ফের লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা
কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে?
সম্পাদকীয়
২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও এ সমস্যার সমাধান না হওয়া দুঃখজনক। সোমবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিন মাছ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
নিউমার্কেটের আড়তে মাছ বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলীনগর হাজির মোড় এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি ভটভটি রেললাইনের ওপর উঠে পড়ে। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি ট্রেন ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ভটভটির ওপর থাকা ওই তিন ব্যক্তি ছিটকে রেললাইনের ওপর পড়েন এবং ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনজনই ঘটনাস্থলে মারা যান। ট্রেনটি ভটভটিকে ধাক্কা দিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, এ ধরনের আর কত দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?
দেশে শত শত লেভেল ক্রসিং রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা লক্ষ করেছি, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়নে নেওয়া হয় না কার্যকর পদক্ষেপ। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাতে বাস্তবায়ন করা না হয় সেজন্যও চলে মোটা অঙ্কের লেনদেন। কাজেই যোগ্য বক্তিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।
বস্তুত রেলের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রেল খাতে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হলেও রেলের সামগ্রিক উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। চাহিদা ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও জরাজীর্ণ ও সংস্কারহীন রেলপথ এবং লেভেল ক্রসিং নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তেমন কিছু ভাবছেন না। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষের জীবন বিপন্ন থেকে যাবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জরাজীর্ণ রেলপথসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য সমস্যার সমাধান না হলে যাত্রীসেবার মান বাড়বে কী করে? বর্তমানে রেল খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি লেভেল ক্রসিংয়ের ঝুঁকি নিরসন এবং যাত্রীসেবার মান উন্নয়নেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রেলে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মানুষের প্রত্যাশা যে পূরণ হবে না, তা বলাই বাহুল্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ফের লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা
কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে?
সারা দেশে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও এ সমস্যার সমাধান না হওয়া দুঃখজনক। সোমবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিন মাছ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
নিউমার্কেটের আড়তে মাছ বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলীনগর হাজির মোড় এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি ভটভটি রেললাইনের ওপর উঠে পড়ে। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি ট্রেন ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ভটভটির ওপর থাকা ওই তিন ব্যক্তি ছিটকে রেললাইনের ওপর পড়েন এবং ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনজনই ঘটনাস্থলে মারা যান। ট্রেনটি ভটভটিকে ধাক্কা দিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, এ ধরনের আর কত দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?
দেশে শত শত লেভেল ক্রসিং রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা লক্ষ করেছি, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়নে নেওয়া হয় না কার্যকর পদক্ষেপ। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাতে বাস্তবায়ন করা না হয় সেজন্যও চলে মোটা অঙ্কের লেনদেন। কাজেই যোগ্য বক্তিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।
বস্তুত রেলের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রেল খাতে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হলেও রেলের সামগ্রিক উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। চাহিদা ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও জরাজীর্ণ ও সংস্কারহীন রেলপথ এবং লেভেল ক্রসিং নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তেমন কিছু ভাবছেন না। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি মানুষের জীবন বিপন্ন থেকে যাবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জরাজীর্ণ রেলপথসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য সমস্যার সমাধান না হলে যাত্রীসেবার মান বাড়বে কী করে? বর্তমানে রেল খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি লেভেল ক্রসিংয়ের ঝুঁকি নিরসন এবং যাত্রীসেবার মান উন্নয়নেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রেলে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মানুষের প্রত্যাশা যে পূরণ হবে না, তা বলাই বাহুল্য।