চলছেই প্রশ্নপত্র ফাঁস
অবশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
সংস্থাটি যদিও বলেছে, ‘অনিবার্য কারণে’ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা বাতিল হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে। মাউশির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে, যদিও পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশি অনুসন্ধানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাটের গুরু হিসাবে মাউশিতে কর্মরত ৩১তম ব্যাচের এক শিক্ষা কর্মকর্তার নাম প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে। তার নাম চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন।
পুলিশের কাছে দেওয়া গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলামের জবানিতে তার নাম উঠে আসে। মিল্টনের বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা চলছে; বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে ইতোমধ্যেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ সূত্র বলছে, মাউশিসহ সারা দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন মিল্টন। এ সিন্ডিকেটে মাউশি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রয়েছেন বাইরের অনেকে।
আমরা অবাক হয়ে যাই, বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন! কিছুদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে বুয়েটের এক শিক্ষকও জড়িত বলে খবর বেরিয়েছিল। সমাজে কি তাহলে এতটাই পচন ধরেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন? বস্তুত, ভর্তি অথবা নিয়োগ পরীক্ষা-প্রশ্নপত্র ফাঁস এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে কীভাবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন।
ওদিকে স্পাই কিটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর পাঠানোর এক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেন্দ্রের বাইরে থেকে পরীক্ষার্থীকে উত্তর বলে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির অভিনব কৌশল। পরীক্ষার্থীর কানের ভেতর ইয়ার পিস আর অটোমেটিক কল রিসিভ হয় এমন সিম লাগানো ডিভাইস থাকছে। এরপর পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রশ্ন জেনে উত্তর বলে দেওয়া হচ্ছে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অসুদপায় অবলম্বনের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মেধা যাচাইয়ের পথটি রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা হলের বাইরে থেকে উত্তর জানানো-এ দুই অপরাধ দমন করা না গেলে দেশে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়বেন। দেশ চলে যাবে অযোগ্যদের দখলে। বিষয়টি অতি উদ্বেগজনক। এ উদ্বেগের অবসান ঘটাতে হবে অবশ্যই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চলছেই প্রশ্নপত্র ফাঁস
এই ব্যাধির নিরাময় হবে কবে?
অবশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
সংস্থাটি যদিও বলেছে, ‘অনিবার্য কারণে’ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা বাতিল হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে। মাউশির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে, যদিও পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশি অনুসন্ধানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাটের গুরু হিসাবে মাউশিতে কর্মরত ৩১তম ব্যাচের এক শিক্ষা কর্মকর্তার নাম প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে। তার নাম চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন।
পুলিশের কাছে দেওয়া গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলামের জবানিতে তার নাম উঠে আসে। মিল্টনের বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা চলছে; বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে ইতোমধ্যেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ সূত্র বলছে, মাউশিসহ সারা দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন মিল্টন। এ সিন্ডিকেটে মাউশি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রয়েছেন বাইরের অনেকে।
আমরা অবাক হয়ে যাই, বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন! কিছুদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে বুয়েটের এক শিক্ষকও জড়িত বলে খবর বেরিয়েছিল। সমাজে কি তাহলে এতটাই পচন ধরেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন? বস্তুত, ভর্তি অথবা নিয়োগ পরীক্ষা-প্রশ্নপত্র ফাঁস এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে কীভাবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন।
ওদিকে স্পাই কিটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর পাঠানোর এক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেন্দ্রের বাইরে থেকে পরীক্ষার্থীকে উত্তর বলে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির অভিনব কৌশল। পরীক্ষার্থীর কানের ভেতর ইয়ার পিস আর অটোমেটিক কল রিসিভ হয় এমন সিম লাগানো ডিভাইস থাকছে। এরপর পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রশ্ন জেনে উত্তর বলে দেওয়া হচ্ছে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অসুদপায় অবলম্বনের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মেধা যাচাইয়ের পথটি রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা হলের বাইরে থেকে উত্তর জানানো-এ দুই অপরাধ দমন করা না গেলে দেশে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়বেন। দেশ চলে যাবে অযোগ্যদের দখলে। বিষয়টি অতি উদ্বেগজনক। এ উদ্বেগের অবসান ঘটাতে হবে অবশ্যই।