার পরাজয় হয়েছে। তারা ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকেও হারিয়েছেন।

সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যে। এ যেন উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে। তবে হাজীপুর ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় শরিক জোটের প্রার্থীর পক্ষে মন থেকে মাঠে নামেনি। পাশের ইউপির নারী চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো নির্দেশনা পায়নি, তাই দূরে ছিলাম।

ইয়াসিন আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, তিনি কি আমাদের দলের প্রার্থী ছিলেন? তবু আমরা তার হয়ে কাজ করেছি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি একটি রাজনৈতিক দল, তারা কেন আমাদের ওপর ভরসা করবে?

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ইয়াসিন আলীর পক্ষে প্রচার কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্থানীয় নেতারা তা আমলে নেননি বলে ১৪ দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। সুতরাং এসব নিয়ে এক ধরনের অসন্তোষ, ক্ষোভ ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হার নিয়ে জোটের প্রার্থী

আ.লীগের ওপর ভরসা করাটাই ছিল ভুল

 ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি 
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ দলের পরাজিত প্রার্থী ইয়াসিন আলী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করাটাই ভুল ছিল। আমি যেভাবে আশা করেছিলাম, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেভাবে মাঠে নামেননি। বরং তাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঠেকিয়ে রাখেন। উপনির্বাচনে পরাজয় সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করলে তিনি রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালেও নির্বাচনের শরিক দলের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছিলাম। এবার তারা অসহযোগিতার পাশাপাশি ষড়যন্ত্র করেছেন। এ নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতির চাওয়া-পাওয়ার একটা বিষয়ও ছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা হয়তো ভেবেছিলেন, আমি জয়ী হলে ভবিষ্যতে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে ভেতরে ভেতরে আমাকে হারানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। নির্বাচনে সেই সম্প্রদায়ের একজন প্রার্থী ছিলেন। এ ভোটাররা এক হয়ে একতারা প্রতীকে ভোট দেন। আর মুসলিম ভোটারের একটা অংশ চলে যায় লাঙলের দিকে। আমার যে পরাজয় হলো, এটা শুধু আমারই নয়, জোটের পরাজয়। আওয়ামী লীগেরও পরাজয়।

এ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দীন আহমেদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়। এখানে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলীর শোচনীয় পরাজয় হয়। এ পরাজয়ের ফলে উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, জোটের প্রার্থীকে জেতাতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ কিংবা সক্রিয় তৎপরতা ছিল না। পদত্যাগকারী বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য জাহিদুর রহমান ১৪ দলের প্রার্থীর পরাজয় সম্পর্কে বলেন, উপনির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে পথে হাঁটা উচিত ছিল, সেই পথে তারা হাঁটেনি। একতারা প্রতীকের প্রার্থীকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকতাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। তারা চলে যায় লাঙলের দিকে। ভোটকেন্দ্রে তাদের তৎপরতা দেখে মনে হয়েছে, তারাই যেন হাফিজ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায় দাবি করেন, ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়ে যেতেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট নিয়ে গেছেন লাঙলের দিকে। এ কারণে তার পরাজয় হয়েছে। তারা ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকেও হারিয়েছেন।

সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যে। এ যেন উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে। তবে হাজীপুর ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় শরিক জোটের প্রার্থীর পক্ষে মন থেকে মাঠে নামেনি। পাশের ইউপির নারী চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো নির্দেশনা পায়নি, তাই দূরে ছিলাম।

ইয়াসিন আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, তিনি কি আমাদের দলের প্রার্থী ছিলেন? তবু আমরা তার হয়ে কাজ করেছি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি একটি রাজনৈতিক দল, তারা কেন আমাদের ওপর ভরসা করবে?

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ইয়াসিন আলীর পক্ষে প্রচার কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্থানীয় নেতারা তা আমলে নেননি বলে ১৪ দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। সুতরাং এসব নিয়ে এক ধরনের অসন্তোষ, ক্ষোভ ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন