রাজশাহী সিটি নির্বাচন

প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছোট করে দেখছেন না লিটন

 আনু মোস্তফা, রাজশাহী 
০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কাছাকাছি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও কোনো প্রার্থীকেই ছোট করে দেখছেন না রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২ জুন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ৭০টিরও বেশি মতবিনিময় সভা করেছেন। ১৯ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর একদিনের জন্যও ঘরোয়া প্রচারণায় বিরতি দেননি তিনি। ২ জুন প্রতীক পেয়েই জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই তিনি পাঁচ-ছয়টি এলাকায় যাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে নিয়ে নিবিড় প্রচারণা ও গণসংযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়নের চমকে বদলে যাওয়া রাজশাহীর কথা বলে লিফলেট ও প্রচারপত্র বিলি করছেন।

এভাবেই নগরীজুড়ে অবিরাম চলছে নৌকা প্রতীকের প্রচারণা। লিটন নিজেই ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইছেন। প্রবীণদের দোয়া নিচ্ছেন। তরুণদের কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনার কথা শোনাচ্ছেন। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও জোর প্রচারণার কারণ জানতে চাইলে লিটন বলেন, আমি কোনো প্রার্থীকেই ছোট করে ভাবছি না। ভোটারদের বলছি, আমরা রাজশাহী নগরীতে পাঁচ বছরে কী করেছি আর নির্বাচিত হলে আরও কী কী করব। আমি আশা করছি, নগরবাসী আমাকে আবার বিপুলভাবে রায় দেবেন। রাজশাহীর মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে। তারা উন্নয়নকেই বেছে নেবেন।

জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি ভোটের অপ্রত্যাশিত ফলাফল ছাড়াও খুলনা ও বরিশালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ার প্রসঙ্গটিও রাজশাহীর ক্ষেত্রে ভাবছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা রাজশাহীতে দলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন এবং ভোট পরিস্থিতির খবরও নিচ্ছেন নিয়মিত। তবে দলের রাজশাহীর নেতারা অন্য দুই সিটি নির্বাচন পরিস্থিতির সঙ্গে রাজশাহীকে এক করে দেখছেন না। এমনকি গাজীপুর পরিস্থিতি রাজশাহীতে হওয়ারও আদৌ কোনো আশঙ্কা নেই বলছেন তারা। লিটনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য রাজশাহী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, রাজশাহীর নির্বাচনি আবহ অন্য তিন সিটির চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। এখানে নৌকার বিজয় নিয়ে আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো সংশয় নেই।

আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অপর প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির লফিত আনোয়ার (গোলাপ ফুল)। চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে লিটন ছাড়া বাকি তিনজনই নতুন মুখ। প্রতীক বরাদ্দের পর সব প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন নগরজুড়ে। তবে প্রচারণা মাঠের পুরোটাই নৌকার প্রার্থী লিটনের দখলে।

রাজশাহীতে ৫ কাউন্সিলর প্রার্থীকে জরিমানা : রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যানার-ফেস্টুন খুলে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ আহমেদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল মঙ্গলবার রাতে নগরীর বহরমপুর এলাকায় অভিযানের সময় নৌকার ব্যানার-ফেস্টুন খুলে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যানার ও ফেস্টুন খুলতে বাধা দেন। আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ করেন। পরে দলের কয়েকজন নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নৌকা প্রতীকের ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ প্রসঙ্গে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা জানান, কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশিত মাপের চেয়ে অধিক মাপের ব্যানার-ফেস্টুন দেওয়া হয়েছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত সেগুলো অপসারণ করেছেন। অতি উৎসাহী কেউ কেউ গুজব রটিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আরও দুটি টিম নগরীতে নির্বাচনি বিধি ভঙ্গের দায়ে পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীকে চার হাজার আটশ টাকা জরিমানা করেন। এদের মধ্যে একাধিক মাইক ব্যবহারের অভিযোগে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমান মতিকে ৫০০ টাকা, অনুমোদনহীন শব্দ যন্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রুহুল আমিনকে ৫০০ টাকা ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শিবলী রহমানকে ৫০০ টাকা, মোটরসাইকেল শোডাউন দেওয়ায় ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মোমিনকে ৩০০ টাকা, সড়ক বন্ধ করে প্রচারসভা করায় ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জেসমিন সুলতানাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রাজশাহীর এডিএম সাবিহা সুলতানা আরও বলেন, এখন থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন