বিমানে লিজ বাণিজ্য, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
১৩ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিবছর হজ মৌসুমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে উড়োজাহাজ লিজ সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠে। লিজ বাণিজ্যের জন্য হজের আগে অপতৎপরতা চালিয়ে নানাভাবে উড়োজাহাজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়।
শেষ মুহূর্তে দরপত্র ছাড়াই পছন্দের কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হয়। এ কাজে তৎপর বিমানের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, এবারও হজের জন্য দুটি উড়োজাহাজ লিজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এর পেছনেও কাজ করছে দুর্নীতি। এ বছর হজযাত্রী কম। বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়েই হজযাত্রী বহন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে লিজের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য নিজস্ব কয়েকটি উড়োজাহাজ নষ্ট করে রাখা হয়েছে।
নতুন উড়োজাহাজগুলোর ব্লক আওয়ার কম দেখিয়ে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। গত ১২ এপ্রিল বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে দুটি বিমানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও লিজ বাণিজ্য কাজ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিমানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। আমাদের মনে আছে, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। বছর তিনেক আগে এ রাষ্ট্রীয় সংস্থার সব শাখায় বিদ্যমান সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন এর সুফলও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বিমানের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে আবারও এদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
দুর্নীতি দমন কমিশন ইতঃপূর্বে বিমানের আট খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-উড়োজাহাজ কেনা ও লিজ নেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ, ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিস, কার্গো আমদানি-রফতানি, টিকিট বিক্রি, ক্যাটারিং ইত্যাদি। অনুসন্ধানে এসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতির কারণে বিমানকে প্রতিবছর শুধু বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসানই দিতে হয় না, সংস্থাটির সেবার মানও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াসও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চায় না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই।
এদিক থেকে বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি এ সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিমানের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।
আমরা মনে করি, বিমানকে সত্যিকার অর্থে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করতে হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যারা এতদিন জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থাটিকে অবৈধ আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহার করেছে, তাদের শুধু অপসারণ নয়, শাস্তি হওয়াও জরুরি। কমিশন বাণিজ্যের লক্ষ্য অর্জনে বিমানের লিজ সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়কে নানা ধরনের খোঁড়া যুক্তি দিয়ে থাকে।
আশার কথা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এসব বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, এর আগেও লিজ নিয়ে বিমান মন্ত্রণালয়কে বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে শত শত কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে সরকারকে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রয়োজন ছাড়া কোনো লিজ নয়। এবারের হজযাত্রার ক্ষেত্রে তার এ দৃঢ় অবস্থান বজায় থাকবে, এটাই কাম্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিমানে লিজ বাণিজ্য, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন
প্রতিবছর হজ মৌসুমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে উড়োজাহাজ লিজ সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠে। লিজ বাণিজ্যের জন্য হজের আগে অপতৎপরতা চালিয়ে নানাভাবে উড়োজাহাজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়।
শেষ মুহূর্তে দরপত্র ছাড়াই পছন্দের কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হয়। এ কাজে তৎপর বিমানের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, এবারও হজের জন্য দুটি উড়োজাহাজ লিজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এর পেছনেও কাজ করছে দুর্নীতি। এ বছর হজযাত্রী কম। বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়েই হজযাত্রী বহন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে লিজের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য নিজস্ব কয়েকটি উড়োজাহাজ নষ্ট করে রাখা হয়েছে।
নতুন উড়োজাহাজগুলোর ব্লক আওয়ার কম দেখিয়ে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। গত ১২ এপ্রিল বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে দুটি বিমানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও লিজ বাণিজ্য কাজ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিমানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। আমাদের মনে আছে, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। বছর তিনেক আগে এ রাষ্ট্রীয় সংস্থার সব শাখায় বিদ্যমান সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন এর সুফলও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বিমানের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে আবারও এদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
দুর্নীতি দমন কমিশন ইতঃপূর্বে বিমানের আট খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-উড়োজাহাজ কেনা ও লিজ নেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ, ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিস, কার্গো আমদানি-রফতানি, টিকিট বিক্রি, ক্যাটারিং ইত্যাদি। অনুসন্ধানে এসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতির কারণে বিমানকে প্রতিবছর শুধু বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসানই দিতে হয় না, সংস্থাটির সেবার মানও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াসও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চায় না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই।
এদিক থেকে বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি এ সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিমানের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।
আমরা মনে করি, বিমানকে সত্যিকার অর্থে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করতে হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যারা এতদিন জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থাটিকে অবৈধ আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহার করেছে, তাদের শুধু অপসারণ নয়, শাস্তি হওয়াও জরুরি। কমিশন বাণিজ্যের লক্ষ্য অর্জনে বিমানের লিজ সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়কে নানা ধরনের খোঁড়া যুক্তি দিয়ে থাকে।
আশার কথা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এসব বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, এর আগেও লিজ নিয়ে বিমান মন্ত্রণালয়কে বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে শত শত কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে সরকারকে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রয়োজন ছাড়া কোনো লিজ নয়। এবারের হজযাত্রার ক্ষেত্রে তার এ দৃঢ় অবস্থান বজায় থাকবে, এটাই কাম্য।