দৈন্যদশায় রংপুরের ৫০ হাজার পরিবার
প্রমত্তা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর
মাহবুব রহমান, রংপুর
২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রমত্তা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর। তিস্তার দৈন্যদশায় রংপুরের ৫০ হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নদী ঘিরে যে জীববৈচিত্র্য, সেটাও এখন হুমকির মুখে। তিস্তার তীরে গড়ে ওঠা কৃষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের মাঝে তীব্র আর্থিক সংকট বিরাজ করছে। কর্মহীন এই জনগোষ্ঠী নতুন করে বাস্তুহীন ও অতি দরিদ্র হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
‘রিভারাইন পিপলস’র পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার এই পরিণতির জন্য ভারত দায়ী। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মানবতা ও সভ্যতাবর্জিত চিন্তা থেকে এক তরফা পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক লাখ হেক্টর জমিতে তারা চাষাবাদের জন্য তিস্তার উজানে নতুন খাল খনন করছে। এতে তিস্তা, ধরলাসহ আরও কয়েকটি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি হারাবে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক। তিনি আরও বলেন, তিস্তার তলদেশ পানিশূন্য হয়ে পড়ায় হুমকিতে পড়বে জল ও স্থলের জীবনচক্র। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট এখন বন্ধ। যতটুকু পানি মিলছে তার বেশির ভাগই সেচকাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে তিস্তার ভাটি এলাকায় পানি নেই। তিস্তা পারের লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাঁধে আশ্রিত আবুজার হোসেন, জয়নাল শেখসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে তারা নদীতে মাছ ধরে, নৌকায় নদী পারাপার করে হাজার পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করত। এখন সবাই এখন কর্মহীন। নদীতে পানি নেই, মাছ নেই। আগের সেই তিস্তার চেনা রূপ এখন অচেনা। এই পরিস্থিতির কারণে নদীর তীরে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, শুকিয়ে যাওয়া নদীর মাঝে একটি ছাউনিতে জাল ও পাতিল নিয়ে অপেক্ষায় কয়েক জেলে। তারা মাছ ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ পাচ্ছেন না তারা। তাদের একমাত্র জীবিকা মৎস্য শিকার। কিন্তু মাছ জালে না ওঠায় তাদের সংসারে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলেরা বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় আমরা মাছ ধরতে পারছি না। এজন্য বালুচরেই বসে আছি। আর যেটুকু মাছ ধরা যায়, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতে পারি না। আগের মতো আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না তিস্তায়। এছাড়া তিস্তায় নতুন আতঙ্ক আইপিএস ও কারেন্ট জাল। নদীতে পানির নাব্য কম থাকায় এ জাল পাতার সুবিধা হয়। জেলেদের অভিযোগ, উজানে পানি এলে একটি চক্র অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে। এতে মাছের পোনার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক লাখ মানুষ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। তবে জীবন-জীবিকার জন্য সরাসরি তিস্তা থেকে সুবিধাভোগী দুই থেকে আড়াই লাখ জেলে ও মাঝি পরিবার। এছাড়া রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার এক কোটির বেশি কৃষক এই নদীর পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করেন। এ তথ্য জানিয়েছেন, রিভারাইন পিপলস’র পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’র সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না হলে এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ বেকার হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর ৫০ হাজারের বেশি পরিবার বাস্তুহারা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
দৈন্যদশায় রংপুরের ৫০ হাজার পরিবার
প্রমত্তা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর
প্রমত্তা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর। তিস্তার দৈন্যদশায় রংপুরের ৫০ হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নদী ঘিরে যে জীববৈচিত্র্য, সেটাও এখন হুমকির মুখে। তিস্তার তীরে গড়ে ওঠা কৃষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের মাঝে তীব্র আর্থিক সংকট বিরাজ করছে। কর্মহীন এই জনগোষ্ঠী নতুন করে বাস্তুহীন ও অতি দরিদ্র হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
‘রিভারাইন পিপলস’র পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার এই পরিণতির জন্য ভারত দায়ী। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মানবতা ও সভ্যতাবর্জিত চিন্তা থেকে এক তরফা পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক লাখ হেক্টর জমিতে তারা চাষাবাদের জন্য তিস্তার উজানে নতুন খাল খনন করছে। এতে তিস্তা, ধরলাসহ আরও কয়েকটি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি হারাবে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক। তিনি আরও বলেন, তিস্তার তলদেশ পানিশূন্য হয়ে পড়ায় হুমকিতে পড়বে জল ও স্থলের জীবনচক্র। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট এখন বন্ধ। যতটুকু পানি মিলছে তার বেশির ভাগই সেচকাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে তিস্তার ভাটি এলাকায় পানি নেই। তিস্তা পারের লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাঁধে আশ্রিত আবুজার হোসেন, জয়নাল শেখসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে তারা নদীতে মাছ ধরে, নৌকায় নদী পারাপার করে হাজার পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করত। এখন সবাই এখন কর্মহীন। নদীতে পানি নেই, মাছ নেই। আগের সেই তিস্তার চেনা রূপ এখন অচেনা। এই পরিস্থিতির কারণে নদীর তীরে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, শুকিয়ে যাওয়া নদীর মাঝে একটি ছাউনিতে জাল ও পাতিল নিয়ে অপেক্ষায় কয়েক জেলে। তারা মাছ ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ পাচ্ছেন না তারা। তাদের একমাত্র জীবিকা মৎস্য শিকার। কিন্তু মাছ জালে না ওঠায় তাদের সংসারে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলেরা বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় আমরা মাছ ধরতে পারছি না। এজন্য বালুচরেই বসে আছি। আর যেটুকু মাছ ধরা যায়, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতে পারি না। আগের মতো আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না তিস্তায়। এছাড়া তিস্তায় নতুন আতঙ্ক আইপিএস ও কারেন্ট জাল। নদীতে পানির নাব্য কম থাকায় এ জাল পাতার সুবিধা হয়। জেলেদের অভিযোগ, উজানে পানি এলে একটি চক্র অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে। এতে মাছের পোনার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক লাখ মানুষ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। তবে জীবন-জীবিকার জন্য সরাসরি তিস্তা থেকে সুবিধাভোগী দুই থেকে আড়াই লাখ জেলে ও মাঝি পরিবার। এছাড়া রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার এক কোটির বেশি কৃষক এই নদীর পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করেন। এ তথ্য জানিয়েছেন, রিভারাইন পিপলস’র পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’র সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না হলে এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ বেকার হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর ৫০ হাজারের বেশি পরিবার বাস্তুহারা হবে।