ঋণখেলাপি করার নীতিতে ছাড়, খেলাপির অর্থ আদায়ে কঠোরতা কাম্য
সম্পাদকীয়
২৪ জুন ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিদেশে পলাতক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে যখন কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক, তখনই জানা গেল নিয়মিত ঋণকে খেলাপি করার প্রচলিত নীতিমালায় বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক্ষেত্রে ঋণের কিস্তির আকার ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে কোনো গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না। বুধবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। বস্তুত এটি ঋণখেলাপিদের জন্য আরও একটি ছাড়, যার ফলে উৎসাহিত হবে ঋণখেলাপিরা।
বলা হচ্ছে, করোনার নেতিবাচক প্রভাব, বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে দেওয়া হয়েছে এ ছাড়। উল্লেখ্য, করোনার কারণে গত বছরও ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সে বছর যে অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করার পর কাউকে খেলাপি করা হয়নি। অথচ এরপরও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সুযোগ দিয়ে লাভ নেই। তারা ঋণ পরিশোধ করবেন না, উলটো একের পর এক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পার পেয়ে যাবেন। তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের কেস-টু-কেস সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা যেহেতু কেউ মানছে না, তাই এসব নির্দেশনা দিয়ে লাভ নেই। নির্দেশনা না দিয়ে বরং ভালো হয় ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। তার এসব কথা আমলে নেওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।
বস্তুত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংকের উদ্যোগটি একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। জানা গেছে, এ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন বড় খেলাপি কানাডায় সপরিবারে অবস্থান করছেন। বিদেশে পলাতক এই ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনে চিঠি দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
উল্লেখ্য, গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ আদায়ে অন্যান্য ব্যাংকেরও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই সবার আগে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঋণখেলাপি করার নীতিতে ছাড়, খেলাপির অর্থ আদায়ে কঠোরতা কাম্য
বিদেশে পলাতক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে যখন কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক, তখনই জানা গেল নিয়মিত ঋণকে খেলাপি করার প্রচলিত নীতিমালায় বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক্ষেত্রে ঋণের কিস্তির আকার ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে কোনো গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না। বুধবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। বস্তুত এটি ঋণখেলাপিদের জন্য আরও একটি ছাড়, যার ফলে উৎসাহিত হবে ঋণখেলাপিরা।
বলা হচ্ছে, করোনার নেতিবাচক প্রভাব, বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে দেওয়া হয়েছে এ ছাড়। উল্লেখ্য, করোনার কারণে গত বছরও ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সে বছর যে অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করার পর কাউকে খেলাপি করা হয়নি। অথচ এরপরও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সুযোগ দিয়ে লাভ নেই। তারা ঋণ পরিশোধ করবেন না, উলটো একের পর এক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পার পেয়ে যাবেন। তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের কেস-টু-কেস সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা যেহেতু কেউ মানছে না, তাই এসব নির্দেশনা দিয়ে লাভ নেই। নির্দেশনা না দিয়ে বরং ভালো হয় ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। তার এসব কথা আমলে নেওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।
বস্তুত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংকের উদ্যোগটি একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। জানা গেছে, এ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন বড় খেলাপি কানাডায় সপরিবারে অবস্থান করছেন। বিদেশে পলাতক এই ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনে চিঠি দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
উল্লেখ্য, গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ আদায়ে অন্যান্য ব্যাংকেরও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই সবার আগে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।