বেকারত্ব কমাতে দরকার শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার
আনিসুর রহমান
১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব চুকাতে গেলে অনেক কিছুরই গলদ চোখে পড়বে। হয়তো বা যতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল ততটুকু হয়নি। তবে আশাহত হওয়াটাও ঠিক হবে না।
অতীতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা থেকে সেই কবেই আমরা বেরিয়ে এসেছি। তারপর বাংলাদেশ হেঁটে এসেছে অনেকটা পথ। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ এখন সমীহ জাগানিয়া দেশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জন কিংবা মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত। সম্প্রতি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এতসব উন্নয়ন আশা জাগায়। তবে ওই যে প্রথমে বলেছিলাম- এতসব উন্নয়নের মাঝেও কিছুটা গলদ চোখে পড়বে। দেশের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখনও টিকে আছে; তবে কিছুটা খেই হারিয়েছে বৈকি! সময়ের পরিক্রমায় দেশে আরও নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। হয়তো বা উচ্চশিক্ষাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হচ্ছে। উদ্দেশ্য এমনটা হয়ে থাকলে তা নির্দ্বিধায় মহৎ বলা চলে।
এবার আসল কথায় আসা যাক। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৫। স্বাধীনতা-উত্তর দেশে হু হু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে এবং এখনও এই ধারা চলমান। আমরা শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে যতটা না ভাবছি তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে দ্বিমত নেই; কারোরই দ্বিমত থাকা উচিত নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শুধু শিক্ষিতের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে উচ্চশিক্ষার হার। কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও।
আমরা যারা একটু-আধটু সংবাদপত্র পড়ি, তারা মোটামুটি অবগত আছি এ বিষয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ। অর্থাৎ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী চাকরিবঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। আমাদের শুধু বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নিঃসন্দেহে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সহজেই কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় ঢুকে পড়ার ভালো সুযোগ রয়েছে। নয়তো অচিরেই এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। উন্নয়নের পথে ধাবিত হওয়া অর্থনীতি খেই হারাবে। বেকার জনগোষ্ঠী হতাশায় নিমজ্জিত হবে। তাদের হাতেই সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। গবেষণা তাই-ই বলে; খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে এই বেকাররা বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়বে। মাদকাসক্তি, টাকার বিনিময়ে খুন-খারাবি কিংবা বিভিন্ন নীতিবিবর্জিত কাজ বেড়ে যাবে।
তাই এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। নয়তো বা অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকেই এ দায় নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাকে গুণগত মানে উন্নীত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বেকারদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকরির উপযোগী করতে হবে। তবেই দেশে বেকারত্বের বোঝা অনেকাংশে লাঘব হবে।
আনিসুর রহমান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বেকারত্ব কমাতে দরকার শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব চুকাতে গেলে অনেক কিছুরই গলদ চোখে পড়বে। হয়তো বা যতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল ততটুকু হয়নি। তবে আশাহত হওয়াটাও ঠিক হবে না।
অতীতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা থেকে সেই কবেই আমরা বেরিয়ে এসেছি। তারপর বাংলাদেশ হেঁটে এসেছে অনেকটা পথ। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ এখন সমীহ জাগানিয়া দেশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জন কিংবা মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত। সম্প্রতি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এতসব উন্নয়ন আশা জাগায়। তবে ওই যে প্রথমে বলেছিলাম- এতসব উন্নয়নের মাঝেও কিছুটা গলদ চোখে পড়বে। দেশের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখনও টিকে আছে; তবে কিছুটা খেই হারিয়েছে বৈকি! সময়ের পরিক্রমায় দেশে আরও নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। হয়তো বা উচ্চশিক্ষাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হচ্ছে। উদ্দেশ্য এমনটা হয়ে থাকলে তা নির্দ্বিধায় মহৎ বলা চলে।
এবার আসল কথায় আসা যাক। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৫। স্বাধীনতা-উত্তর দেশে হু হু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে এবং এখনও এই ধারা চলমান। আমরা শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে যতটা না ভাবছি তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে দ্বিমত নেই; কারোরই দ্বিমত থাকা উচিত নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শুধু শিক্ষিতের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে উচ্চশিক্ষার হার। কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও।
আমরা যারা একটু-আধটু সংবাদপত্র পড়ি, তারা মোটামুটি অবগত আছি এ বিষয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ। অর্থাৎ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী চাকরিবঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। আমাদের শুধু বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নিঃসন্দেহে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সহজেই কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় ঢুকে পড়ার ভালো সুযোগ রয়েছে। নয়তো অচিরেই এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। উন্নয়নের পথে ধাবিত হওয়া অর্থনীতি খেই হারাবে। বেকার জনগোষ্ঠী হতাশায় নিমজ্জিত হবে। তাদের হাতেই সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। গবেষণা তাই-ই বলে; খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে এই বেকাররা বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়বে। মাদকাসক্তি, টাকার বিনিময়ে খুন-খারাবি কিংবা বিভিন্ন নীতিবিবর্জিত কাজ বেড়ে যাবে।
তাই এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। নয়তো বা অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকেই এ দায় নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাকে গুণগত মানে উন্নীত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বেকারদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকরির উপযোগী করতে হবে। তবেই দেশে বেকারত্বের বোঝা অনেকাংশে লাঘব হবে।
আনিসুর রহমান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়