অশান্ত বান্দরবান
বাস্তবধর্মী শান্তি প্রক্রিয়া জরুরি
সম্পাদকীয়
২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পার্বত্য তিন জেলার অন্যতম বান্দরবান এখন আর আগের মতো নেই। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সামাজিক অপরাধ ও রক্তপাতের এক অশান্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে এই জেলা। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবদমান গ্রুপগুলো বান্দরবানে নিজেদের অস্তিত্ব ও অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিযোগিতায় নামার ফলেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলো জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মতো অপরাধে। অথচ এক সময় বান্দরবান এমন ছিল না।
পর্যটনসমৃদ্ধ এই জেলায় ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬ শতাংশ বাঙালি। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কারণে বান্দরবান ছিল সম্প্রীতির এলাকা। বর্তমানে সেখানে চলছে খুনোখুনির মতো চরম অপরাধ। আর সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে চাঁদা না দিয়ে সড়ক নির্মাণসহ কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
এক হিসাবে দেখা যায়, বান্দরবানে প্রতি বছর একশ’ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। বান্দরবানে রয়েছে বিপুল পরিমাণের বাঁশ, কাঠ ও পাথর। এসবের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও এখন বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের হাতে। এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় হচ্ছে হানাহানিও। বান্দরবানে আধিপত্য বিস্তারের দিক থেকে এগিয়ে আছে মারমা সম্প্রদায়। চাকমা গোষ্ঠী এই জনপদে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন বসতি স্থাপনসহ শুরু করেছে সশস্ত্র তৎপরতা। এ নিয়ে রয়েছে দুই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র বিরোধ আর এই বিরোধে ঝরছে রক্ত।
বান্দরবানের বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে ক্ষতি হচ্ছে পর্যটন শিল্পের। বৈচিত্র্যপূর্ণ এ জেলায় পর্যটকের সংখ্যা কমছে। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদন হলেও এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করছে। আমাদের কথা হল, বান্দরবানে কীভাবে অপরাধ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে কীভাবে সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তা নিয়েও ভাবতে হবে। তবে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস বান্দরবানের কাছে চাকমাদের ৪০টি পাড়া গড়ে বসতি স্থাপন করছে আর মারমাদের মগ লিবারেশন পার্টি চাকমাদের চ্যালেঞ্জ করছে। এ নিয়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা। এই উত্তেজনা প্রশমন করা জরুরি। বাস্তবধর্মী চিন্তার আলোকে বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অশান্ত বান্দরবান
বাস্তবধর্মী শান্তি প্রক্রিয়া জরুরি
পার্বত্য তিন জেলার অন্যতম বান্দরবান এখন আর আগের মতো নেই। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সামাজিক অপরাধ ও রক্তপাতের এক অশান্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে এই জেলা। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবদমান গ্রুপগুলো বান্দরবানে নিজেদের অস্তিত্ব ও অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিযোগিতায় নামার ফলেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলো জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মতো অপরাধে। অথচ এক সময় বান্দরবান এমন ছিল না।
পর্যটনসমৃদ্ধ এই জেলায় ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬ শতাংশ বাঙালি। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কারণে বান্দরবান ছিল সম্প্রীতির এলাকা। বর্তমানে সেখানে চলছে খুনোখুনির মতো চরম অপরাধ। আর সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে চাঁদা না দিয়ে সড়ক নির্মাণসহ কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
এক হিসাবে দেখা যায়, বান্দরবানে প্রতি বছর একশ’ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। বান্দরবানে রয়েছে বিপুল পরিমাণের বাঁশ, কাঠ ও পাথর। এসবের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও এখন বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের হাতে। এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় হচ্ছে হানাহানিও। বান্দরবানে আধিপত্য বিস্তারের দিক থেকে এগিয়ে আছে মারমা সম্প্রদায়। চাকমা গোষ্ঠী এই জনপদে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন বসতি স্থাপনসহ শুরু করেছে সশস্ত্র তৎপরতা। এ নিয়ে রয়েছে দুই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র বিরোধ আর এই বিরোধে ঝরছে রক্ত।
বান্দরবানের বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে ক্ষতি হচ্ছে পর্যটন শিল্পের। বৈচিত্র্যপূর্ণ এ জেলায় পর্যটকের সংখ্যা কমছে। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদন হলেও এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করছে। আমাদের কথা হল, বান্দরবানে কীভাবে অপরাধ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে কীভাবে সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তা নিয়েও ভাবতে হবে। তবে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস বান্দরবানের কাছে চাকমাদের ৪০টি পাড়া গড়ে বসতি স্থাপন করছে আর মারমাদের মগ লিবারেশন পার্টি চাকমাদের চ্যালেঞ্জ করছে। এ নিয়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা। এই উত্তেজনা প্রশমন করা জরুরি। বাস্তবধর্মী চিন্তার আলোকে বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।