ভয়াবহ দূষণের কবলে ঢাকা
jugantor
ভয়াবহ দূষণের কবলে ঢাকা
পরিবেশ অধিদপ্তর কী করছে?

  সম্পাদকীয়  

২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বায়ুদূষণের দিক থেকে আমাদের রাজধানী ঢাকা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেও কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। গত শনিবার থেকে বুধবার টানা পাঁচ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় ছিল ঢাকার নাম।

এখন ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি। বিশ্বে বাতাসের দূষণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে, সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম।

সংস্থাটির গত বুধবার সকাল ১০টা ১৮ মিনিটের রিয়েল টাইম দূষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২৭৬ মাইক্রোগ্রাম দূষণ নিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে ঢাকা। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

দেশের বায়ুমান কতটা উদ্বেগজনক তা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে উঠে আসছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা মোটেই স্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আইনগত দুর্বলতার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। যতটা আইনি সক্ষমতা আছে, তা-ও কাজে লাগানো হচ্ছে না।

সুশাসনের প্রতিটি সূচকে ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে মৌলিক ভূমিকা রাখা দরকার, সেক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা কর্মচারী দুর্নীতি করার সাহস পায় কী করে? তবে কি এখানেও রয়েছে কোনো রহস্য?

যদি তাই থেকে থাকে, সেই রহস্য উদ্ঘাটনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আমাদের উন্নয়ন হবে, কিন্তু রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। যদি মানুষের অসুখ-বিসুখ অতিমাত্রায় বেড়ে যায়, তাহলে দেশে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে কি?

টিআইবির এক গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে ৫০ শতাংশেরও বেশি শিল্প-কারখানাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরকে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। দুর্নীতিতে জড়িত এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতে হবে অবিলম্বে।

দুর্নীতির কারণে রাজধানীতে অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া পানিদূষণ ও অন্যান্য দূষণের কারণে দেশের সার্বিক পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।

সব ধরনের দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে কোনো সংস্থার দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটছে কিনা, সেদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

দেশে দূষণের কারণে সৃষ্ট প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগের মাত্রা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে জীবন দিতে হবে কেন? একদিকে দেশে বিভিন্ন রকম দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে সারা দেশে কমছে জলাধার, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, দখল-দূষণে নদীগুলো পরিণত হচ্ছে মৃত খালে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার কাল্পনিক বিষয়ে পরিণত হবে।

ভয়াবহ দূষণের কবলে ঢাকা

পরিবেশ অধিদপ্তর কী করছে?
 সম্পাদকীয় 
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বায়ুদূষণের দিক থেকে আমাদের রাজধানী ঢাকা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেও কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। গত শনিবার থেকে বুধবার টানা পাঁচ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় ছিল ঢাকার নাম।

এখন ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি। বিশ্বে বাতাসের দূষণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে, সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম।

সংস্থাটির গত বুধবার সকাল ১০টা ১৮ মিনিটের রিয়েল টাইম দূষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২৭৬ মাইক্রোগ্রাম দূষণ নিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে ঢাকা। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

দেশের বায়ুমান কতটা উদ্বেগজনক তা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে উঠে আসছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা মোটেই স্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আইনগত দুর্বলতার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। যতটা আইনি সক্ষমতা আছে, তা-ও কাজে লাগানো হচ্ছে না।

সুশাসনের প্রতিটি সূচকে ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে মৌলিক ভূমিকা রাখা দরকার, সেক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা কর্মচারী দুর্নীতি করার সাহস পায় কী করে? তবে কি এখানেও রয়েছে কোনো রহস্য?

যদি তাই থেকে থাকে, সেই রহস্য উদ্ঘাটনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আমাদের উন্নয়ন হবে, কিন্তু রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। যদি মানুষের অসুখ-বিসুখ অতিমাত্রায় বেড়ে যায়, তাহলে দেশে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে কি?

টিআইবির এক গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে ৫০ শতাংশেরও বেশি শিল্প-কারখানাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরকে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। দুর্নীতিতে জড়িত এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতে হবে অবিলম্বে।

দুর্নীতির কারণে রাজধানীতে অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া পানিদূষণ ও অন্যান্য দূষণের কারণে দেশের সার্বিক পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।

সব ধরনের দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে কোনো সংস্থার দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটছে কিনা, সেদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

দেশে দূষণের কারণে সৃষ্ট প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগের মাত্রা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে জীবন দিতে হবে কেন? একদিকে দেশে বিভিন্ন রকম দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে সারা দেশে কমছে জলাধার, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, দখল-দূষণে নদীগুলো পরিণত হচ্ছে মৃত খালে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার কাল্পনিক বিষয়ে পরিণত হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন