আসুন বাংলা ভাষাকে অবিকৃত রাখি
আমরা সবাই জানি, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মানুষ ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাস্তায় নামলে শহীদ হন সালাম, রফিক, সফিক, বরকত, জব্বার প্রমুখ জাতির সূর্যসন্তান। কিন্তু আমরা সেদিনও বাংলা ভাষায় কথা বলার সাংবিধানিক অধিকার পাইনি। তবে সেদিন থেকেই বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার দু’বছর পর ৭ মে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় তারও দু’বছর পর ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে। অর্থাৎ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে, বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করাতে আমাদের চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। জাতি হিসেবে আমরা এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছিলাম, ধৈর্য ধারণ করেছিলাম, জীবন দিয়েছিলাম শুধু ভাষার প্রতি আমাদের অগাধ সম্মান আর ভালোবাসা ছিল বলে।
এখন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় বিশ্বের প্রতিটি দেশে। এ দিনটিকে স্মরণীয় করেছিলাম আমরা বাঙালিরাই। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষাকে উপস্থাপন করেন। এজন্য আমরা গর্ব করি। কিন্তু আজ আমরা আমাদের ভাষার মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারছি না। আমাদের একটি সহজ, সরল ও শ্রুতিমধুর ভাষা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমরা একে জটিল ও শ্রুতিকটু করে ফেলছি। এ কাজটা হয়তো আমরা অসচেতনভাবেই করছি। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। বাংলা ভাষার সঙ্গে হিন্দি, ইংরেজি ও আরও নানা ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রতিনিয়ত একে বিকৃত করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, পৃথিবী থেকে ইতিমধ্যে কিছু ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আবার কিছু ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলা ভাষাও একদিন বিলুপ্ত না হলেও অন্তত বিকৃত যে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের অনেক টিভি চ্যানেলের উপস্থাপকরা যখন বাংলা ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার শব্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরাও এ ধরনের ভাষায় কথা বলেন, তখন বাকিদের কাছে কী বার্তা পৌঁছায়? ভাষাকে বিকৃত করা কি কোনো অপরাধ নয়? আমাদের দেশের এফএম রেডিওগুলো শুনলে মনে হয় সেখানে কথাবন্ধুরা বাংলা ভাষাকে ‘বাংরেজি’ (বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ) ভাষায় পরিণত করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমনটি ঘটছে। অবাক করার মতো হলেও সত্য, তরুণ বয়সী অনেকেই শুদ্ধ বাক্য ও বানানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে না।
আমরা বাংলা ভাষাকে বিকৃত করছি শুধু তাই নয়, আমাদের কারও কারও মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার প্রবণতাও বিদ্যমান। বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা কিংবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই ভাষা আমাদের, তাই একে অবিকৃতভাবে সংরক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের। এজন্য আমাদের শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে হবে এবং শুদ্ধ বানানে লিখতে হবে। বিভিন্ন স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ইংরেজিতে না করে বাংলায় করতে হবে। কথা বলার সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদেশি শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রকাশ্যে বাংলা ভাষা বিকৃত করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা সেটি সরকার কিংবা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে। এতে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে সবাই সচেতন হবে বলেই আমার ধারণা।
আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আসুন বাংলা ভাষাকে অবিকৃত রাখি
আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমরা সবাই জানি, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মানুষ ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাস্তায় নামলে শহীদ হন সালাম, রফিক, সফিক, বরকত, জব্বার প্রমুখ জাতির সূর্যসন্তান। কিন্তু আমরা সেদিনও বাংলা ভাষায় কথা বলার সাংবিধানিক অধিকার পাইনি। তবে সেদিন থেকেই বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার দু’বছর পর ৭ মে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় তারও দু’বছর পর ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে। অর্থাৎ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে, বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করাতে আমাদের চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। জাতি হিসেবে আমরা এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছিলাম, ধৈর্য ধারণ করেছিলাম, জীবন দিয়েছিলাম শুধু ভাষার প্রতি আমাদের অগাধ সম্মান আর ভালোবাসা ছিল বলে।
এখন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় বিশ্বের প্রতিটি দেশে। এ দিনটিকে স্মরণীয় করেছিলাম আমরা বাঙালিরাই। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষাকে উপস্থাপন করেন। এজন্য আমরা গর্ব করি। কিন্তু আজ আমরা আমাদের ভাষার মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারছি না। আমাদের একটি সহজ, সরল ও শ্রুতিমধুর ভাষা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমরা একে জটিল ও শ্রুতিকটু করে ফেলছি। এ কাজটা হয়তো আমরা অসচেতনভাবেই করছি। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। বাংলা ভাষার সঙ্গে হিন্দি, ইংরেজি ও আরও নানা ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রতিনিয়ত একে বিকৃত করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, পৃথিবী থেকে ইতিমধ্যে কিছু ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আবার কিছু ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলা ভাষাও একদিন বিলুপ্ত না হলেও অন্তত বিকৃত যে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের অনেক টিভি চ্যানেলের উপস্থাপকরা যখন বাংলা ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার শব্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরাও এ ধরনের ভাষায় কথা বলেন, তখন বাকিদের কাছে কী বার্তা পৌঁছায়? ভাষাকে বিকৃত করা কি কোনো অপরাধ নয়? আমাদের দেশের এফএম রেডিওগুলো শুনলে মনে হয় সেখানে কথাবন্ধুরা বাংলা ভাষাকে ‘বাংরেজি’ (বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ) ভাষায় পরিণত করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমনটি ঘটছে। অবাক করার মতো হলেও সত্য, তরুণ বয়সী অনেকেই শুদ্ধ বাক্য ও বানানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে না।
আমরা বাংলা ভাষাকে বিকৃত করছি শুধু তাই নয়, আমাদের কারও কারও মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার প্রবণতাও বিদ্যমান। বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা কিংবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই ভাষা আমাদের, তাই একে অবিকৃতভাবে সংরক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের। এজন্য আমাদের শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে হবে এবং শুদ্ধ বানানে লিখতে হবে। বিভিন্ন স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ইংরেজিতে না করে বাংলায় করতে হবে। কথা বলার সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদেশি শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রকাশ্যে বাংলা ভাষা বিকৃত করাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা সেটি সরকার কিংবা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে। এতে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে সবাই সচেতন হবে বলেই আমার ধারণা।
আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023