ভ্রাম্যমাণ আদালতে একজনকে সাজা জেলে অন্যজন
করতোয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ
বগুড়া ব্যুরো
২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বগুড়ায় করতোয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সোমবার এ সাজা দেন। কিন্তু সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে রায় পরিবর্তন করে মম ইন ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জাকিকে দায়ী করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে জনগণ খুশি হলেও পরে রায় পরিবর্তন করে অন্যজনকে জেলে পাঠানোর ঘটনায় নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইউএনও এ ঘটনাকে সঠিক বললেও আইনজীবীরা বলছেন, অন্যায় ও আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ।
আদালত সূত্র জানায়, বগুড়া সদর উপজেলার নওদাপাড়া এলাকায় মম ইন ইকোপার্কের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ, নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ পেয়ে সদরের ইউএনও ফিরোজা পারভীন শনিবার ওই পার্কে অভিযান চালান। এ সময় টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম ঘটনাস্থলে এসে দাবি করেন, ভরাট করা জায়গাটি তার। আর এলাকাবাসীরা পারাপারের স্বার্থে করতোয়া নদীতে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। পরে তিনি আদালতকে মুচলেকা দেন যে, জায়গাটি মাপজোখ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। ইউএনও আবারও সোমবার ঘটনাস্থলে যান। এ সময় এলাকাবাসীরা সাক্ষ্য দেন যে, তারা নয়; রাস্তাটি টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম নির্মাণ করছেন। ফোনে হোসনে আরা বেগম দাবি করেন, বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে আবর্জনা ফেলছেন। উত্তরে মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালকের ইচ্ছা অনুসারে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
এদিকে মুচলেকা দেওয়ার পরও আর্বজনা ও মাটি ফেলা অব্যাহত রাখায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীনের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিএমএসএসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এদিকে সন্ধ্যায় টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ড. হোসনে আরা মম ইন ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জাকিকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে যান। তিনি রায় পরিবর্তনের জন্য আলোচনা করেন। এ সময় নজিবর রহমানকে পরিবর্তন করে জাকিকে আসামি করা হয়।
বগুড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির সিনিয়র সদস্য আবদুল লতিফ ববি বলেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সেখানে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই শাস্তি দেওয়া হবে। পরে রায় পরিবর্তন করে অন্য কাউকে সাজা দেওয়ার সুযোগ নেই। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত পিপি নাসিম আহমেদ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন জানান, ঘটনাস্থলে সবাই তথ্য দিয়েছিলেন নজিবর রহমান দায়ী। তাই তাকে জরিমানা অনাদায়ে জেল দেওয়া হয়েছিল। পরে জানা যায়, এর সঙ্গে ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জড়িত। তাই তাকে আসামি ও জরিমানা না দেওয়ায় জেলে পাঠানো হয়েছে। এতে আইনগত কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
করতোয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ
ভ্রাম্যমাণ আদালতে একজনকে সাজা জেলে অন্যজন
বগুড়ায় করতোয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সোমবার এ সাজা দেন। কিন্তু সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে রায় পরিবর্তন করে মম ইন ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জাকিকে দায়ী করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে জনগণ খুশি হলেও পরে রায় পরিবর্তন করে অন্যজনকে জেলে পাঠানোর ঘটনায় নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইউএনও এ ঘটনাকে সঠিক বললেও আইনজীবীরা বলছেন, অন্যায় ও আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ।
আদালত সূত্র জানায়, বগুড়া সদর উপজেলার নওদাপাড়া এলাকায় মম ইন ইকোপার্কের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ, নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ পেয়ে সদরের ইউএনও ফিরোজা পারভীন শনিবার ওই পার্কে অভিযান চালান। এ সময় টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম ঘটনাস্থলে এসে দাবি করেন, ভরাট করা জায়গাটি তার। আর এলাকাবাসীরা পারাপারের স্বার্থে করতোয়া নদীতে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। পরে তিনি আদালতকে মুচলেকা দেন যে, জায়গাটি মাপজোখ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। ইউএনও আবারও সোমবার ঘটনাস্থলে যান। এ সময় এলাকাবাসীরা সাক্ষ্য দেন যে, তারা নয়; রাস্তাটি টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম নির্মাণ করছেন। ফোনে হোসনে আরা বেগম দাবি করেন, বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে আবর্জনা ফেলছেন। উত্তরে মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালকের ইচ্ছা অনুসারে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
এদিকে মুচলেকা দেওয়ার পরও আর্বজনা ও মাটি ফেলা অব্যাহত রাখায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীনের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিএমএসএসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এদিকে সন্ধ্যায় টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ড. হোসনে আরা মম ইন ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জাকিকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে যান। তিনি রায় পরিবর্তনের জন্য আলোচনা করেন। এ সময় নজিবর রহমানকে পরিবর্তন করে জাকিকে আসামি করা হয়।
বগুড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির সিনিয়র সদস্য আবদুল লতিফ ববি বলেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সেখানে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই শাস্তি দেওয়া হবে। পরে রায় পরিবর্তন করে অন্য কাউকে সাজা দেওয়ার সুযোগ নেই। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত পিপি নাসিম আহমেদ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন জানান, ঘটনাস্থলে সবাই তথ্য দিয়েছিলেন নজিবর রহমান দায়ী। তাই তাকে জরিমানা অনাদায়ে জেল দেওয়া হয়েছিল। পরে জানা যায়, এর সঙ্গে ইকোপার্কের ব্যবস্থাপক জাকিরুল ইসলাম জড়িত। তাই তাকে আসামি ও জরিমানা না দেওয়ায় জেলে পাঠানো হয়েছে। এতে আইনগত কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি।