দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গা স্থানান্তর
স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য
সম্পাদকীয়
৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের মোট ১৮০৫ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দুই দফায় স্থানান্তরিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ৩৪৪৭। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়া দ্বিতীয় দলটিও প্রথম দলের মতোই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে।
স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের কাছে এটা হয়ে উঠেছে যেন রূপকথার জগৎ। ভাসানচরে বসবাসের জন্য যে আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে, তাতে সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে বলা হচ্ছে। তবে যে ধীর প্রক্রিয়ায় স্বল্পসংখ্যক করে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে, তাতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগবে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া দ্রুতলয়ে চলুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসস্থলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া তো শুরু হল, প্রশ্ন হচ্ছে তারা তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে কবে? রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানিয়েই বলতে হয়, পুনর্বাসন নয়, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে, কক্সবাজারে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর মানে এই নয় যে, তারা চিরকালই সেখানে থেকে যাবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। বস্তুত, মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে আপত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করেই ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে।
কথা হচ্ছে, মিয়ানমার কি সত্যি সত্যি তালিকাভুক্তদের ফেরত নেবে? মিয়ানমারের অতীত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রটির কোনো সদিচ্ছা নেই। নানা ধরনের টালবাহানা করে তারা মূল ইস্যু থেকে সরে গেছে ও যাচ্ছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই চাপ আরও বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ করার বিষয়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় দেশটির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের উচিত, একদিকে রোহিঙ্গাদের স্বচ্ছন্দ জীবন নিশ্চিত করা, অন্যদিকে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গা স্থানান্তর
স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য
দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের মোট ১৮০৫ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দুই দফায় স্থানান্তরিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ৩৪৪৭। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়া দ্বিতীয় দলটিও প্রথম দলের মতোই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে।
স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের কাছে এটা হয়ে উঠেছে যেন রূপকথার জগৎ। ভাসানচরে বসবাসের জন্য যে আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে, তাতে সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে বলা হচ্ছে। তবে যে ধীর প্রক্রিয়ায় স্বল্পসংখ্যক করে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে, তাতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগবে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া দ্রুতলয়ে চলুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসস্থলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া তো শুরু হল, প্রশ্ন হচ্ছে তারা তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে কবে? রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানিয়েই বলতে হয়, পুনর্বাসন নয়, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে, কক্সবাজারে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর মানে এই নয় যে, তারা চিরকালই সেখানে থেকে যাবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। বস্তুত, মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে আপত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করেই ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে।
কথা হচ্ছে, মিয়ানমার কি সত্যি সত্যি তালিকাভুক্তদের ফেরত নেবে? মিয়ানমারের অতীত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রটির কোনো সদিচ্ছা নেই। নানা ধরনের টালবাহানা করে তারা মূল ইস্যু থেকে সরে গেছে ও যাচ্ছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই চাপ আরও বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ করার বিষয়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় দেশটির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের উচিত, একদিকে রোহিঙ্গাদের স্বচ্ছন্দ জীবন নিশ্চিত করা, অন্যদিকে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।