রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনের কথা কাল

পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে চরফ্যাশন জ্যাকব টাওয়ার

'স্বাধীনতা জাদুঘর'ও উদ্বোধন করা হবে
 আকতার ফারুক শাহিন ও অমিতাভ অপু, চরফ্যাশন থেকে 
১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দ্বীপজেলা খ্যাত ভোলার চরফ্যাশনে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘জ্যাকব টাওয়ার’, যা এরই মধ্যে ‘বাংলার আইফেল টাওয়ার’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২১ তলা ভবনের সমান উচ্চতার এ টাওয়ার দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে ভ্রমণপিপাসুদের প্রত্যাশা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কাল এটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুসহ দক্ষিণাঞ্চলের এমপিরা। এদিকে রাষ্ট্রপতি তার ভোলা সফরসূচির অংশ হিসেবে পরদিন (বুধবার) সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের উদ্যোগে নির্মিত ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ও উদ্বোধন করবেন।

আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত জ্যাকব টাওয়ারে পর্যটক আকর্ষণের সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। টাওয়ারের শীর্ষে দাঁড়িয়ে বাইনোকুলারে চোখ রাখতেই দেখা মিলবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল চর কুকরি-মুকরির নয়নাভিরাম সবুজের সারি। মনে হবে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় ঘন বনজঙ্গল। ডানে-বামে চোখ ফেরাতে ভেসে উঠে তারুয়া সৈকত, স্বপ্নদ্বীপ মনপুরার চর পিয়াল, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ আর বঙ্গোপসাগরের বিশাল নীল জলরাশি। চোখ বন্ধ করে কান পাতলেই শোনা যাবে ঢেউয়ের গর্জন। এভাবে চোখের সামনে উঠে আসবে চারপাশের প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। প্রায় ২২৫ ফুট উঁচুতে অবস্থান করে মনে হবে মেঘের ভেলায় ভাসছি, হাত বাড়ালেই পেঁজা তুলোর মতো মেঘ যেন ছোঁয়া যায়।

জেলা শহর ভোলা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে সাগরকোল ঘেঁষে উপজেলা শহর চরফ্যাশনে নির্মিত এ টাওয়ার উদ্বোধনের মাধ্যমে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে বলে আশা করছেন সবাই।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। টানা ৫ বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞের ফসল এটি। বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের একান্ত চেষ্টা ও শ্রমে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ‘বাংলার আইফেল টাওয়ার’ পরিচিতি পাওয়া এই স্থাপনা। প্রথমদিকে এর নাম জ্যাকব টাওয়ার ছিল না। গত বছরের ১৮ মে নির্মাণাধীন টাওয়ার পরিদর্শনে যান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নির্মাণশৈলী আর নান্দনিক সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে তিনি এর নাম দেন ‘জ্যাকব টাওয়ার’। উপমন্ত্রী জ্যাকব ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তুলেছেন তার নির্বাচনী এলাকা চরফ্যাশন এবং মনপুরা উপজেলাকে। চরফ্যাশনের চর কুকরি-মুকরির ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এরই মধ্যে অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে পর্যটকদের কাছে।

প্রায় ১ একর জমিতে এ টাওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চরফ্যাশন পৌরসভা। ২২৫ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটির ডিজাইন করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। মাটির ৭৫ ফুট নিচ থেকে ঢালাই-পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর সম্পূর্ণ ইস্পাত নির্মিত এ টাওয়ার ৮ মাত্রার ভূমিকম্পন সহনীয়। ভূমির উপরিতল থেকে টাওয়ারের ওপর থাকা গম্ভুজ আকৃতির ওয়াচ পয়েন্ট পর্যন্ত চারদিকে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর রয়েছে ৫ মিলিমিটার ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস। চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ১৩ জনের ধারণক্ষমতার অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ার চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে উচ্চক্ষমতার বাইনোকুলার, যার সাহায্যে বঙ্গোপসাগরের একটি অংশসহ চারপাশের ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দেখা যাবে। এছাড়া বিশ্রামাগার এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসহ রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা। টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় আরও ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম সুইমিংপুল, বিশ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার ফ্যাশন স্কয়ার ও অত্যাধুনিক শিশুপার্ক।

টাওয়ার উদ্বোধনের পর রাষ্ট্রপতি চরফ্যাশন টিবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। এমপি জ্যাকবের গড়া চর কুকরি-মুকরি পর্যটন কেন্দ্রেও যাবেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনের পাশাপাশি রাতে উপভোগ করবেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবেনও সেখানেই।

স্বাধীনতা জাদুঘর : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভোলা সফরকালে বুধবার উদ্বোধন করবেন সেখানে নবনির্মিত ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ধারাবাহিতা ও বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ভোলার উপশহর বাংলাবাজারে স্থাপিত হয়েছে এ জাদুঘর। এটি একদিকে যেমনি গবেষণাগার, অপরদিকে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা দেখতে ও জানতে পাবে নতুন প্রজন্ম। তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এর স্বপ্নদ্রষ্টা উন্নসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মহানায়ক বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকে অতিকাছ থেকে দেখেছেন। দেখেছেন এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতার ঘটনাপ্রবহ।

জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান বাংলাবাজারে বাণিজ্যমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমা খানম কমপ্লেক্সে ৩ বছর আগে এই জাদুঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাণিজ্যমন্ত্রী যুগান্তরকে জানান, এমন একটি জাদুঘর নির্মাণের স্বপ্ন তার দীর্ঘদিনের। বঙ্গবন্ধুকে অতি কাছ থেকে দেখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণই জাতিকে আন্দোলিত করেছিল, যা আজ গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সবটাই স্থান পেয়েছে এ জাদুঘরে। এখানে দেশ-বিদেশের ইতিহাসবিদরা গবেষণা করতে পারবেন। এটি নির্মাণে অনেকের সহযেগিতা পান বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন