সৌদি ফেরত ১২ নারীর ভয়াবহ বর্ণনা

‘মাঝে মধ্যে মনে হতো এই বুঝি মরে যাচ্ছি’

রড ও চাবুক দিয়ে আঘাত করত * সম্ভ্রম রক্ষায় প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছে
 যুগান্তর প্রতিবেদন 
০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

‘এলোপাতাড়ি বুকে, পেটে লাথি মারত। লোহার রড দিয়ে আঘাত করত। কখনো চাবুক দিয়ে মারত। কোনো কথা শুনত না। প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের চেষ্টা চলত। বাধা দিলেই বেড়ে যেত নির্যাতনের মাত্রা। ব্যথায় পড়ে গেলে লাথি মারত। গায়ের ওপর উঠে দাঁড়াত। মাঝে মধ্যে মনে হতো, এই বুঝি মারা যাচ্ছি।’ গৃহকর্তার নির্যাতনের এমনই ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন সৌদি আরবে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা ১২ নারীকর্মী। শনিবার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহায়তায় দেশে ফেরেন তারা। বিমানবন্দরে পৌঁছলে এপিবিএন তাদের বিমানবন্দরে রিসিভ করে। পরবর্তী সময়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের খাবার ও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। তারা সৌদি গিয়েছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সি এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মক্কা ইন্টারন্যাশনাল ও হিমেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।

এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ যুগান্তরকে জানান, নির্যাতিত নারীদের কাছ থেকে আমরা ভয়াবহ বর্ণনা শুনেছি। ইচ্ছা করেই আমরা মিডিয়াকে খবর দিইনি। গণমাধ্যমে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ পেলে তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে পারে। এ কারণে নির্যাতনের শিকার নারী ও তাদের কোনো স্বজনের নম্বরও মিডিয়াকে সরবরাহ করছি না।

নির্যাতিত একজনের বরাত দিয়ে এপিবিএনের কর্মকর্তা জানান, ৯ মার্চ সৌদি যান এক নারী। হিমেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাকে সৌদি পাঠায় দালাল তারেক মিয়া। ভাগ্য বদলাতে সৌদি গেলেও তাকে কোনোমতে জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী এপিবিএনকে বলেন, ‘আমি দেশে আমার বাবাকে বলছি আমাকে ফেরত নিয়ে যেতে। বাবা দালালের সাথে যোগাযোগ করলে তারা টাকা দাবি করে। পরে বাবা দালালকে টাকা দিছে।’

এপিবিএন জানায়, নির্যাতিত নারীদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছে নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। সৌদি যাওয়ার পরপরই তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। দিনে ২ বারও ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। একটি শিশু যে পরিমাণ খাবার খায়, তাও দিত না। চাবুকের আঘাতে ক্ষত হয়েছে একজনের শরীর। এপিবিএনকে তিনি বলেন, ‘যে বাসায় কাজ করতাম, তাদের একটা বাচ্চা ছিল। কোনো কারণে বাচ্চা কান্না করলে আমাকে মারত। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে মারত। বোতল দিয়ে আঘাত করত। চাবুক দিয়ে পেটাত।’

ভুক্তভোগী এক নারী জানান, শ্রমিক ভিসায় সৌদি গিয়েছিলেন ১ এপ্রিল। এ ভিসায় বিদেশ যেতে বিএমইটি কার্ড থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তার ছিল না। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে কনট্রাক্ট করে তাকে সৌদি পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি যাবার কিছু দিন পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমাকে একদিন হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে হাসপাতাল থেকে ফেরত আনা হয়।’

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন