কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা

এমন প্রকল্প গ্রহণ করার দরকার কী?
 সম্পাদকীয় 
১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তা উদ্ঘাটন করা জরুরি। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের শতভাগ কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১৮৬টি উন্নয়ন প্রকল্প, যার মধ্যে কোনোটির আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। উদ্বেগজনক হলো, প্রতিবছর এডিপিতে একই ঘটনা ঘটছে; যেমন-২০২০-২১ অর্থবছরে কাজ বাকি রেখে সমাপ্ত ঘোষিত প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১২৪টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শতভাগ কাজ শেষ না করে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল ৯২টি প্রকল্প। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্তি ঘটেছিল ১৫৭ প্রকল্পের। পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট-কাজ শেষ না করেই প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

এভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও ‘হাফডান’ অবস্থায় শেষ করাটা অর্থ ও সময়ের অপচয় ঘটায়; উপরন্তু জনদুর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। কাজেই মাঝপথে প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার যৌক্তিক কারণ খুঁজে বের করে তা প্রতিকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত; বিশেষ করে দেখতে হবে, বিশেষ কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভগের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে চলছে কি না এবং কোনো প্রকল্পকে দুর্নীতির হতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না? বস্তুত প্রকল্প হাতে নিয়ে গাড়ি ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, আত্মীয়স্বজনকে চাকরি প্রদান প্রভৃতি সম্পন্ন করার পর বলে দেওয়া হলো-এ প্রকল্পের প্রয়োজন নেই; এমনটি ঘটতে দেওয়া একেবারেই অনুচিত। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

মাঝপথে প্রকল্প স্থগিত বা সমাপ্তি ঘোষণায় এডিপির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও সরকারের সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করে এডিপি অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রতিবছরই মাত্রাতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, যা একটি খারাপ প্রবণতা। বস্তুত প্রকল্প কতটা সুন্দর, তা দেখার আগে ভাবতে হবে, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে কি না এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না? অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই সময় নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ হন না। অবশ্য এর বাইরে নানা ধরনের কারসাজি থাকার অভিযোগও রয়েছে। এতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ‘লেজে গোবরে’ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। মূলত কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে গুরুত্ব আরোপ করা হলে এমন ‘দুঃখজনক বিচ্যুতি’র সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন