কারণ চিহ্নিত হলেও সমাধান নেই
jugantor
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি
কারণ চিহ্নিত হলেও সমাধান নেই
বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ * বছর বছর একই সুপারিশ দিয়ে যাচ্ছে আইএমইডি * আইএমইডির অবস্থা হলো হাতির সামনে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতো : এমএ মান্নান * এখন জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে : সচিব

  হামিদ-উজ-জামান  

১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ২৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবছর ঘুরেফিরে একই চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হলেও সমাধানের পথ রয়েছে অজানা। ফলে অর্থবছর শেষ হলেও কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। এবারও সমস্যা সমাধানে ২৬টি সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি সমাধানই করা না যায়, তাহলে সমস্যা চিহ্নিত করে লাভ কী? সেই সঙ্গে প্রকৃত সমস্যা তুলে না ধরে গৎ বাঁধা বিষয় তুলে ধরে দায় এড়াতে পারে না আইএমইডিও।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আইএমইডির সক্ষমতা একটা বড় বিষয়। লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প মূল্যায়ন করতে হচ্ছে আইএমইডিকে। কিন্তু তাদের জনবলসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো যায়নি। বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। আইনগত জটিলতাও দেখিয়েছেন কেউ কেউ। আমরা তো আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারব না। আইএমইডির অবস্থা হলো হাতির সামনে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতো।

তিনি আরও বলেন, আইএমইডি যে সুপারিশগুলো দেয়, তা বাস্তবায়নের দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর। আইএমইডির কাজ হলো অডিটের মতো। অডিটররা যেমন অডিট করে বলেন এত টাকার অনিয়ম হয়েছে; কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তেমনই আইএমইডিরও সুপারিশের বাইরে কিছু করার নেই। এমনকি ব্যাখ্যা চাওয়ারও আইনি ক্ষমতা নেই।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্প তৈরি এবং অনুমোদন পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে নয়টি। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ ১৩টি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষেও রয়েছে চারটি চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে প্রথম ধাপের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-উন্নয়ন প্রকল্পের গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। নানা ফাঁকফোকর আর ত্রুটি রেখেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এমনকি যাদের জন্য এত আয়োজন, সেই সংশ্লিষ্ট মানুষদেরও মতামত নেওয়া হয় না। এছাড়া প্রাক্কলিত দর নির্ধারণেও থাকে বিস্তর গরমিল। সেই সঙ্গে প্রকল্প দলিল বা ডিপিপি অনেক ত্রুটিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার মিল থাকে না। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেওয়ার আগেই সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকদের সম্মতি নেওয়া হয় না। প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য স্থাপনা পরে রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকে না। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আর্থিক সীমা না মেনেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প কীভাবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যথাযথভাবে টেকসই হবে, সেই পরিকল্পনা বা শর্তগুলো অনেক সময় থাকে না। প্রকল্প গ্রহণে আঞ্চলিক বৈষম্য বিবেচনায় না নেওয়া। কাজ শুরু করার পর মহলবিশেষকে সুবিধা দিতে প্রকল্পের ভৌত কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করা, অর্থাৎ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ডিজাইন পরিবর্তন করেন। বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও টিপিপির (কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব) কর্ম ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা। এছাড়া মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। প্রকল্পের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। নিয়মিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং স্টিয়ারিং কমিটির সভা আয়োজন না করা। এছাড়া কেনাকাটা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ পাওয়ায় কাজ শুরু ও শেষ করতে বিলম্ব। সেই সঙ্গে কাজ বিক্রি করে দওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে দেরি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ঘাটতি প্রভৃতি। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পরের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) আইএমইডিতে না দেওয়া। সেই সঙ্গে পিসিআর তৈরিতে নির্দিষ্ট ছক অনুসরণ না করা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম প্রকল্প শেষে পরিচালনার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা। প্রকল্পের আওতায় তৈরি অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষে সংরক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণ না করা। সংস্থায় দক্ষ জনবল না থাকায় প্রকল্প শেষে প্রায় বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সেবা ক্রয়চুক্তি করতে হয়। এ কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এসব বিষয় সমাধানে সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি।

জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা সুপারিশ দেব আর মন্ত্রণালয়গুলো কিছুই ভূমিকা নেবে না, এটা চলতে পারে না। এজন্য এবার বিষয়গুলো যেখানে জানার, সেখানে জানিয়েছি। ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়গুলোকে জবাবদিহির আওতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেমন, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনীর প্রস্তাব এলে আগে সহজেই অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে প্রকল্পগুলোর পেছনে পিডি ও মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দায় কতটুকু ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হলে মেয়াদ বাড়ে, আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সূত্র জানায়, গত বছরের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রতিবেদনে ২৬টি চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ দেয় আইএমইডি। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনেও একই ধরনের ২৬টি চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যায়নে ১৮টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছিল সংস্থাটি। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল্যায়নে ছিল ১৫টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ছিল ১৯টি চ্যালেঞ্জ। ঘুরেফিরে একই চ্যালেঞ্জই এসেছে এসব প্রতিবেদনে।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

কারণ চিহ্নিত হলেও সমাধান নেই

বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ * বছর বছর একই সুপারিশ দিয়ে যাচ্ছে আইএমইডি * আইএমইডির অবস্থা হলো হাতির সামনে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতো : এমএ মান্নান * এখন জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে : সচিব
 হামিদ-উজ-জামান 
১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ২৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবছর ঘুরেফিরে একই চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হলেও সমাধানের পথ রয়েছে অজানা। ফলে অর্থবছর শেষ হলেও কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। এবারও সমস্যা সমাধানে ২৬টি সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি সমাধানই করা না যায়, তাহলে সমস্যা চিহ্নিত করে লাভ কী? সেই সঙ্গে প্রকৃত সমস্যা তুলে না ধরে গৎ বাঁধা বিষয় তুলে ধরে দায় এড়াতে পারে না আইএমইডিও।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আইএমইডির সক্ষমতা একটা বড় বিষয়। লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প মূল্যায়ন করতে হচ্ছে আইএমইডিকে। কিন্তু তাদের জনবলসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো যায়নি। বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। আইনগত জটিলতাও দেখিয়েছেন কেউ কেউ। আমরা তো আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারব না। আইএমইডির অবস্থা হলো হাতির সামনে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতো।

তিনি আরও বলেন, আইএমইডি যে সুপারিশগুলো দেয়, তা বাস্তবায়নের দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর। আইএমইডির কাজ হলো অডিটের মতো। অডিটররা যেমন অডিট করে বলেন এত টাকার অনিয়ম হয়েছে; কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তেমনই আইএমইডিরও সুপারিশের বাইরে কিছু করার নেই। এমনকি ব্যাখ্যা চাওয়ারও আইনি ক্ষমতা নেই।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্প তৈরি এবং অনুমোদন পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে নয়টি। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ ১৩টি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষেও রয়েছে চারটি চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে প্রথম ধাপের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-উন্নয়ন প্রকল্পের গোড়ায় গলদ থেকে যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। নানা ফাঁকফোকর আর ত্রুটি রেখেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এমনকি যাদের জন্য এত আয়োজন, সেই সংশ্লিষ্ট মানুষদেরও মতামত নেওয়া হয় না। এছাড়া প্রাক্কলিত দর নির্ধারণেও থাকে বিস্তর গরমিল। সেই সঙ্গে প্রকল্প দলিল বা ডিপিপি অনেক ত্রুটিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার মিল থাকে না। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেওয়ার আগেই সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকদের সম্মতি নেওয়া হয় না। প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য স্থাপনা পরে রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকে না। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আর্থিক সীমা না মেনেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প কীভাবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যথাযথভাবে টেকসই হবে, সেই পরিকল্পনা বা শর্তগুলো অনেক সময় থাকে না। প্রকল্প গ্রহণে আঞ্চলিক বৈষম্য বিবেচনায় না নেওয়া। কাজ শুরু করার পর মহলবিশেষকে সুবিধা দিতে প্রকল্পের ভৌত কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করা, অর্থাৎ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ডিজাইন পরিবর্তন করেন। বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৩টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও টিপিপির (কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব) কর্ম ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা। এছাড়া মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। প্রকল্পের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। নিয়মিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এবং স্টিয়ারিং কমিটির সভা আয়োজন না করা। এছাড়া কেনাকাটা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ পাওয়ায় কাজ শুরু ও শেষ করতে বিলম্ব। সেই সঙ্গে কাজ বিক্রি করে দওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে দেরি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ঘাটতি প্রভৃতি। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পরের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) আইএমইডিতে না দেওয়া। সেই সঙ্গে পিসিআর তৈরিতে নির্দিষ্ট ছক অনুসরণ না করা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম প্রকল্প শেষে পরিচালনার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা। প্রকল্পের আওতায় তৈরি অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষে সংরক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণ না করা। সংস্থায় দক্ষ জনবল না থাকায় প্রকল্প শেষে প্রায় বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সেবা ক্রয়চুক্তি করতে হয়। এ কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এসব বিষয় সমাধানে সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি।

জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা সুপারিশ দেব আর মন্ত্রণালয়গুলো কিছুই ভূমিকা নেবে না, এটা চলতে পারে না। এজন্য এবার বিষয়গুলো যেখানে জানার, সেখানে জানিয়েছি। ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়গুলোকে জবাবদিহির আওতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেমন, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনীর প্রস্তাব এলে আগে সহজেই অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে প্রকল্পগুলোর পেছনে পিডি ও মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দায় কতটুকু ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হলে মেয়াদ বাড়ে, আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সূত্র জানায়, গত বছরের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রতিবেদনে ২৬টি চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ দেয় আইএমইডি। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনেও একই ধরনের ২৬টি চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যায়নে ১৮টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছিল সংস্থাটি। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল্যায়নে ছিল ১৫টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ছিল ১৯টি চ্যালেঞ্জ। ঘুরেফিরে একই চ্যালেঞ্জই এসেছে এসব প্রতিবেদনে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন