জাল টিআইএনের ব্যবহার: সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া হতে পারে সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাল টিআইএন-এ পৌনে পাঁচ লাখেরও বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়হীনতাকে পুঁজি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এমন অপকর্ম করেছে।
এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। গত বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিআরটিএ থেকে এক হাজার ৮২১টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮৯১টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহার করা টিআইএন যাচাই করে দেখা যায়, ১২৬টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে জাল টিআইএন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে টনক নড়ে উভয় সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এরপর বিআরটিএ’র সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জাল টিআইএন দিয়ে অপকর্ম বন্ধে টিআইএন সার্ভারের সঙ্গে বিআরটিএ সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, বিআরটিএর সফটওয়্যারে ১২ লক্ষাধিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে টিআইএন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রায় আট লাখ গাড়ির টিআইএন সঠিক। বাকি পৌনে পাঁচ লাখেরও বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে
ব্যবহৃত টিআইএন সঠিক নয়। প্রশ্ন হল, এমন সাগর চুরির পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়তে এত দেরি হলো কেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে বিআরটিএ ও এনবিআর-এর এমন সমন্বয়হীনতায় যে কেউ বিস্ময় প্রকাশ করবেন। কী করে দেশের করজাল বৃদ্ধি করা যায়, দেশের করযোগ্য আয়ের সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কী করে করের আওতায় আনা যায়, এ নিয়ে সরকার বছরের পর বছর নানা ধরনের পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এতবড় দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এটা কি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা নাকি কৌশলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, এ রহস্য উদঘাটন জরুরি। এটি স্পষ্ট যে, এত বড় দুর্নীতি দু-একজন সাধারণ কর্মচারীর পক্ষে সম্পন্ন করা অসম্ভব। বোঝাই যাচ্ছে এর সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ শক্তিশালী চক্র জড়িত।
জাল টিআইএন-এর ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। উল্লিখিত দুর্নীতির কারণে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। যাদের দায়িত্বহীনতায় এমন দুর্নীতি হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্রুত যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। দুর্নীতি সরকারের বড় বড় অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্নীতি রোধে সরকারকে যথার্থই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জাল টিআইএনের ব্যবহার: সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া হতে পারে সোমবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাল টিআইএন-এ পৌনে পাঁচ লাখেরও বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়হীনতাকে পুঁজি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এমন অপকর্ম করেছে।
এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। গত বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিআরটিএ থেকে এক হাজার ৮২১টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮৯১টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহার করা টিআইএন যাচাই করে দেখা যায়, ১২৬টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে জাল টিআইএন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে টনক নড়ে উভয় সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। এরপর বিআরটিএ’র সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জাল টিআইএন দিয়ে অপকর্ম বন্ধে টিআইএন সার্ভারের সঙ্গে বিআরটিএ সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, বিআরটিএর সফটওয়্যারে ১২ লক্ষাধিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে টিআইএন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রায় আট লাখ গাড়ির টিআইএন সঠিক। বাকি পৌনে পাঁচ লাখেরও বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে
ব্যবহৃত টিআইএন সঠিক নয়। প্রশ্ন হল, এমন সাগর চুরির পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়তে এত দেরি হলো কেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে বিআরটিএ ও এনবিআর-এর এমন সমন্বয়হীনতায় যে কেউ বিস্ময় প্রকাশ করবেন। কী করে দেশের করজাল বৃদ্ধি করা যায়, দেশের করযোগ্য আয়ের সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কী করে করের আওতায় আনা যায়, এ নিয়ে সরকার বছরের পর বছর নানা ধরনের পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এতবড় দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এটা কি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা নাকি কৌশলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, এ রহস্য উদঘাটন জরুরি। এটি স্পষ্ট যে, এত বড় দুর্নীতি দু-একজন সাধারণ কর্মচারীর পক্ষে সম্পন্ন করা অসম্ভব। বোঝাই যাচ্ছে এর সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ শক্তিশালী চক্র জড়িত।
জাল টিআইএন-এর ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। উল্লিখিত দুর্নীতির কারণে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। যাদের দায়িত্বহীনতায় এমন দুর্নীতি হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্রুত যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। দুর্নীতি সরকারের বড় বড় অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্নীতি রোধে সরকারকে যথার্থই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে।