ঢাবির সাবেক শিক্ষক খুন
সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তায় বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে
১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে। অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার তার নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রির হাতে খুন হয়েছেন। টাকা ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় রাজমিস্ত্রি আনারুল সাইদা গাফফারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুরে পানিশাইল এলাকায় ঢাবি শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দেখাশোনা করতেন ওই অধ্যাপক। এ কারণে প্রায় এক বছর ধরে দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার একটি ভবনে তিনি একাই ভাড়া থাকতেন। রাজমিস্ত্রি আনারুল ওই প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি অধ্যাপক সাইদা গাফফারের বাসার বাজার-সদায়সহ বিভিন্ন কাজ করে দিত। এতে ধারণা করা যায়, আনারুলকে অধ্যাপক সাইদা গাফফার বিশ্বাস করেছিলেন। রাজমিস্ত্রি আনারুল কেন অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে খুন করল সে রহস্য দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার।
উদ্বেগের বিষয় হলো, গৃহকর্মী বা নিরাপত্তাকর্মীর হাতে সিনিয়র সিটিজেন খুন হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, বিশেষ করে যারা একাকী বসবাস করেন। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তা সংকটও বাড়ছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, সন্তান বা পরিবারের জুনিয়র সদস্যরা কর্মজীবনে প্রবেশের পর তাদের ব্যস্ততা ও অন্যান্য কারণে সিনিয়র সিটিজেনরা একা হয়ে পড়ছেন। এ বাস্তবতায় সিনিয়র সিটিজেনরা যাতে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পেশাগত জীবনে প্রত্যেক মানুষ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই অবসর জীবনে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। যেহেতু ইতোমধ্যে গৃহকর্মী বা নিরাপত্তা কর্মীর হাতে অনেক সিনিয়র সিটিজেন খুন হয়েছেন, সেহেতু সিনিয়র সিটিজেনদের যাতে নিজস্ব গৃহকর্মী বা নিরাপত্তা কর্মীর ওপর বেশি নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সিনিয়র সিটিজেনদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের পাড়া-মহল্লা, এমনকি প্রতিটি বাড়িকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হলে মানুষের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ অনেকটাই দূর হবে। যেহেতু দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, সেহেতু এ কাজে কোনোরকম জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। এ জন্য আলাদা একটি ইউনিটও থাকা দরকার। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা না থাকলে তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অব্যাহতভাবে দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজন, সুশীল সমাজ-প্রতিটি সেক্টর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না, বরং কখনো কখনো হত্যাকাণ্ডসহ এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা দেখে দেশবাসী বিস্মিত হচ্ছেন। দেশে কোনো ব্যক্তিই যাতে অপরাধ করে পার না পায়, এটা নিশ্চিত করা দরকার।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঢাবির সাবেক শিক্ষক খুন
সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তায় বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে
দেশে খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে। অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার তার নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রির হাতে খুন হয়েছেন। টাকা ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় রাজমিস্ত্রি আনারুল সাইদা গাফফারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুরে পানিশাইল এলাকায় ঢাবি শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দেখাশোনা করতেন ওই অধ্যাপক। এ কারণে প্রায় এক বছর ধরে দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার একটি ভবনে তিনি একাই ভাড়া থাকতেন। রাজমিস্ত্রি আনারুল ওই প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি অধ্যাপক সাইদা গাফফারের বাসার বাজার-সদায়সহ বিভিন্ন কাজ করে দিত। এতে ধারণা করা যায়, আনারুলকে অধ্যাপক সাইদা গাফফার বিশ্বাস করেছিলেন। রাজমিস্ত্রি আনারুল কেন অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে খুন করল সে রহস্য দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার।
উদ্বেগের বিষয় হলো, গৃহকর্মী বা নিরাপত্তাকর্মীর হাতে সিনিয়র সিটিজেন খুন হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, বিশেষ করে যারা একাকী বসবাস করেন। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তা সংকটও বাড়ছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, সন্তান বা পরিবারের জুনিয়র সদস্যরা কর্মজীবনে প্রবেশের পর তাদের ব্যস্ততা ও অন্যান্য কারণে সিনিয়র সিটিজেনরা একা হয়ে পড়ছেন। এ বাস্তবতায় সিনিয়র সিটিজেনরা যাতে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পেশাগত জীবনে প্রত্যেক মানুষ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই অবসর জীবনে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। যেহেতু ইতোমধ্যে গৃহকর্মী বা নিরাপত্তা কর্মীর হাতে অনেক সিনিয়র সিটিজেন খুন হয়েছেন, সেহেতু সিনিয়র সিটিজেনদের যাতে নিজস্ব গৃহকর্মী বা নিরাপত্তা কর্মীর ওপর বেশি নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সিনিয়র সিটিজেনদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের পাড়া-মহল্লা, এমনকি প্রতিটি বাড়িকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হলে মানুষের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ অনেকটাই দূর হবে। যেহেতু দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, সেহেতু এ কাজে কোনোরকম জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। এ জন্য আলাদা একটি ইউনিটও থাকা দরকার। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা না থাকলে তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অব্যাহতভাবে দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজন, সুশীল সমাজ-প্রতিটি সেক্টর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না, বরং কখনো কখনো হত্যাকাণ্ডসহ এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা দেখে দেশবাসী বিস্মিত হচ্ছেন। দেশে কোনো ব্যক্তিই যাতে অপরাধ করে পার না পায়, এটা নিশ্চিত করা দরকার।