হলি আর্টিজানে হামলার ছয় বছর, জঙ্গিবাদ স্তিমিত হলেও আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই
সম্পাদকীয়
০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আজ হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তি হলো। ২০১৬ সালের এই দিনে গুলশানের এই বেকারিতে হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
নৃশংস এ হামলায় নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশি নিহত হন। এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে বনানী থানার ওই সময়ের ওসি এবং ডিএমপির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম নিহত হন। স্মরণ করা যেতে পারে, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। এ প্রেক্ষাপটেই জঙ্গিবাদ দমনে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে। এসব পদক্ষেপের ফলে জঙ্গিবাদ এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলা যায়।
সুখবর হচ্ছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নানা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় হলি আর্টিজান হামলার ছয় বছর পর গ্লোবাল টেরোরিজমের সূচকে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের ঝুঁকি বিবেচনায় এই সূচকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে ১৯ ধাপ। ২০১৬ সালে যখন হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছিল, তখন গ্লোবাল টেরোরিজম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২২তম। ওই হামলার পর দেশে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২১তম।
এরপর প্রতিবছর বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়। ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ৩১, ২০২০ সালে ৩৩ এবং ২০২১ সালে ৪০তম স্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের স্কোর ৪ দশমিক ৪১১, যেখানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর হচ্ছে ৯ দশমিক ১০৯। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঝুঁকি বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদে রয়েছে ভুটান। ভুটানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
গ্লোবাল টেরোরিজম সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করছে, এর মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে দেশে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি নেই। কাজেই জঙ্গি হামলার প্রশ্নে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, জঙ্গিবাদ এক ধরনের মতবাদ। কোনো মতবাদকেই সমূলে নিশ্চিহ্ন করা সহজ কাজ নয়।
অনুকূল পরিবেশ পেলে জঙ্গিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের কথা হলো, সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা-সতর্ক থাকতে হবে, যাতে জঙ্গিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। দ্বিতীয় কথা, যেসব কারণে জঙ্গিবাদের জন্ম হয়, সেসব কারণকেও সমাজ থেকে দূর করতে হবে। তৃতীয় কথা, জঙ্গিবাদকে সাময়িকভাবে মোকাবিলা করার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করাই শ্রেয়।
তাই সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রগতির ধারা চলমান রাখতে হবে। সমাজের কোনো পক্ষই যাতে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সদা-সর্বদা। জঙ্গিবাদীরা সাধারণত সমাজের তরুণ-যুব শ্রেণিকেই টার্গেট করে থাকে। তাই দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে প্রগতিশীল আধুনিক চিন্তায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।
জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারাভিযান চালাতে হবে। মোট কথা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে থাকতে হবে সর্বাত্মক প্রতিরোধ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
হলি আর্টিজানে হামলার ছয় বছর, জঙ্গিবাদ স্তিমিত হলেও আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই
আজ হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তি হলো। ২০১৬ সালের এই দিনে গুলশানের এই বেকারিতে হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
নৃশংস এ হামলায় নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশি নিহত হন। এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে বনানী থানার ওই সময়ের ওসি এবং ডিএমপির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম নিহত হন। স্মরণ করা যেতে পারে, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। এ প্রেক্ষাপটেই জঙ্গিবাদ দমনে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে। এসব পদক্ষেপের ফলে জঙ্গিবাদ এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলা যায়।
সুখবর হচ্ছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নানা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় হলি আর্টিজান হামলার ছয় বছর পর গ্লোবাল টেরোরিজমের সূচকে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের ঝুঁকি বিবেচনায় এই সূচকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে ১৯ ধাপ। ২০১৬ সালে যখন হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছিল, তখন গ্লোবাল টেরোরিজম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২২তম। ওই হামলার পর দেশে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২১তম।
এরপর প্রতিবছর বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়। ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ৩১, ২০২০ সালে ৩৩ এবং ২০২১ সালে ৪০তম স্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের স্কোর ৪ দশমিক ৪১১, যেখানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর হচ্ছে ৯ দশমিক ১০৯। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঝুঁকি বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদে রয়েছে ভুটান। ভুটানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
গ্লোবাল টেরোরিজম সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করছে, এর মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে দেশে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি নেই। কাজেই জঙ্গি হামলার প্রশ্নে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, জঙ্গিবাদ এক ধরনের মতবাদ। কোনো মতবাদকেই সমূলে নিশ্চিহ্ন করা সহজ কাজ নয়।
অনুকূল পরিবেশ পেলে জঙ্গিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের কথা হলো, সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা-সতর্ক থাকতে হবে, যাতে জঙ্গিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। দ্বিতীয় কথা, যেসব কারণে জঙ্গিবাদের জন্ম হয়, সেসব কারণকেও সমাজ থেকে দূর করতে হবে। তৃতীয় কথা, জঙ্গিবাদকে সাময়িকভাবে মোকাবিলা করার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করাই শ্রেয়।
তাই সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রগতির ধারা চলমান রাখতে হবে। সমাজের কোনো পক্ষই যাতে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সদা-সর্বদা। জঙ্গিবাদীরা সাধারণত সমাজের তরুণ-যুব শ্রেণিকেই টার্গেট করে থাকে। তাই দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে প্রগতিশীল আধুনিক চিন্তায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।
জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারাভিযান চালাতে হবে। মোট কথা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে থাকতে হবে সর্বাত্মক প্রতিরোধ।