পাঁচ বছরে শতকোটি টাকার মালিক দুমকির মুরগি বাবু!
জমি জবরদখলের অভিযোগ
দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার নতুন বাজার এলাকার মাসুদ আল মামুন নামে এক যুবক। এলাকায় তিনি মুরগি বাবু নামে পরিচিত। কারণ, কয়েক বছর আগেও এলাকার বাজারে তিনি পোলট্রি মুরগি বিক্রি করতেন। রাতারাতি তার শতকোটি টাকার মালিক হওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। টাকার জোরে এই যুবক এখন বেপরোয়া। স্থানীয়দের জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমন একজন কলেজ অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন। মুরগি বাবু তার জমি জবরদখল করেছেন বলে থানায় লখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, উপজেলা শহরের নতুনবাজার এলাকায় দুমকি-বাউফল মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে মমতাজ বেগম, তার দুই ছেলে কলেজ অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন, অধ্যক্ষ জামাল হোসেন এবং দুই মেয়ে মর্জিনা ও হেলেনা বেগমের যৌথ মালিকানায় জমিসহ ৭টি দোকানঘর রয়েছে। এগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জলিশা গ্রামের মুরগি বাবু (বর্তমানে ফেয়ার ইউনাইটেড গ্রুপের এমডি) গোপনে মমতাজ বেগমের এক মেয়ের ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। বিষয়টি জানাজানির পর অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন পটুয়াখালী বিজ্ঞ আদালতে একটি রিডাকশন মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবু ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং ওই দোকানগুলোর সামনের শাটার বন্ধ রেখে পেছনের দেওয়াল ভেঙে ফেলেন। এরপর রাতারাতি বাউন্ডারি ওয়াল ও রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এই কাজে বাধা দিতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন ও তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ কারণে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন দুমকি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর পুলিশ সরেজমিন তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ করতে বলে। কিন্তু তাও মানছেন না বাবু। পুলিশ চলে যাওয়ার পর ফের পুরোদমে কাজ করছেন। অভিযোগে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, প্রভাবশালী মুরগি বাবু কালোটাকার মালিক। অবৈধ অর্থের জোরে আমাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক গ্রাস করার অপচেষ্টা করছে। বাবু একসময় উপজেলা ছাত্রদলের নেতা ছিল। এই লোক মুরগির ব্যবসা ছেড়ে ৫ বছরের ব্যবধানে ঢাকায় গিয়ে কী করে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হলো, তা বোধগম্য নয়। এত টাকার উৎস খুঁজে বের করার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মমতাজ বেগমের মেয়ের ৬ শতাংশ জমি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন বাবু। এছাড়া মমতাজ বেগমের ওই মেয়ের কাছ থেকে বাবু আরও কিছু জমি কিনেছেন; যার মূল্য ৬২ লাখ টাকা। গত কয়েক বছরে বাবু ওই এলাকায় শতকোটি টাকার জমি কিনেছেন। ঢাকায়ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে ব্যক্তি পাঁচ বছর আগেও বাজারে মুরগি বিক্রি করতেন; কী করে এত কম সময়ে তিনি এত টাকার মালিক হলেন, সেই প্রশ্নই এখন এলাকাবাসীর।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবু বলেন, এখানে জবরদখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বৈধ অর্থে জমি কিনেছি। নগদ টাকা নিয়ে কবলা দলিলে সম্পত্তি বিক্রির পর এখন অংশীদাররা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের জবাবে বলেন, আদালতে মামলা বা নিষেধাজ্ঞার কোনো নোটিশ পাইনি। অমান্যের অভিযোগ সঠিক নয়। আমার কত টাকা হয়েছে, তা দেখার জন্য অনেক দপ্তর রয়েছে, এ নিয়ে তার চিন্তা না করলেও চলবে।
দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জমি জবরদখলের অভিযোগ
পাঁচ বছরে শতকোটি টাকার মালিক দুমকির মুরগি বাবু!
মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার নতুন বাজার এলাকার মাসুদ আল মামুন নামে এক যুবক। এলাকায় তিনি মুরগি বাবু নামে পরিচিত। কারণ, কয়েক বছর আগেও এলাকার বাজারে তিনি পোলট্রি মুরগি বিক্রি করতেন। রাতারাতি তার শতকোটি টাকার মালিক হওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। টাকার জোরে এই যুবক এখন বেপরোয়া। স্থানীয়দের জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমন একজন কলেজ অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন। মুরগি বাবু তার জমি জবরদখল করেছেন বলে থানায় লখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, উপজেলা শহরের নতুনবাজার এলাকায় দুমকি-বাউফল মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে মমতাজ বেগম, তার দুই ছেলে কলেজ অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন, অধ্যক্ষ জামাল হোসেন এবং দুই মেয়ে মর্জিনা ও হেলেনা বেগমের যৌথ মালিকানায় জমিসহ ৭টি দোকানঘর রয়েছে। এগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জলিশা গ্রামের মুরগি বাবু (বর্তমানে ফেয়ার ইউনাইটেড গ্রুপের এমডি) গোপনে মমতাজ বেগমের এক মেয়ের ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। বিষয়টি জানাজানির পর অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন পটুয়াখালী বিজ্ঞ আদালতে একটি রিডাকশন মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবু ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং ওই দোকানগুলোর সামনের শাটার বন্ধ রেখে পেছনের দেওয়াল ভেঙে ফেলেন। এরপর রাতারাতি বাউন্ডারি ওয়াল ও রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এই কাজে বাধা দিতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন ও তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ কারণে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন সুমন দুমকি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর পুলিশ সরেজমিন তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ করতে বলে। কিন্তু তাও মানছেন না বাবু। পুলিশ চলে যাওয়ার পর ফের পুরোদমে কাজ করছেন। অভিযোগে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, প্রভাবশালী মুরগি বাবু কালোটাকার মালিক। অবৈধ অর্থের জোরে আমাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক গ্রাস করার অপচেষ্টা করছে। বাবু একসময় উপজেলা ছাত্রদলের নেতা ছিল। এই লোক মুরগির ব্যবসা ছেড়ে ৫ বছরের ব্যবধানে ঢাকায় গিয়ে কী করে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হলো, তা বোধগম্য নয়। এত টাকার উৎস খুঁজে বের করার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মমতাজ বেগমের মেয়ের ৬ শতাংশ জমি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন বাবু। এছাড়া মমতাজ বেগমের ওই মেয়ের কাছ থেকে বাবু আরও কিছু জমি কিনেছেন; যার মূল্য ৬২ লাখ টাকা। গত কয়েক বছরে বাবু ওই এলাকায় শতকোটি টাকার জমি কিনেছেন। ঢাকায়ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে ব্যক্তি পাঁচ বছর আগেও বাজারে মুরগি বিক্রি করতেন; কী করে এত কম সময়ে তিনি এত টাকার মালিক হলেন, সেই প্রশ্নই এখন এলাকাবাসীর।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবু বলেন, এখানে জবরদখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বৈধ অর্থে জমি কিনেছি। নগদ টাকা নিয়ে কবলা দলিলে সম্পত্তি বিক্রির পর এখন অংশীদাররা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের জবাবে বলেন, আদালতে মামলা বা নিষেধাজ্ঞার কোনো নোটিশ পাইনি। অমান্যের অভিযোগ সঠিক নয়। আমার কত টাকা হয়েছে, তা দেখার জন্য অনেক দপ্তর রয়েছে, এ নিয়ে তার চিন্তা না করলেও চলবে।
দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।