রাজধানীর খাল পুনরুদ্ধার
সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে
সম্পাদকীয়
০৪ মার্চ ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর রাজধানীর খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়; তবে তা কতটা সফলতা পাবে-এ আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ সরকারের উদাসীনতায় প্রভাবশালীদের দ্বারা ইতোমধ্যে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ খাল।
এসব খালের উপর বহুতল ভবন ও সড়কসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে খালগুলো উদ্ধারে স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন।
উদ্বেগজনক হলো, দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশন খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পরিচ্ছন্নতা ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে দেখা যাচ্ছে, রুটিন উচ্ছেদ ও খাল পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনার কয়েকদিন পর আবারও খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, খালগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে। রাজধানীর খাল, ড্রেনেজ ও বক্স কালভার্ট ব্যবস্থার দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটির কাছে ন্যস্ত হওয়াটা এক ধাপ অগ্রগতি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাস্তবতা হলো, শহরের টেকসই পানি নিষ্কাশন নকশা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা দুই সিটি করপোরেশনের নেই।
এ প্রেক্ষাপটে শহরের ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্টের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হাতে থাকলেও এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় মূল সমস্যাগুলো সমাধানের প্রয়াস নিতে হবে। কারণ এসব কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিকতর কার্যকর সংস্থা।
রাজধানীর খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করতে বিশেষজ্ঞরা সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) রেকর্ড ধরে উদ্ধার কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি সংযোগ নিশ্চিত করে খালগুলোকে রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবেই পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের সুফল মিলবে।
রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধার ও সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার লক্ষ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ইতোমধ্যে ২৬টি খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দুই সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও ১৩টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এক সময় রাজধানীতে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আঁকাবাঁকা খাল, বিল ও ঝিল। বৃষ্টির পানি সেসব খাল, বিল ও ঝিলের মাধ্যমে নদীতে গিয়ে পড়ত। পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার হয়ে যেত।
এর ফলে পরিচ্ছন্ন থাকত শহর। তবে বিগত তিন দশকের ব্যবধানে রাজধানীর এসব খাল ও জলাভূমির অধিকাংশই দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরবাসী, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার অন্ত থাকে না।
খালগুলো পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাজধানীর খাল পুনরুদ্ধার
সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে
ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর রাজধানীর খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়; তবে তা কতটা সফলতা পাবে-এ আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ সরকারের উদাসীনতায় প্রভাবশালীদের দ্বারা ইতোমধ্যে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ খাল।
এসব খালের উপর বহুতল ভবন ও সড়কসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে খালগুলো উদ্ধারে স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন।
উদ্বেগজনক হলো, দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশন খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পরিচ্ছন্নতা ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে দেখা যাচ্ছে, রুটিন উচ্ছেদ ও খাল পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনার কয়েকদিন পর আবারও খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, খালগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে। রাজধানীর খাল, ড্রেনেজ ও বক্স কালভার্ট ব্যবস্থার দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটির কাছে ন্যস্ত হওয়াটা এক ধাপ অগ্রগতি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাস্তবতা হলো, শহরের টেকসই পানি নিষ্কাশন নকশা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা দুই সিটি করপোরেশনের নেই।
এ প্রেক্ষাপটে শহরের ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্টের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হাতে থাকলেও এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় মূল সমস্যাগুলো সমাধানের প্রয়াস নিতে হবে। কারণ এসব কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিকতর কার্যকর সংস্থা।
রাজধানীর খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করতে বিশেষজ্ঞরা সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) রেকর্ড ধরে উদ্ধার কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি সংযোগ নিশ্চিত করে খালগুলোকে রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবেই পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের সুফল মিলবে।
রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধার ও সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার লক্ষ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ইতোমধ্যে ২৬টি খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দুই সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও ১৩টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এক সময় রাজধানীতে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আঁকাবাঁকা খাল, বিল ও ঝিল। বৃষ্টির পানি সেসব খাল, বিল ও ঝিলের মাধ্যমে নদীতে গিয়ে পড়ত। পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার হয়ে যেত।
এর ফলে পরিচ্ছন্ন থাকত শহর। তবে বিগত তিন দশকের ব্যবধানে রাজধানীর এসব খাল ও জলাভূমির অধিকাংশই দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরবাসী, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার অন্ত থাকে না।
খালগুলো পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।