রাজউকে জালিয়াতচক্র
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী জালিয়াতচক্র গড়ে ওঠার তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ চক্রের হোতাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে ২০০১ সালে যেসব প্লট বরাদ্দের দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল, তার মধ্যে তিন হাজার প্লট বরাদ্দ ছিল আটচল্লিশোর্ধ্ব প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। ২০০৩ সালে এসব প্লটের বরাদ্দপত্র হাতে পান আবেদনকারী প্রবাসীরা। কিন্তু হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ হয়ে অনেকে দেশে ফিরে তাদের প্লট আর বুঝে নেননি।
আবার অনেক প্রবাসী প্লট বুঝে পাওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যেসব প্লট-মালিক প্লট বুঝে নেননি এবং যারা মারা গেছেন, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের অন্তত অর্ধশত প্লট বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রের সদস্যরা। তারা ফাইল গায়েব করে, মালিকের ছবি পালটে বিক্রি করেছে এসব প্লট। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এই জালিয়াতরা যে রাজউককে আস্থা ও ভাবমূর্তির সংকটে ফেলছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জালিয়াতচক্রের মূলোৎপাটন করা দরকার কঠোরভাবে।
রাজউকের ফাইল গায়েবের ঘটনা নতুন নয়। অতীতে এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। একসময় রাজউকে নকশা বাণিজ্যের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। ঘুসের বিনিময়ে ভুল নকশাকে সঠিক বলে অনুমোদন দিয়ে অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণে সহায়তা করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী। সামান্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণেও নকশা নিয়ে দুর্নীতির কারণে ওভারব্রিজের গার্ডার ভেঙে মানুষের মৃত্যু হওয়ার নজির রয়েছে।
রাজধানীর উন্নয়নের দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত, তারা উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়নের যে রথ পরিচালনা করছেন অবৈধ অর্থের বিনিময়ে, তার অবসান ঘটানো জরুরি। বস্তুত রাজউকের চাকরি বেছেই নেন অনেকে অবৈধ আয়ের উৎস হিসাবে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং দুর্নীতি দমন কমিশন যৌথভাবে অনুসন্ধান চালালে রাজউকের আরও অনেক দুর্নীতি উদ্ঘাটিত হতে পারে। এটি যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ অবিলম্বে নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাজউকে জালিয়াতচক্র
মূলোৎপাটন জরুরি
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী জালিয়াতচক্র গড়ে ওঠার তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ চক্রের হোতাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে ২০০১ সালে যেসব প্লট বরাদ্দের দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল, তার মধ্যে তিন হাজার প্লট বরাদ্দ ছিল আটচল্লিশোর্ধ্ব প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। ২০০৩ সালে এসব প্লটের বরাদ্দপত্র হাতে পান আবেদনকারী প্রবাসীরা। কিন্তু হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ হয়ে অনেকে দেশে ফিরে তাদের প্লট আর বুঝে নেননি।
আবার অনেক প্রবাসী প্লট বুঝে পাওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যেসব প্লট-মালিক প্লট বুঝে নেননি এবং যারা মারা গেছেন, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের অন্তত অর্ধশত প্লট বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রের সদস্যরা। তারা ফাইল গায়েব করে, মালিকের ছবি পালটে বিক্রি করেছে এসব প্লট। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এই জালিয়াতরা যে রাজউককে আস্থা ও ভাবমূর্তির সংকটে ফেলছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জালিয়াতচক্রের মূলোৎপাটন করা দরকার কঠোরভাবে।
রাজউকের ফাইল গায়েবের ঘটনা নতুন নয়। অতীতে এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। একসময় রাজউকে নকশা বাণিজ্যের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। ঘুসের বিনিময়ে ভুল নকশাকে সঠিক বলে অনুমোদন দিয়ে অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণে সহায়তা করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী। সামান্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণেও নকশা নিয়ে দুর্নীতির কারণে ওভারব্রিজের গার্ডার ভেঙে মানুষের মৃত্যু হওয়ার নজির রয়েছে।
রাজধানীর উন্নয়নের দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত, তারা উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়নের যে রথ পরিচালনা করছেন অবৈধ অর্থের বিনিময়ে, তার অবসান ঘটানো জরুরি। বস্তুত রাজউকের চাকরি বেছেই নেন অনেকে অবৈধ আয়ের উৎস হিসাবে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং দুর্নীতি দমন কমিশন যৌথভাবে অনুসন্ধান চালালে রাজউকের আরও অনেক দুর্নীতি উদ্ঘাটিত হতে পারে। এটি যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ অবিলম্বে নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।