আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ
অনিয়ম দূর করতে হবে
সম্পাদকীয়
০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুরবস্থায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের নাজুক দশায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসা উদ্বেগজনক।
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদেরও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও এসব প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসেই বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সব মিলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে। নানা অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আগে থেকেই ছিল নাজুক।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তা অনিয়ম, জালিয়াতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিনেও ফেরত আসছে না। সেসব ঋণই এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ দুরারোগ্য ক্যানসারের মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানের নাজুক দশা কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হলো, এসব কি দেখার কেউ ছিল না? আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য অতীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি বর্তমানে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে প্রত্যাশিত লাভ দূরের কথা, প্রয়োজনের সময় আসল অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও অনেক আমানতকারী শঙ্কিত। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা কমলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ‘ঋণ অনিয়মের’ যে বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তা থেকে মুক্ত নয়। ঋণ বিতরণে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ইত্যাদি অনিয়মের সংস্কৃতির প্রভাব দেশের ব্যাংক খাত থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপরও গিয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের সার্বিক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ
অনিয়ম দূর করতে হবে
নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুরবস্থায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের নাজুক দশায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসা উদ্বেগজনক।
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদেরও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও এসব প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসেই বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সব মিলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে। নানা অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আগে থেকেই ছিল নাজুক।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তা অনিয়ম, জালিয়াতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিনেও ফেরত আসছে না। সেসব ঋণই এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ দুরারোগ্য ক্যানসারের মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানের নাজুক দশা কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হলো, এসব কি দেখার কেউ ছিল না? আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য অতীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি বর্তমানে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে প্রত্যাশিত লাভ দূরের কথা, প্রয়োজনের সময় আসল অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও অনেক আমানতকারী শঙ্কিত। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা কমলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ‘ঋণ অনিয়মের’ যে বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তা থেকে মুক্ত নয়। ঋণ বিতরণে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ইত্যাদি অনিয়মের সংস্কৃতির প্রভাব দেশের ব্যাংক খাত থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপরও গিয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের সার্বিক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।