ঝড় মৌসুমে উপকূলে ছোট নৌযানে শঙ্কা
jugantor
চার বছর ধরে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ
ঝড় মৌসুমে উপকূলে ছোট নৌযানে শঙ্কা

  সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল  

১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নদীপথে ১৫ মার্চ থেকে ঝড় (ডেঞ্জার) মৌসুম শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত আগামী সাত মাস উপকূলে ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকা ভোলা, পটুয়াখালীতে ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌযান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে ঝড়সহ প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলের হাজারো যাত্রী। ভয়াবহ দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অশান্ত (ঝড়) মৌসুমে উপকূলের নদীগুলোর তিন হাজার কিলোমিটার পথে বে-ক্রসিং সনদ (সমুদ্রে চলাচলযোগ্য নৌযান) ছাড়া অন্য কোনো লঞ্চ বা নৌযান চলাচল করতে পারবে না। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেই। এ মৌসুমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন সি-ট্রাক চলাচলের কথা। কিন্তু চার বছর ধরে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ। এ কারণে এসব রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। বাধ্য হয়ে তারা অবৈধ ছোট নৌযানে চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ঝড় মৌসুমে স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু বরিশাল নগরীসংলগ্ন ডিসিঘাট এবং লাহারহাট থেকে কয়েকশ স্পিডবোট অবৈধভাবে চলাচল করে। মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ ছুটছে স্পিডবোট। সূত্র জানায়, চার বছর ধরে ঝড় মৌসুমে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এ রুটে না রেখে সি-ট্রাকগুলো লাভজনক রুটে রাখা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো অচল হয়ে ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। এ মৌসুমে দুর্ঘটনা এড়াতে বিআইডব্লিউটিএ’র তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেই। বরিশাল-ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটের সি-ট্রাক খিজির-৮ অনেক আগে থেকেই ডকইয়ার্ডে। এ কারণে এ রুটে আর সি-ট্রাক চলছে না। ইলিশা মজু চৌধুরীর হাটে খিজির-৫ চলাচলের কথা থাকলেও শিগগিরই চলবে কিনা তার কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। মনপুরা-শশীগঞ্জ রুটে সি-ট্রাক শেখ কামাল চলাচল করার কথা থাকলেও তা মিলছে না।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী না হওয়ায় বরিশাল-ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটের সি-ট্রাক খিজির-৮ চলাচল বন্ধ। আগে ঝড় মৌসুমে বরিশাল থেকে সি-ট্রাক চলত। কিন্তু চার বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ-বরিশাল থেকে সি-ট্রাক খিজির-৮ বন্ধ করার নেপথ্যে রয়েছেন বেসরকারি নৌযান মালিকরা। সি-ট্রাক বন্ধ করে সেখানে কয়েকটি ট্রলার ও স্পিডবোট চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিসি ও লঞ্চ মালিকদের গোপন আঁতাতে সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ।

হিজলা উপজেলার বাউশিয়া থেকে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত মেহেন্দিগঞ্জের লালখারাবাদ ও দাতপুর চলাচল করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এছাড়া হিজলার হরিনাথপুর থেকে ট্রলারযোগে মেঘনা পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের ঘোসাইরহাটসংলগ্ন আবুপুরে পৌঁছায় ট্রলার। একইভাবে উপকূলীয় এলাকা ভোলার মনপুরার সাকুচিয়া জনতা ঘাট থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়ায় ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আকৃতির লঞ্চ চলাচল করে। মনপুরার রিজিরখান থেকে নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত ছোট লঞ্চ চলাচল করে।

লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য স্বপন খান বলেন, এ অশান্ত মৌসুমে লঞ্চ চালালে মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু অবৈধ ছোট নৌযান চলাচল করলেও দেখার কেউ নেই। এসব নৌযানে দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায় নেবে? এ ব্যাপারে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, অশান্ত এ মৌসুমে ১৫ মার্চ থেকে সাত মাস এমভি শ্রেণির ছোট লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ। সমুদ্র নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকায় নিয়ম অনুযায়ী বে-ক্রসিং সনদযুক্ত সি-ট্রাক চলবে। ডেঞ্জার মৌসুমে উত্তাল মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে চলাচলকারী অবৈধ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি বরিশালের সহ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) কেএম এমরান খান বলেন, বরিশালে চার বছর ধরে সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অশান্ত মৌসুমে যাত্রী পরিবহণের জন্য কিছু বেসরকারি নৌযানকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

