তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প
jugantor
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প
পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের সতর্ক বার্তা

  সম্পাদকীয়  

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

একটি ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, আবারও এর প্রমাণ পাওয়া গেল সোমবার ভোরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানা ভূকম্পনে। এ ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত ৮হাজারের কাছাকাছি। আহত অগণিত। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএস বলেছে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারে পোঁছাতে পারে।

হাজার হাজার বহুতল ভবন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অন্তত ৫ হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রিখটার স্কেলে এ ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৩০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত এলাকায় আঘাত হানে এ ভূমিকম্প। প্রথম কম্পনের ১১-১৫ মিনিটের ব্যবধানে নিকটবর্তী স্থানে দ্বিতীয়বার এবং এরপর আরও একবার আঘাত হানে ভূমিকম্প। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আশা করব, উদ্ধারকাজ ও পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে এসে দাঁড়াবে সারা বিশ্ব।

ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুনর্দিষ্টভাবে যার কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা ভূতাত্ত্বিক গঠন, অবস্থান প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে কেবল বলতে পারেন কোন কোন অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। আমাদের দেশেও দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তা যদি হয়, তাহলে ঢাকা মহানগরীতে ১ থেকে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

উল্লেখ করা যেতে পারে-ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ-এই তিন গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে সিলেট, যার উত্তরে ডাউকি ফল্ট। এই প্লেটগুলো সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় সেখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে আর জমে থাকা এসব শক্তি যে কোনো সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে।

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো পূর্বপ্রস্তুতি। ভূমিকম্প মোকাবিলায় যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও জাপানের মতো দেশেও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য অতি নগণ্য। কাজেই বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে আমাদের কী অবস্থা হবে, তা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলেই রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের অধিকাংশ বাড়িঘর-স্থাপনা ধসে পড়বে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

সবার আগে ভেঙে ফেলতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিল্ডিং কোড না মেনে যেভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তাতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও একটু বেশি সময় স্থায়ী হলে ঘটে যেতে পারে প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলা। কাজেই এ ব্যাপারে অবহেলার সুযোগ নেই। ভূমিকম্প মোকাবিলা করতে হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমিকম্পসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয়টি এখন থেমে আছে। এটি চলমান রাখতে হবে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে সঠিক গ্রাউন্ড মোশন নিয়ে বিল্ডিং ডিজাইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্পে বিল্ডিং ধসে পড়বে না। মোট কথা-প্রশিক্ষণ, মহড়া, ভূমিকম্পসহিষ্ণু স্থাপনা-এসবই হচ্ছে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির রক্ষাকবচ।

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের সতর্ক বার্তা
 সম্পাদকীয় 
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

একটি ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, আবারও এর প্রমাণ পাওয়া গেল সোমবার ভোরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানা ভূকম্পনে। এ ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত ৮ হাজারের কাছাকাছি। আহত অগণিত। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএস বলেছে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারে পোঁছাতে পারে।

হাজার হাজার বহুতল ভবন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অন্তত ৫ হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রিখটার স্কেলে এ ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৩০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত এলাকায় আঘাত হানে এ ভূমিকম্প। প্রথম কম্পনের ১১-১৫ মিনিটের ব্যবধানে নিকটবর্তী স্থানে দ্বিতীয়বার এবং এরপর আরও একবার আঘাত হানে ভূমিকম্প। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আশা করব, উদ্ধারকাজ ও পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে এসে দাঁড়াবে সারা বিশ্ব।

ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুনর্দিষ্টভাবে যার কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা ভূতাত্ত্বিক গঠন, অবস্থান প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে কেবল বলতে পারেন কোন কোন অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। আমাদের দেশেও দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তা যদি হয়, তাহলে ঢাকা মহানগরীতে ১ থেকে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

উল্লেখ করা যেতে পারে-ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ-এই তিন গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে সিলেট, যার উত্তরে ডাউকি ফল্ট। এই প্লেটগুলো সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় সেখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে আর জমে থাকা এসব শক্তি যে কোনো সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে।

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো পূর্বপ্রস্তুতি। ভূমিকম্প মোকাবিলায় যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও জাপানের মতো দেশেও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য অতি নগণ্য। কাজেই বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে আমাদের কী অবস্থা হবে, তা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলেই রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের অধিকাংশ বাড়িঘর-স্থাপনা ধসে পড়বে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

সবার আগে ভেঙে ফেলতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিল্ডিং কোড না মেনে যেভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তাতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও একটু বেশি সময় স্থায়ী হলে ঘটে যেতে পারে প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলা। কাজেই এ ব্যাপারে অবহেলার সুযোগ নেই। ভূমিকম্প মোকাবিলা করতে হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমিকম্পসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয়টি এখন থেমে আছে। এটি চলমান রাখতে হবে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে সঠিক গ্রাউন্ড মোশন নিয়ে বিল্ডিং ডিজাইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্পে বিল্ডিং ধসে পড়বে না। মোট কথা-প্রশিক্ষণ, মহড়া, ভূমিকম্পসহিষ্ণু স্থাপনা-এসবই হচ্ছে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির রক্ষাকবচ।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন