রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
সময় পার হলেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন
স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল সাত কার্যদিবস। হিসাব অনুযায়ী বুধবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ানো না হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে এখনো দু-একদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এখনো সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তারা।
এর আগে, ১১ মার্চ বাসের সিটে বসাকে কেন্দ করে বাসের কন্ডাক্টরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রের তর্কাতর্কি থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর পুলিশবক্সসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর তারিকুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রশিদ সরকার ও সিন্ডিকেট সদস্য শফিকুজ্জামান জোয়ার্দ্দার।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার সাক্ষাৎকার নিলেও ঘটনার সূত্রপাত যে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ বণিকের কোনো সাক্ষাৎকার এখনো নেয়নি। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতিরও।
বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল, কিন্তু তারা বসেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের বিভাগের কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিদিন দুবার বসে তদন্তের কাজ করছি। তা ছাড়া, ঘটনাটির অনেক পক্ষ রয়েছে। আমরা এখনো সব পক্ষের বক্তব্য নিয়ে শেষ করতে পারিনি। এজন্য প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারিনি।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিটির অন্যতম এ সদস্য বলেন, সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ওইভাবে আমরা আবেদন করিনি। আমাদের আহ্বায়ক বিষয়টি জানেন। আমি যতটুকু জানি, তিনি আরও দু-একদিন সময় লাগতে পারে বলে কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আসলে সাত দিন সময় আমাদের জন্য কিছুটা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, তারা শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন। মূলত ঘটনাটির পরিসর বড় হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে এ ধরনের তদন্ত ‘আইওয়াশ’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি একটি ‘আইওয়াশ’। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার জন্য কিছু কথাবার্তা বলতে হয়। তদন্ত কমিটিও সেরকমই একটি ব্যাপার আর কী। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্টরা হয়তোবা প্রত্যাশা করেন, এক সপ্তাহ বা এক মাস যেতে যেতে মানুষ ঘটনাটির কথা ভুলে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষজন ভুলেও যায়। এ ছাড়া আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্টরাও হয়তোবা ভুলে যান, তারা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। সম্প্রতি সংঘটিত এতবড় একটি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জানার অধিকার আমাদের সবারই আছে।
সময় পার হলেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
রাবি প্রতিনিধি
২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল সাত কার্যদিবস। হিসাব অনুযায়ী বুধবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ানো না হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে এখনো দু-একদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এখনো সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তারা।
এর আগে, ১১ মার্চ বাসের সিটে বসাকে কেন্দ করে বাসের কন্ডাক্টরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রের তর্কাতর্কি থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর পুলিশবক্সসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর তারিকুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রশিদ সরকার ও সিন্ডিকেট সদস্য শফিকুজ্জামান জোয়ার্দ্দার।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার সাক্ষাৎকার নিলেও ঘটনার সূত্রপাত যে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ বণিকের কোনো সাক্ষাৎকার এখনো নেয়নি। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতিরও।
বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল, কিন্তু তারা বসেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের বিভাগের কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিদিন দুবার বসে তদন্তের কাজ করছি। তা ছাড়া, ঘটনাটির অনেক পক্ষ রয়েছে। আমরা এখনো সব পক্ষের বক্তব্য নিয়ে শেষ করতে পারিনি। এজন্য প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারিনি।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিটির অন্যতম এ সদস্য বলেন, সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ওইভাবে আমরা আবেদন করিনি। আমাদের আহ্বায়ক বিষয়টি জানেন। আমি যতটুকু জানি, তিনি আরও দু-একদিন সময় লাগতে পারে বলে কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আসলে সাত দিন সময় আমাদের জন্য কিছুটা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, তারা শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন। মূলত ঘটনাটির পরিসর বড় হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে এ ধরনের তদন্ত ‘আইওয়াশ’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি একটি ‘আইওয়াশ’। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার জন্য কিছু কথাবার্তা বলতে হয়। তদন্ত কমিটিও সেরকমই একটি ব্যাপার আর কী। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্টরা হয়তোবা প্রত্যাশা করেন, এক সপ্তাহ বা এক মাস যেতে যেতে মানুষ ঘটনাটির কথা ভুলে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষজন ভুলেও যায়। এ ছাড়া আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্টরাও হয়তোবা ভুলে যান, তারা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। সম্প্রতি সংঘটিত এতবড় একটি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জানার অধিকার আমাদের সবারই আছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023