চার বছর ধরে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ

ঝড় মৌসুমে উপকূলে ছোট নৌযানে শঙ্কা

 সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল 
১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নদীপথে ১৫ মার্চ থেকে ঝড় (ডেঞ্জার) মৌসুম শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত আগামী সাত মাস উপকূলে ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকা ভোলা, পটুয়াখালীতে ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌযান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে ঝড়সহ প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলের হাজারো যাত্রী। ভয়াবহ দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অশান্ত (ঝড়) মৌসুমে উপকূলের নদীগুলোর তিন হাজার কিলোমিটার পথে বে-ক্রসিং সনদ (সমুদ্রে চলাচলযোগ্য নৌযান) ছাড়া অন্য কোনো লঞ্চ বা নৌযান চলাচল করতে পারবে না। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেই। এ মৌসুমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন সি-ট্রাক চলাচলের কথা। কিন্তু চার বছর ধরে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ। এ কারণে এসব রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। বাধ্য হয়ে তারা অবৈধ ছোট নৌযানে চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ঝড় মৌসুমে স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু বরিশাল নগরীসংলগ্ন ডিসিঘাট এবং লাহারহাট থেকে কয়েকশ স্পিডবোট অবৈধভাবে চলাচল করে। মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ ছুটছে স্পিডবোট। সূত্র জানায়, চার বছর ধরে ঝড় মৌসুমে সি-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এ রুটে না রেখে সি-ট্রাকগুলো লাভজনক রুটে রাখা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো অচল হয়ে ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। এ মৌসুমে দুর্ঘটনা এড়াতে বিআইডব্লিউটিএ’র তেমন কোনো প্রস্তুতিও নেই। বরিশাল-ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটের সি-ট্রাক খিজির-৮ অনেক আগে থেকেই ডকইয়ার্ডে। এ কারণে এ রুটে আর সি-ট্রাক চলছে না। ইলিশা মজু চৌধুরীর হাটে খিজির-৫ চলাচলের কথা থাকলেও শিগগিরই চলবে কিনা তার কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। মনপুরা-শশীগঞ্জ রুটে সি-ট্রাক শেখ কামাল চলাচল করার কথা থাকলেও তা মিলছে না।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী না হওয়ায় বরিশাল-ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটের সি-ট্রাক খিজির-৮ চলাচল বন্ধ। আগে ঝড় মৌসুমে বরিশাল থেকে সি-ট্রাক চলত। কিন্তু চার বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ-বরিশাল থেকে সি-ট্রাক খিজির-৮ বন্ধ করার নেপথ্যে রয়েছেন বেসরকারি নৌযান মালিকরা। সি-ট্রাক বন্ধ করে সেখানে কয়েকটি ট্রলার ও স্পিডবোট চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিসি ও লঞ্চ মালিকদের গোপন আঁতাতে সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ।

হিজলা উপজেলার বাউশিয়া থেকে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত মেহেন্দিগঞ্জের লালখারাবাদ ও দাতপুর চলাচল করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এছাড়া হিজলার হরিনাথপুর থেকে ট্রলারযোগে মেঘনা পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের ঘোসাইরহাটসংলগ্ন আবুপুরে পৌঁছায় ট্রলার। একইভাবে উপকূলীয় এলাকা ভোলার মনপুরার সাকুচিয়া জনতা ঘাট থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়ায় ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আকৃতির লঞ্চ চলাচল করে। মনপুরার রিজিরখান থেকে নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত ছোট লঞ্চ চলাচল করে।

লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য স্বপন খান বলেন, এ অশান্ত মৌসুমে লঞ্চ চালালে মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু অবৈধ ছোট নৌযান চলাচল করলেও দেখার কেউ নেই। এসব নৌযানে দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায় নেবে? এ ব্যাপারে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, অশান্ত এ মৌসুমে ১৫ মার্চ থেকে সাত মাস এমভি শ্রেণির ছোট লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ। সমুদ্র নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকায় নিয়ম অনুযায়ী বে-ক্রসিং সনদযুক্ত সি-ট্রাক চলবে। ডেঞ্জার মৌসুমে উত্তাল মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে চলাচলকারী অবৈধ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি বরিশালের সহ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) কেএম এমরান খান বলেন, বরিশালে চার বছর ধরে সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অশান্ত মৌসুমে যাত্রী পরিবহণের জন্য কিছু বেসরকারি নৌযানকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন