কারও চাওয়ায় নয় যৌক্তিক কারণে সীমানা পরিবর্তন: ইসি আলমগীর

কুমিল্লার দুটি সংসদীয় আসন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
 যুগান্তর প্রতিবেদন 
০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সংসদ-সদস্য বা বিশেষ ব্যক্তির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়নি বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা কমিশন জানে না। জমা হওয়া যেসব আবেদন যৌক্তিক মনে হয়েছে সেই অনুযায়ী নতুন সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং স্থানীয় ভোটার-জনসাধারণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তব্য আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোববার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে মো. আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি সংসদীয় আসন সীমানা পরিবর্তনসংক্রান্ত ইসির কমিটির প্রধান।

এর আগে শনিবার তিনশ সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, পিরোজপুর-১ ও ২, গাজীপুর ২ ও ৫, ফরিদপুর ২ ও ৪, কুমিল্লা ১ ও ২ এবং নোয়াখালী ১ ও ২ আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন। ওই সীমানা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আসন্ন নির্বাচনে কাউকে সুবিধা দেওয়া বা অসুবিধায় ফেলার জন্য এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নই আসে না। আমরা তো জানিই না আগামী নির্বাচনে কে কে প্রার্থী হবেন। আইনে যেভাবে বলা আছে, সেটা অনুসরণ করে সীমানা চূড়ান্ত করেছি। এর বাইরে কাউকে দেখার বা তাকানোর সুযোগ নেই। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমানা পরিবর্তনের যেসব আবেদন যৌক্তিক মনে হয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনকে লজিক্যাল কাজ করার ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে, আইন দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী কাজ করেছে।

সংসদ-সদস্যদের চাওয়া অনুযায়ী সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও দুই আসনের সংসদ-সদস্য সীমানা পরিবর্তন চেয়েছেন। তাদের চাওয়া আমাদের কাছে লজিক্যাল মনে না হওয়ায় সেখানে সীমানা পরিবর্তন করিনি। আবার কোথাও হয়তো দুজন সংসদ-সদস্য সীমানা পরিবর্তন চেয়েছেন এবং তাদের চাওয়া আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। দুজন এমপি চেয়েছেন বলেই ওই আসনের সীমানা পরিবর্তন করেছি, তা নয়। তাদের চাওয়া অনুযায়ী সীমানা পরিবর্তন করা হলে ৩৮টি আসনে পরিবর্তন আনতাম। কারণ ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তনে ১২৬টি আবেদন পড়েছে।

এই কমিশনার বলেন, সীমানা নিয়ে কে কী বলেছিলেন সেটা মুখ্য বিষয় ছিল না। আমাদের কাছে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং এলাকার ভোটার ও স্থানীয় জনসাধারণ কী চায়, সেটাই মুখ্য বিষয় ছিল। কারণ কারা নমিনেশন পাবেন সেটা তো আমরা জানি না। সবার জন্য যাতে সমান মাঠ হয়, সেটা চিন্তা করেই আমরা সীমানা নির্ধারণে কাজটি করেছি।

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, যে অভিযোগ করেছেন তার কাছে নিশ্চয়ই প্রমাণ আছে। তাকে সেই প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হবে আদালতে অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনে। প্রমাণের দায়িত্বও তো উনার। অথবা আমাদের কাছেও আনতে পারেন। আমরাও বিষয়টি দেখব।

এ কমিশনার জানান, নির্বাচন কমিশনের চিন্তা-ভাবনা ছিল জাতীয় সংসদের যত কম সংখ্যক আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা। কারণ যত বেশি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়, তত বেশি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

১২ জুন অনুষ্ঠেয় তারাকান্দা পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন ইসিতে এসেছেন। তাদের অভিযোগ পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কমিশনার বলেন, তাদের আমরা দেখিনি। তবে স্থানীয় প্রশাসন, আইজিপিসহ সবাইকে আমরা বলেছি, আইন না মানলে এর জন্য ফল ভোগ করতে হবে। আমরা ঘটনাটা জানার চেষ্টা করব। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

কুমিল্লার দুটি আসন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া : কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-১ এবং হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে ওই দুটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। বিষয়টি নিয়ে মেঘনা উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি এবং তিতাস উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। দাউদকান্দি-মেঘনা উপজেলা নিয়ে চলছিল কুমিল্লা-১ সংসদীয় আসনের কার্যক্রম। আর হোমনা-তিতাস উপজেলা নিয়ে চলছিল কুমিল্লা-২ সংসদীয় আসনের কার্যক্রম। এরই মাঝে মেঘনা উপজেলার বাসিন্দারা কুমিল্লা-১ আসন থেকে কেটে দিয়ে কুমিল্লা-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য জোর দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন গণশুনানি করে। এতে মেঘনা উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ হোমনা আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পক্ষে মত দেন। শনিবার গেজেট প্রকাশ হলে তিতাস উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায়। অনেকে বলেন, হোমনা আসনের সঙ্গে থাকাই তাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। দাউদকান্দির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। অন্যদিকে, হোমনা আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মেঘনা উপজেলার বাসিন্দারা।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন