খেলাপিদের ওপর তদারকি
ঋণ আদায়ের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হোক
সম্পাদকীয়
২৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অঙ্কের ঋণখেলাপিদের বিশেষ তদারকির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে গত সোমবার একটি সার্কুলার জারি করে তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গঠন করতে হবে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল। এ সেল খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় পরিস্থিতি প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকের পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। এ প্রক্রিয়ায় বিশেষ তদারকি হলে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তাদের মতে, বিশেষ তদারকির ফলে একদিকে খেলাপিরা চাপে পড়বে, অন্যদিকে ব্যাংকাররাও ঋণ আদায়ে বাড়তি চাপের মধ্যে থাকবেন।
খেলাপি ঋণ আদায়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরেই। অর্থমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের পরও এ অনিশ্চয়তা কাটছে না। সম্প্রতি আদালতে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ও অকার্যকর ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা আদালতের নির্দেশের কারণে খেলাপির তালিকা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে, যদিও ব্যাংকের দৃষ্টিতে এ টাকা খেলাপি।
এর বাইরে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বস্তুত খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে বাড়বে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও।
কাজেই খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা অত্যন্ত জরুরি। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে।
তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তিনি কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ উদ্যোগটি যাতে ফলপ্রসূ হয় সেজন্য এর যথাযথ বাস্তবায়নে নজর দেয়া হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
খেলাপিদের ওপর তদারকি
ঋণ আদায়ের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হোক
খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অঙ্কের ঋণখেলাপিদের বিশেষ তদারকির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে গত সোমবার একটি সার্কুলার জারি করে তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গঠন করতে হবে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল। এ সেল খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় পরিস্থিতি প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকের পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। এ প্রক্রিয়ায় বিশেষ তদারকি হলে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তাদের মতে, বিশেষ তদারকির ফলে একদিকে খেলাপিরা চাপে পড়বে, অন্যদিকে ব্যাংকাররাও ঋণ আদায়ে বাড়তি চাপের মধ্যে থাকবেন।
খেলাপি ঋণ আদায়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরেই। অর্থমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের পরও এ অনিশ্চয়তা কাটছে না। সম্প্রতি আদালতে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ও অকার্যকর ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা আদালতের নির্দেশের কারণে খেলাপির তালিকা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে, যদিও ব্যাংকের দৃষ্টিতে এ টাকা খেলাপি।
এর বাইরে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বস্তুত খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে বাড়বে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও।
কাজেই খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা অত্যন্ত জরুরি। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে।
তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তিনি কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ উদ্যোগটি যাতে ফলপ্রসূ হয় সেজন্য এর যথাযথ বাস্তবায়নে নজর দেয়া হবে।