অর্থনীতিতে ঝুঁকির আশঙ্কা
জনস্বার্থ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে হবে
বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতি আগেই সংকটের মুখে পড়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে।
বাড়বে মূল্যস্ফীতির হার। বলা যায়, আইএমএফের ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে ভোক্তাদের ওপর চাপ আরও বাড়বে। বাড়বে সাধারণ মানুষের কষ্ট। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আগেও বহুবার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া এবং তা প্রাপ্তির বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে-যার কিছু কঠিন, আর কিছু সহজ।
কিছু শর্তের মাঝে উন্নয়ন সহযোগীদের স্বার্থ নিহিত থাকে, যা পূরণ করলে অনেক সময় তা ঋণগ্রহীতা রাষ্ট্রের জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। যথারীতি এর বিপরীতে জুড়ে দিয়েছে কিছু শর্ত। এসব শর্ত মানতে ভর্তুকি কমাতে ইতোমধ্যে তিন দফায় বিদ্যুৎ, দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে জনগণকে। ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে শিল্প খাত। ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে টাকার মান।
বস্তুত আইএমএফের সব শর্ত পূরণের আগে সরকারের উচিত ছিল জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা। এটি ঠিক, সরকারকে আইএমএফের শরণাপন্ন হতে হয়েছে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার পেতে। তবে আইএমএফ আসলেই অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া আইএমএফের এ ঋণ অর্থনীতিকে সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দেবে।
কিন্তু অর্থনীতিকে টেকসই ও সংকটমুক্ত করতে হলে এর সংস্কার করতে হবে নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের মতো করে। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
জানা গেছে, আইএমএফের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকও ঋণের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করছে। একই অবস্থা অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণে সংকট আদৌ কাটবে কি?
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, শুধু ঋণ নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না; রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে; অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে। আর এ সবকিছুর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
অর্থনীতিতে ঝুঁকির আশঙ্কা
জনস্বার্থ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়
১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতি আগেই সংকটের মুখে পড়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে।
বাড়বে মূল্যস্ফীতির হার। বলা যায়, আইএমএফের ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে ভোক্তাদের ওপর চাপ আরও বাড়বে। বাড়বে সাধারণ মানুষের কষ্ট। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আগেও বহুবার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া এবং তা প্রাপ্তির বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে-যার কিছু কঠিন, আর কিছু সহজ।
কিছু শর্তের মাঝে উন্নয়ন সহযোগীদের স্বার্থ নিহিত থাকে, যা পূরণ করলে অনেক সময় তা ঋণগ্রহীতা রাষ্ট্রের জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। যথারীতি এর বিপরীতে জুড়ে দিয়েছে কিছু শর্ত। এসব শর্ত মানতে ভর্তুকি কমাতে ইতোমধ্যে তিন দফায় বিদ্যুৎ, দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে জনগণকে। ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে শিল্প খাত। ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে টাকার মান।
বস্তুত আইএমএফের সব শর্ত পূরণের আগে সরকারের উচিত ছিল জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা। এটি ঠিক, সরকারকে আইএমএফের শরণাপন্ন হতে হয়েছে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার পেতে। তবে আইএমএফ আসলেই অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া আইএমএফের এ ঋণ অর্থনীতিকে সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দেবে।
কিন্তু অর্থনীতিকে টেকসই ও সংকটমুক্ত করতে হলে এর সংস্কার করতে হবে নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের মতো করে। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
জানা গেছে, আইএমএফের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকও ঋণের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করছে। একই অবস্থা অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণে সংকট আদৌ কাটবে কি?
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, শুধু ঋণ নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না; রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে; অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে। আর এ সবকিছুর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023