উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত
বিচারক নিয়োগে আইন নেই
আইন করা দরকার, কাজ চলমান রয়েছে : আইনমন্ত্রী * আইনমন্ত্রী থাকাকালে নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া করেছিলাম : ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। যদিও সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের (গ) ধারায় স্পষ্ট আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। এছাড়া বিচারক নিয়োগে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও অদ্যাবধি সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১২ সালে প্রথম আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। তবে ১১ বছরেও আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এ পদে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে প্রশ্ন উঠছে, এরও সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের দুই বিভাগে কিছু বিচারক নিয়োগের চিন্তা করছে সরকার।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যোগ্যতর ব্যক্তিকে বাছাই করার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগে আইন করা জরুরি। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই তা উপেক্ষা করেছে। এদিকে বিচারক নিয়োগে আইন বা নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করার পর নিয়োগ দিতে হবে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, বিচারক নিয়োগে আইন করা দরকার। এর কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, চূড়ান্ত রূপ দিতে পারব।
২০১২ সালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল খসড়া নীতিমালায়। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের বিচারক নিয়োগের বিধান অনুসরণ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি, অভিজ্ঞ আইনবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করে খসড়াটি প্রণয়নও করা হয়েছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে। ৯৫ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়োগদান করবেন।’ ৯৫(২) অনুসারে, ‘কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছর অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে, বা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে, তিনি বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।’
অবসরজনিত কারণে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে বিচারক সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আটজন বিচারপতি ছিলেন। ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অবসরে যান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। আপিল বিভাগের আরেক জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান অবসরে যান ১৫ জুন। আর ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বর্তমানে আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। আগামী বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। এখন হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ৮৯ জন বিচারপতি আছেন। এই ৮৯ জনের মধ্যে আবার তিনজনকে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক সংকট রয়েছে। মামলাজট নিরসনে এ মুহূর্তে বিচারক নিয়োগ দেওয়া দরকার। সৎ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আমি আশাবাদী।
২০০৯ সালের ২ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জোট সরকারের সময়ে বাদ পড়া ১০ বিচারপতিকে স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। এতে বলা হয়, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ গ্রহণ সাংবিধানিক রেওয়াজ। এ রেওয়াজ সাংবিধানিক রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এটা আইনের শাসনের অংশ, বিচারক নিয়োগ ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ বা মতামত প্রাধান্য পাবে। তবে তাদের পেশাগত যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের মতামত নেওয়া হবে। এছাড়া বিচারক নিয়োগে একটি নীতিমালা করার জন্য উচ্চ আদালত থেকে বিভিন্ন সময় একাধিক মতামত আসে।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগ উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সাত দফা নির্দেশনা দেন। তৎকালীন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দেন। এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতিকেই উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তাকে প্রয়োজনে বিচারক নিয়োগের জন্য আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের দুজন করে জ্যেষ্ঠ বিচারকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতি যে মতামত দেবেন, তা অগ্রাহ্য করা যাবে না, যদি না সুপারিশকৃত ব্যক্তি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। ভারতের আইন কমিশনের ৮০তম প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী একজন বিচারকের পরিপক্বতা পেশাগত অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একটি বয়সসীমা ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে সুপ্রিমকোর্টের বিচারক মনোনয়নের ক্ষেত্রে বয়স সর্বনিম্ন ৪৫ বছর হওয়া উচিত।
এছাড়াও রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। রায়ে বলা হয়, বিচারকদের এমন বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একজন অধিক যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি আইনজীবী হিসাবে বিচারক হতে আগ্রহী হন।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিষয়টি বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাইকোর্ট যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক নিয়োগ নিয়ে ওই রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সাধারণ সভা হয়। এতে রায় অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগ করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়েগে আইন বা নীতিমালা করাটা জরুরি। এটা করলে ক্ষতি নেই বরং লাভ। তিনি বলেন, আমি আইনমন্ত্রী থাকার সময়ে বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া করেছিলাম। এরপর কী হলো জানা নেই। বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ দেন। এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দিলে বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকে না।
বিচারক নিয়োগে আইন নেই
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত
আইন করা দরকার, কাজ চলমান রয়েছে : আইনমন্ত্রী * আইনমন্ত্রী থাকাকালে নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া করেছিলাম : ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
আলমগীর হোসেন
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। যদিও সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের (গ) ধারায় স্পষ্ট আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। এছাড়া বিচারক নিয়োগে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও অদ্যাবধি সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১২ সালে প্রথম আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। তবে ১১ বছরেও আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এ পদে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে প্রশ্ন উঠছে, এরও সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের দুই বিভাগে কিছু বিচারক নিয়োগের চিন্তা করছে সরকার।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যোগ্যতর ব্যক্তিকে বাছাই করার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগে আইন করা জরুরি। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই তা উপেক্ষা করেছে। এদিকে বিচারক নিয়োগে আইন বা নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করার পর নিয়োগ দিতে হবে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, বিচারক নিয়োগে আইন করা দরকার। এর কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, চূড়ান্ত রূপ দিতে পারব।
২০১২ সালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল খসড়া নীতিমালায়। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের বিচারক নিয়োগের বিধান অনুসরণ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি, অভিজ্ঞ আইনবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করে খসড়াটি প্রণয়নও করা হয়েছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে। ৯৫ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়োগদান করবেন।’ ৯৫(২) অনুসারে, ‘কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছর অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে, বা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে, তিনি বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।’
অবসরজনিত কারণে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে বিচারক সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আটজন বিচারপতি ছিলেন। ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অবসরে যান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। আপিল বিভাগের আরেক জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান অবসরে যান ১৫ জুন। আর ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বর্তমানে আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। আগামী বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। এখন হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ৮৯ জন বিচারপতি আছেন। এই ৮৯ জনের মধ্যে আবার তিনজনকে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক সংকট রয়েছে। মামলাজট নিরসনে এ মুহূর্তে বিচারক নিয়োগ দেওয়া দরকার। সৎ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আমি আশাবাদী।
২০০৯ সালের ২ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জোট সরকারের সময়ে বাদ পড়া ১০ বিচারপতিকে স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। এতে বলা হয়, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ গ্রহণ সাংবিধানিক রেওয়াজ। এ রেওয়াজ সাংবিধানিক রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এটা আইনের শাসনের অংশ, বিচারক নিয়োগ ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ বা মতামত প্রাধান্য পাবে। তবে তাদের পেশাগত যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের মতামত নেওয়া হবে। এছাড়া বিচারক নিয়োগে একটি নীতিমালা করার জন্য উচ্চ আদালত থেকে বিভিন্ন সময় একাধিক মতামত আসে।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগ উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সাত দফা নির্দেশনা দেন। তৎকালীন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দেন। এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতিকেই উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তাকে প্রয়োজনে বিচারক নিয়োগের জন্য আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের দুজন করে জ্যেষ্ঠ বিচারকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতি যে মতামত দেবেন, তা অগ্রাহ্য করা যাবে না, যদি না সুপারিশকৃত ব্যক্তি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। ভারতের আইন কমিশনের ৮০তম প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী একজন বিচারকের পরিপক্বতা পেশাগত অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একটি বয়সসীমা ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে সুপ্রিমকোর্টের বিচারক মনোনয়নের ক্ষেত্রে বয়স সর্বনিম্ন ৪৫ বছর হওয়া উচিত।
এছাড়াও রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। রায়ে বলা হয়, বিচারকদের এমন বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একজন অধিক যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি আইনজীবী হিসাবে বিচারক হতে আগ্রহী হন।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিষয়টি বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাইকোর্ট যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক নিয়োগ নিয়ে ওই রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সাধারণ সভা হয়। এতে রায় অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগ করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়েগে আইন বা নীতিমালা করাটা জরুরি। এটা করলে ক্ষতি নেই বরং লাভ। তিনি বলেন, আমি আইনমন্ত্রী থাকার সময়ে বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া করেছিলাম। এরপর কী হলো জানা নেই। বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ দেন। এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দিলে বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023