জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাব: জনস্বার্থ ও সেবাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে
গত ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তারা উন্নয়নসংক্রান্ত বেশকিছু ভালো প্রস্তাব দিলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্নীতি, কৃচ্ছ্রসাধন এবং জনসেবা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেননি। নিজেদের ক্ষমতার পরিধি ও সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাবই ছিল বেশি।
ডিসিদের প্রস্তাবের কয়েকটি হলো-কারাগারে বন্দিদের সাক্ষাতের সুবিধার্থে ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করা, দণ্ডবিধির ১৭০, ১৭১ ও ৪১৯ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফশিলভুক্ত করা, ২৪ ঘণ্টার ‘শিক্ষা চ্যানেলে’র ব্যবস্থা করা, জেলা পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা, যুবঋণের সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং) বাড়ানো, দেশের আট বিভাগে আটটি সমন্বিত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আবাসিক কার্যালয়ের জনবল সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
বস্তুত ঘুরেফিরে পুরোনো প্রস্তাবই এসেছে তাদের কাছ থেকে। ফলে ডিসি সম্মেলনে আগের মতো বৈচিত্র্য থাকছে না বলে মনে করছেন প্রশাসনসংশ্লিষ্টরা।
ডিসিরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই ডিসি সম্মেলন ও ডিসিদের প্রস্তাবগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখে সরকার। সম্মেলনের আগে ডিসিরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠান। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ডিসিদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়।
সেক্ষেত্রে ডিসিদের কাছ থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি প্রতিরোধে যথাযথ প্রস্তাব আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে মানুষ। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের দুর্নীতি ও হয়রানির জোরালো অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া ডিসিদের কাজ। অথচ সেবা দেওয়ার নামে মানুষকে পদে পদে হয়রানি করা হয়। তাই দুর্নীতি রোধে ডিসিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসা উচিত ছিল।
অর্থাৎ প্রস্তাবগুলো হওয়া উচিত ছিল জনস্বার্থ ও সেবাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। তবে ভালো প্রস্তাব আসাই যথেষ্ট নয়, সেগুলোর বাস্তবায়নও নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা অতীতে দেখা গেছে, ডিসি সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো। বস্তুত জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে উঠতে পারে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন। কিন্তু বর্তমানে এ সম্মেলন কার্যত একটি রুটিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার।
জেলা হলো স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় স্তর। তাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন মাঠ প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। জেলা প্রশাসকরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্বাধীন জেলার সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন। তাদের প্রস্তাবের বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে জেলার উন্নয়ন ও অগ্রগতি। জেলা প্রশাসক হলেন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জেলার প্রধান ব্যক্তি। তাদের কাছে জেলার মানুষের প্রত্যাশা স্বভাবতই বেশি।
এ কারণে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই জেলা প্রশাসকদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের। সমগ্র জেলাবাসীর সুযোগ-সুবিধার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এসবেরই প্রতিফলন ঘটবে।
জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাব: জনস্বার্থ ও সেবাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে
সম্পাদকীয়
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গত ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তারা উন্নয়নসংক্রান্ত বেশকিছু ভালো প্রস্তাব দিলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্নীতি, কৃচ্ছ্রসাধন এবং জনসেবা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেননি। নিজেদের ক্ষমতার পরিধি ও সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাবই ছিল বেশি।
ডিসিদের প্রস্তাবের কয়েকটি হলো-কারাগারে বন্দিদের সাক্ষাতের সুবিধার্থে ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করা, দণ্ডবিধির ১৭০, ১৭১ ও ৪১৯ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফশিলভুক্ত করা, ২৪ ঘণ্টার ‘শিক্ষা চ্যানেলে’র ব্যবস্থা করা, জেলা পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা, যুবঋণের সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং) বাড়ানো, দেশের আট বিভাগে আটটি সমন্বিত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আবাসিক কার্যালয়ের জনবল সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
বস্তুত ঘুরেফিরে পুরোনো প্রস্তাবই এসেছে তাদের কাছ থেকে। ফলে ডিসি সম্মেলনে আগের মতো বৈচিত্র্য থাকছে না বলে মনে করছেন প্রশাসনসংশ্লিষ্টরা।
ডিসিরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই ডিসি সম্মেলন ও ডিসিদের প্রস্তাবগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখে সরকার। সম্মেলনের আগে ডিসিরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠান। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ডিসিদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়।
সেক্ষেত্রে ডিসিদের কাছ থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি প্রতিরোধে যথাযথ প্রস্তাব আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে মানুষ। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের দুর্নীতি ও হয়রানির জোরালো অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া ডিসিদের কাজ। অথচ সেবা দেওয়ার নামে মানুষকে পদে পদে হয়রানি করা হয়। তাই দুর্নীতি রোধে ডিসিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসা উচিত ছিল।
অর্থাৎ প্রস্তাবগুলো হওয়া উচিত ছিল জনস্বার্থ ও সেবাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। তবে ভালো প্রস্তাব আসাই যথেষ্ট নয়, সেগুলোর বাস্তবায়নও নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা অতীতে দেখা গেছে, ডিসি সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো। বস্তুত জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে উঠতে পারে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন। কিন্তু বর্তমানে এ সম্মেলন কার্যত একটি রুটিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার।
জেলা হলো স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় স্তর। তাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন মাঠ প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। জেলা প্রশাসকরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্বাধীন জেলার সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন। তাদের প্রস্তাবের বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে জেলার উন্নয়ন ও অগ্রগতি। জেলা প্রশাসক হলেন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জেলার প্রধান ব্যক্তি। তাদের কাছে জেলার মানুষের প্রত্যাশা স্বভাবতই বেশি।
এ কারণে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই জেলা প্রশাসকদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের। সমগ্র জেলাবাসীর সুযোগ-সুবিধার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এসবেরই প্রতিফলন ঘটবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023