অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা
সবাইকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসতে হবে
সম্পাদকীয়
০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
বলা হচ্ছে, ভিসিদের সমন্বয়ে যে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে, তারা এ গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ এবং ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি স্কোর দেবেন। এ স্কোর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে এবং এজন্য আলাদা কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের।
২০০৭ সালে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে ভিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া সরকারের আগের মেয়াদের শিক্ষামন্ত্রীও অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক থাকলেও সফল হতে পারেননি।
অভিযোগ রয়েছে, এর মূল কারণ ব্যক্তিস্বার্থ। উচ্চমূল্যে ফরম বিক্রিসহ ভর্তি পরীক্ষায় নানা রকম ডিউটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজের বিনিময়ে শিক্ষকরা মোটা অঙ্কের অর্থ রোজগার করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে অর্থ আয়ের এ পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় অনেকেই অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নন। অথচ প্রতি বছর অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
ইউজিসির পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কেবল পরীক্ষা বাবদ ছাত্রছাত্রীদের গড়ে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, যা অনভিপ্রেত।
দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়হীনতা ও পদ্ধতিগত জটিলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে কোচিং ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি বন্ধ করতে হলে পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি শতাধিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই পদ্ধতির আওতায় আনতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বস্তুত গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সময়ের দাবি। করোনা পরিস্থিতি এ দাবিকে আরও বাস্তব করে তুলেছে। আমরা আশা করব, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা
সবাইকে গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসতে হবে
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
বলা হচ্ছে, ভিসিদের সমন্বয়ে যে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে, তারা এ গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ এবং ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি স্কোর দেবেন। এ স্কোর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে এবং এজন্য আলাদা কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের।
২০০৭ সালে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে ভিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া সরকারের আগের মেয়াদের শিক্ষামন্ত্রীও অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক থাকলেও সফল হতে পারেননি।
অভিযোগ রয়েছে, এর মূল কারণ ব্যক্তিস্বার্থ। উচ্চমূল্যে ফরম বিক্রিসহ ভর্তি পরীক্ষায় নানা রকম ডিউটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজের বিনিময়ে শিক্ষকরা মোটা অঙ্কের অর্থ রোজগার করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে অর্থ আয়ের এ পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় অনেকেই অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নন। অথচ প্রতি বছর অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
ইউজিসির পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কেবল পরীক্ষা বাবদ ছাত্রছাত্রীদের গড়ে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, যা অনভিপ্রেত।
দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়হীনতা ও পদ্ধতিগত জটিলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে কোচিং ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি বন্ধ করতে হলে পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি শতাধিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই পদ্ধতির আওতায় আনতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বস্তুত গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সময়ের দাবি। করোনা পরিস্থিতি এ দাবিকে আরও বাস্তব করে তুলেছে। আমরা আশা করব, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে।