পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আইন
শতভাগ ফলপ্রসূ করার পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১’ চূড়ান্ত করার সংবাদ ইতিবাচক। এ আইনে অর্থ পরিশোধ ও নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ঋণখেলাপিরা থাকতে পারবেন না বলে যে বিধান রাখা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইনের বিধানগুলো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা, পুঁজিবাজারসহ ৪৬ ধরনের আর্থিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিপালন করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিচালনা, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর (ইএফটি)। এছাড়া আইনগতভাবে স্বীকৃত মুদ্রায় পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেনে অ্যাপস ই-ওয়ালেট, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা, চেক ও চেকের ইলেকট্রনিক উপস্থাপন, নগদ অর্থ ও নিকাশ ঘর পরিচালনা, পরিশোধ সেবার ব্যবসা, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেমস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
অর্থ পরিশোধ ও নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপের উদ্যোগটি ভালো-এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঋণখেলাপিরা অনেক ক্ষেত্রে এতটাই প্রভাবশালী থাকে, আইনকে পাশ কাটিয়ে উদ্দেশ্য চরিতার্থে তাদের তেমন বেগ পেতে হয় না। বস্তুত যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে ঋণখেলাপিদের অবস্থান নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে আইনও রয়েছে। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে, প্রভাবশালী ঋণখেলাপিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের বোর্ডে ঢুকে পড়েছেন। এ বাস্তবতা সামনে রেখে পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১ শতভাগ ফলপ্রসূ করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে নতুন এ আইন ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এর রূপ পরিগ্রহ করবে, যা মোটেই কাম্য নয়।
ঋণখেলাপিদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে আইনি পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। তবে একইসঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নে পুরোপুরি স্বাধীনতা থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত দশ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। সরকার অবশ্য মুজিববর্ষে খেলাপি ঋণমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ধারাবাহিকতায় ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আইন
শতভাগ ফলপ্রসূ করার পদক্ষেপ নিন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১’ চূড়ান্ত করার সংবাদ ইতিবাচক। এ আইনে অর্থ পরিশোধ ও নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ঋণখেলাপিরা থাকতে পারবেন না বলে যে বিধান রাখা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইনের বিধানগুলো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা, পুঁজিবাজারসহ ৪৬ ধরনের আর্থিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিপালন করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিচালনা, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর (ইএফটি)। এছাড়া আইনগতভাবে স্বীকৃত মুদ্রায় পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেনে অ্যাপস ই-ওয়ালেট, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা, চেক ও চেকের ইলেকট্রনিক উপস্থাপন, নগদ অর্থ ও নিকাশ ঘর পরিচালনা, পরিশোধ সেবার ব্যবসা, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেমস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
অর্থ পরিশোধ ও নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপের উদ্যোগটি ভালো-এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঋণখেলাপিরা অনেক ক্ষেত্রে এতটাই প্রভাবশালী থাকে, আইনকে পাশ কাটিয়ে উদ্দেশ্য চরিতার্থে তাদের তেমন বেগ পেতে হয় না। বস্তুত যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে ঋণখেলাপিদের অবস্থান নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে আইনও রয়েছে। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে, প্রভাবশালী ঋণখেলাপিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের বোর্ডে ঢুকে পড়েছেন। এ বাস্তবতা সামনে রেখে পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১ শতভাগ ফলপ্রসূ করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে নতুন এ আইন ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এর রূপ পরিগ্রহ করবে, যা মোটেই কাম্য নয়।
ঋণখেলাপিদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে আইনি পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। তবে একইসঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নে পুরোপুরি স্বাধীনতা থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত দশ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। সরকার অবশ্য মুজিববর্ষে খেলাপি ঋণমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ধারাবাহিকতায় ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।